অ্যাজমা সমস্যা ও চি‌কিৎসা

স্বাস্থ্য বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৩৩তম পর্বে কথা বলেছেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগের ইউনিটপ্রধান সহকারী অধ্যাপক রৌশনী জাহান।

অ্যাজমার জন্য শ্বাসকষ্ট, বুঝবেন কীভাবে?

শ্বাসকষ্টের একটি অন্যতম কারণ অ্যাজমা। তবে অ্যাজমার জন্য শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সেটি বোঝার উপায় কী?

প্রশ্ন : অ্যাজমার জন্য যদি শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে বোঝার কি কোনো উপায় রয়েছে, আসলে এটি অ্যাজমার জন্য হয়েছে?
উত্তর : অবশ্যই। আবার কিছু কিছু রোগীর ইতিহাস নিয়ে জানতে পারি। যেখানে অ্যাজমার সমস্যা হয়, সেখানে পরিবারে কারো না কারো অ্যালার্জির রোগ থাকে। কারণ, অ্যাজমা অ্যালার্জিজনিত রোগ। কেন? এর কারণ জানা যায়নি। তবে অতিসংবেদনশীল শ্বাসতন্ত্রের কারণে এটি হয়ে থাকে। পরিবারে যখন থাকে, তাকে আমরা বলি এটোপিক অ্যাজমা। সে ক্ষেত্রে তার একটি ইতিহাস পাওয়া যায়। তার একটি চামড়ার রোগ থাকে অ্যালার্জিজনিত কারণে, অ্যালার্জি কনজাংটিভাইটিস। চোখ লাল হয়ে যায়, চুলকায়। চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। আরেকটি যেটি হয়, অ্যালার্জির কারণে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হতে পারে। অনবরত ধোঁয়া, ধুলাবালির সংস্পর্শে এলে হাঁচি হতে পারে। নাক দিয়ে পানি ঝরতে থাকে, এগুলো একটি অন্যতম উপসর্গ। এ ছাড়া তার অ্যালার্জিক একজিমা হতে পারে।
শ্বাসকষ্টের একটি বিশেষ সমস্যা থাকে। একে আমরা বলি ভেরিয়েবল, অর্থাৎ অত্যন্ত পরিবর্তনশীল। কখনো কখনো খুব বেড়ে যায় অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে। যখন অ্যালার্জেন নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তখন অনেক বেড়ে যায়। সাধারণত এসব দেখে বোঝা যায় অ্যাজমার কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

অ্যাজমার ক্ষেত্রে ইনহেলারের ভূমিকা কী?

অ্যাজমার চিকিৎসায় ইনহেলার একটি কার্যকর চিকিৎসা।

প্রশ্ন : ইনহেলারের ভূমিকা অ্যাজমার ক্ষেত্রে কী রকম?
উত্তর : এখানে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগীকে যদি ভালো থাকতে হয়, উপসর্গমুক্ত থাকতে জীবনটা চালনা করতে হয়, তাহলে কিন্তু কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেহেতু অ্যালার্জেনজনিত কারণে এটি সংবেদনশীল রেসপেরিটরি ট্র্যাক্টে আক্রমণগুলো সৃষ্টি করে, অ্যাজমা রোগীর শ্বাসকষ্টগুলো বাড়িয়ে দেয়, তার জন্য প্রধান যে চিকিৎসা, সেটি হলো ইনহেলার ব্যবহার করা। এর মাধ্যমে ধুলা সরাসরি শ্বাসতন্ত্রে চলে যাচ্ছে। এখানে অতিদ্রুত কাজটা করছে। তবে কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে তাদের তখন কীভাবে পরামর্শ দেন?
উত্তর : রোগীরা আসলেই ইনহেলার নিতে ভয় পায়। তবে সুখবর হলো, এখন অনেকটা কমে এসেছে। এর কারণ হলো হয়তো বা প্রচার হচ্ছে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে জেনে আসছেন। তখন জেনে যাচ্ছেন। কারণ, আমরা যেটা করি অ্যাজমার চিকিৎসার সঙ্গে এটাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে। ইনহেলার নেওয়ার পদ্ধতি ঠিকমতো জানতে হবে। কয়েক ধরনের ইনহেলার রয়েছে। একটি হলো রিলিভার, আরেকটি হলো কনট্রোলার। এটি রোগীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যখন রোগী কোথাও বেড়াতে যাবে, অন্যান্য জিনিসের আগে তার ব্যাগের মধ্যে অবশ্যই ইনহেলার নিতে হবে। এখন আমার মনে হয়, রোগীরা সেটা গ্রহণ করছে। নিয়ন্ত্রিত অ্যাজমার বিষয়ে সবাই জানতে পারছে।

অ্যাজমার চিকিৎসা কী

অ্যাজমা শ্বাসতন্ত্রের একটি সমস্যা। বিভিন্নভাবে এর চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত এটি নিরাময়যোগ্য নয়, নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ।

প্রশ্ন : যখন বোঝেন রোগী অ্যাজমায় ভুগছে, তখন পরামর্শ কী কী থাকে। সেই ক্ষেত্রে কী কী চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করেন।
উত্তর : অ্যাজমার চিকিৎসা একটু সময়সাপেক্ষ। কারণ, অ্যালার্জেনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে একটু ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। এখানে ফার্মাকোলজিক্যাল এবং নন ফার্মাকোলজিক্যাল দুটো মাধ্যমেই আমরা রোগীকে চিকিৎসা করে থাকি। ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে কতগুলো পরামর্শ দিই। অ্যাজমা চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য একটা পরিকল্পনা দিয়ে দিই। সেখানে ওনারা তার অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না নিজেই ‘সেল্ফ এসেসমেন্ট’ করতে পারে। অ্যালার্জেন নির্ণয় করার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে। তবে অ্যাজমার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তার মধ্যে আমরা যেগুলো অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করি, সেগুলো নাও থাকতে পারে। রোগীকে আমরা বলি, আপনি কি বুঝতে পারেন যে কী করলে এমন হয়। অনেক সময় খাবারে হতে পারে। এ ছাড়া খুব ঠান্ডায় সমস্যা হয়। ধুলাবালিতে যাওয়া ছাড়াও রোগী যখন খুব ঘেমে যায়, প্রচণ্ড ঘাম নিয়ে হঠাৎ করে যখন ঠান্ডা পানি পান করেন, তখনো কিন্তু অ্যাজমার অ্যাটাকটা বেড়ে যায়। এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে গেলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করেন কীভাবে।
উত্তর : তাদের যখন রোগের পরীক্ষা করি, কিছু কিছু জিনিস আমরা দেখতে পাই। তখন আমরা সন্দেহ করি যে রোগীটির অ্যাজমা হতে পারে। তার কাশি হয়, এর সঙ্গে শাঁ শাঁ শব্দ হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তার শ্বাসকষ্ট হয়। আমরা দেখি তার অ্যাজমার ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে কি না। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে তখন তার কিছু পরীক্ষা করে নিই। পিক ভ্যারিব্যালিটি পরীক্ষা করি, পাইরোমেট্রি করি। শ্বাসকষ্টের অবসট্রাকশনের ধরন সেটি আমরা বুঝতে পারি।
প্রশ্ন : অ্যাজমার ধরন বোঝার প্রয়োজনীয়তা কী? সেটি কি চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করে?
উত্তর : রোগ যত তাড়াতাড়ি নির্ণয় হবে, তত তাড়াতাড়ি আমরা তার চিকিৎসা শুরু করতে পারব। তার ফুসফুসের জটিলতাকে দূর করতে পারব। একে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। কারণ, আমরা জানি, অ্যাজমা নিরাময়যোগ্য নয়, নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এটা নিয়ন্ত্রণে থাকলে পুরোপুরি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।

শ্বাসতন্ত্রজনিত কী কী কারণে শ্বাসকষ্ট হয়?

শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যেমন : ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, সিওপিডি, কাশি ইত্যাদি। এসব কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হয়।

প্রশ্ন : শ্বাসতন্ত্রজনিত কী কী কারণ রয়েছে, যার জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে?
উত্তর : শ্বাসকষ্ট শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার অন্যতম প্রধান একটি উপসর্গ। ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা এর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া রয়েছে সিওপিডি। আরো যেগুলো রয়েছে, তার মধ্যে কাশি একটি প্রধান সমস্যা। সেটা নতুন কাশি হতে পারে বা অনেক দিনের পুরোনো কাশি হতে পারে। এসব কারণে সাধারণত শ্বাসকষ্ট হয়।

No comments:

Post a Comment