এমন সময় ছিল, যখন দিনশেষে মাত্র ৫০ পয়সা নিয়ে ঘরে ফিরতেন তিনি। আর এখন দিনে ২ লাখ টাকা উপার্জন করেন তিনি। মাঝখানে কেটে গেছে ৩১টি বছর। তিনি হলেন প্যাট্রিসিয়া নারায়ণন। একজন ভারতীয় নারী। পেশায় ব্যাবসায়ী। এখানেই তার চমক শেষ নয়, ৩১ বছর আগে তিনি মেরিনা বিচে ঘুরে ঘুরে খাবার বেচতেন, আজ তিনিই অনেক রেস্তোরাঁর মালিক।
মা-বাবার অমতে বিয়ে করলেও শেষ পর্যন্ত তা টেকেওনি। বিয়ে ভাঙ্গলেও ক্ষমা করতে পারেননি তাঁর বাবা-মা। তাই বাপের বাড়িতে ফেরার পথও বন্ধ। লড়াইয়ের শুরুটা আসলে সেখান থেকেই।
প্যাট্রিসিয়া একা নন, সঙ্গে দুই সন্তান। তিনটে পেটের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা। কী করবেন তিনি? পেটের দায়ে আচার বানিয়ে বিক্রি শুরু করলেন। সঙ্গে জ্যাম, স্কোয়াশও। সেখান থেকে একটা হাতে ঠেলা গাড়ি। সেই গাড়ি ঠেলেই রোজ চলে যেতেন মেরিনা বিচে। তাতে থাকত নানা খাবার-দাবার। চা-কফিও।
প্যাট্রিসিয়ার মনে পড়ে, প্রথম দিন এককাপ মাত্র কফি বিক্রি হয়েছিল। লাভ পঞ্চাশ পয়সা মাত্র। হতাশ না হয়ে পরদিন আবার, তার পরের দিন আবারও। সেই পঞ্চাশ পয়সাই আড়াই হাজারে যেতে সময় লাগল না।
সেখানেই আলাপ এক ব্যক্তির সঙ্গে। রোজ প্রাতভ্রমণে আসতেন তিনি। ওই ব্যক্তিই প্রথম অফার দেন একটি ক্যানটিন চালানোর। ‘বস্তি পরিষ্কার বোর্ড’-এর নিজস্ব ক্যান্টিন। তিনি সেই বোর্ডের চেয়ারম্যান। এককথায় প্রস্তাব লুফে নেন। তার পর, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এর মধ্যে ২০০৪ সালে জোর ধাক্কা খান। দুর্ঘটনায় মেয়ে-জামাইয়ের মৃত্যু তাঁকে মানসিক ভাবে দুর্বল করে তোলে। অবাক হয়েছিলেন, মুখের উপর অ্যাম্বুল্যান্স মেয়ে-জামাইয়ের মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে অস্বীকার করায়। শেষপর্যন্ত এক ব্যক্তির গাড়িতে মৃতদেহ তুলতে হয়েছিল।
সেই ঘটনার পরেই ঠিক করেন, অ্যাম্বুল্যান্স কিনবেন। যাতে তাঁর মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা আর কারও না হয়। কিনেও ফেলেন।
প্যাট্রিসিয়া ক্রমে বোঝেন, যন্ত্রণা জীবনের অঙ্গ। যন্ত্রণাকে আঁকড়ে এগিয়ে চলা যায় না। ক্রমে শোক কাটিয়ে ওঠেন। মাঝে কয়েকটা বছর বসে গিয়ে, আবার শুরু করেন ব্যবসা। খুললেন নিজের প্রথম রেস্তোরাঁ ‘সন্দীপা’, মেয়ের স্মৃতি। সঙ্গে নিলেন ছেলেকেও।
হসপিটালিটি সেক্টরে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায় তাঁর রেস্তোরাঁ। আজ, শুধু চেন্নাইতেই তাঁর রেস্তোরাঁর ১৪টা আউটলেট রয়েছে। আর লাভ? রোজ গড়ে দু-লাখ টাকা। ২০১০ সালে FICCI-এর দেওয়া পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
সফল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী প্যাট্রিসিয়ার কথায়, মেরিনা বিচই আমার বিজনেস স্কুল। সেখান থেকেই আমার ব্যবসার পাঠ শেখা। সেটাই আমার MBA!
No comments:
Post a Comment