পানির অপর নাম যেমন জীবন তেমনি যে কোন রোগে আক্রান্ত হলে ওষুধই জীবনদায়ী পদার্থ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কিছু ওষুধের ভুল ব্যবহারে সেই প্রাণদায়ী ওষুধ প্রাণঘাতী ওষুধে পরিণত হয়। তেমনি একটি ওষুধ হলো এন্টিবায়োটিক। এন্টিবায়োটিক শরীরে কিছু ক্ষতিকর অণুজীবের বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু অযথা এবং ভুল প্রয়োগে মানুষের শরীরে এই ওষুধের আর কোন প্রতিক্রিয়া থাকে না। একে বলা হয় এন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স। বর্তমানে এর ভয়াবহতা এতই বেশি যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক এন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স হয়ে পড়েছে।
সাধারণত বাজারে এন্টিবায়োটিকের এতই সহজলভ্য যে মানুষ নিজের ইচ্ছানুযায়ী বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে এন্টিবায়োটিক কিনে খাচ্ছে। বাংলাদেশে ২০টিরও বেশি এন্টিবায়োটিক ৪০০টি বিভিন্ন নামে বিক্রি করে ওষুধ কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের আয়ের ৮০ ভাগ আয় করে এন্টিবায়োটিক বিক্রির মাধ্যমে। দেশে এন্টিবায়োটিক বিক্রির বাৎসরিক আয় মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর এই অধিক মুনাফার লোভে দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবাধে এন্টিবায়োটিক উৎপন্ন এবং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানিগুলোর অঢেল এন্টিবায়োটিক তৈরি এবং দেশে এর সহজলভ্যতার কারণে জ্বর বা সর্দি হলে মানুষ যথেচ্ছায় ফার্মেসিগুলো থেকে এন্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বেশিরভাগ মানুষ একদিন এন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স এ পরিণত হবে।
'জাতীয় ওষুধনীতি-২০১৬' ওষুধের মান এবং উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ (এনআরএ) গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মন্ত্রিসভায়। যার দ্রুত বাস্তবায়ন হলে দেশে কোম্পানিগুলোর অবাধে এন্টিবায়োটিক উৎপাদন এবং বাজারে এর সহজলভ্যতা কমে যাওয়া সম্ভব। এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধ না করলে জাতি একদিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবিহীন জাতিতে পরিণত হবে। পরিশেষে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে দেশে এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
রাকিবুল হাসান
শিক্ষার্থী, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
No comments:
Post a Comment