তরুণরা চাকরির ইন্টারভিউতে গিয়ে সবচেয়ে বড় যে ভুলগুলো করেন তার একটি তালিকা তৈরি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী সেই ভুলগুলো…
২৪. নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে না জানা
যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে না জানা। এটি একটি বড় ভুল। কারণ নিয়োগকর্তারা শুধু এমন কাউকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী হবেন না যার শুধু একটি চাকরি দরকার। তারা বরং এমন কাউকেই চাইবেন যিনি তাদের সঙ্গে সত্যিকার অর্থেই মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করতে চান।
সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। প্রয়োজনে নোট টুকে নিন। যাতে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে আপনি সহজেই উত্তর দিতে পারেন।
২৩. ২০ মিনিট আগেই হাজির হওয়া
ইন্টারভিউতে একটু আগেভাগেই উপস্থিত থাকা ভালো। কিন্তু এর ফলে আবার ইন্টারভিউ গ্রহণকারীরা আপনার ইন্টারভিউ আগে নেওয়ার জন্য চাপ বোধ করতে পারেন। নিশ্চয় কোনো যুক্তসঙ্গত কারণেই আপনার ইন্টানভিউর সময় নির্ধারিত করা হয়েছে।
সেই সময়ের চেয়ে দেরি করা উচত নয়। তবে ওই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে মাত্র পাঁচ মিনিট আগে হাজির হলেই চলবে।
সুতরাং বেশি আগে চলে আসলে পাশের কোনো চা-কফির দোকানে সময় কাটান। এবং ইন্টারভিউয়ের মাত্র কয়েকমিনিট আগে নিয়োগকর্তাদেরকে আপনার চেহারা দেখান।
২২. খুব বেশি সাধারণভাবে উত্তর দেওয়া
আপনাকে মাত্র একটি দুটো কথাতেই আপনার জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রকাশ করতে হবে। সুতরাং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় খুবই সংক্ষেপে এবং সুনির্দিষ্টভাবে উত্তর দিন। কোনো প্রশ্নের উত্তরে শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলবেন না। ইন্টারভিউকারীদের যেন এমন অনুভূতি না হয় যে, তারা শুধু নিজেরাই কথা বলছেন। আপনি তাদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না।
সুতরাং আপনি এর আগের কর্মজীবনের যেসব প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে গর্ববোধ করেন সেসবের ওপর একটু নজর বুলিয়ে নিন। যাতে নিজের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে পারেন।
২১. ইন্টারভিউর সময় সিভির একটি প্রিন্টেড কপি সঙ্গে না আনা
আগে ইমেইলে সিভি পাঠিয়ে থাকলেও ইন্টারভিউর সময় আরেক কপি প্রিন্টেড সিভি সঙ্গে করে নিয়ে আসুন। এতে মনে হবে যে আপনি সুসংগঠিত এবং প্রস্তুতি সম্পন্ন। আর ইন্টারভিউ গ্রহণকারীদের জন্যও এতে সুবিধা হবে।
তবে শধু একটি নয় বরং সিভির একাধিক প্রিন্টেড কপি আনলেই সবচেয়ে ভালো। কারণ আপনাকে হয়তো একাধিক ইন্টারভিউর মুখোমুখিও হতে হতে পারে।
২০. কভার লেটার, সিভি বা রেজ্যুমেতে ভুল
ইংরেজি লেখায় আপনার পরদর্শীতা- বানান, গ্রামার এবং উচ্চারণে নির্ভুল হওয়া- আপনার বুদ্ধিমত্তার একটি ছোট নিদর্শণ। অথবা অন্তত ভাষার নিয়মগুলো মুখস্ত করায় আপনার সক্ষমতার লক্ষণ। সুতরাং নির্ভুল হওয়ার জন্য আপনার সিভিটি অন্য কাউকে দিয়ে এডিট করিয়ে নিতে পারেন।
১৯. মুখে দুর্গন্ধ
এই ধরনে সমস্যা থাকলে ইন্টারভিউর আগে চুইংগাম চিবোতে পারেন। তবে ইন্টারভিউতে যাওয়ার অন্তত পাঁচ মিনিট আগে তা ফেলে দিন।
১৮. নিজের জীবন সম্পর্কে কোনে ভালো গল্প না বলা
আপনি কে, আপনি কীসে ভালো, এবং নিজের জীবন নিয়ে আপনি কী করতে চান? ইন্টারভিউ কর্তারা এই বিষয়গুলো সংক্ষেপে জানতে চান। সুতরাং বিষয়গুলো আগে থেকেই ভালোভাবে ভেবে ও লিখে রাখবেন যাতে চটজলদি উত্তর দিতে পারেন। কোনো বন্ধুর সঙ্গে রিহার্সেলও করতে পারেন।
১৭. খুব বেশি হাস্যরসাত্মক বা নেতিবাচক হওয়া
আপনাকে চিয়ালিডার হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু সহকর্মী হিসেবে আপনি গোমড়ামুখো হলে তো বিপদ। সুতরাং সরলভাবেই সুন্দর আচরণ করুন এবং মুচকি হাসুন।
১৬. ঔদ্ধত্যপূর্ণ হওয়া
আপনাকে হয়তো নিয়োগকর্তাদের পছন্দ হতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনাকে ছাড়া তাদের প্রতিষ্ঠান চলবে না। সুতরাং কখনো ঔদ্ধত্য প্রকাশ করবেন না। ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়া মানেই চাকরি নিশ্চিত হওয়া নয়। বরং আপনাকে কম্পানির জন্য কাজ করে দেখাতে হবে।
১৫. যে জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সে সম্পর্কে ভালো করে না জানা
সুতরাং কাজটির খুঁটিনাটি সব আগে থেকে জেনে নিন। লিখে নোট করেও পড়তে পারেন।
১৪. ইমেইল অ্যাটচমেন্ট পাঠানো
নিয়োগকর্তারা সাধারণত ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট ডাউনলোড করতে অপছন্দ করেন। কারণ এতে রয়েছে মেলওয়্যার ঝুঁকি। সুতরাং শুধু টেক্সট এবং লিঙ্ক ব্যবহার করুন। এতে আপনার সিভি সহজেই ফোন ল্যাপটপে দেখা যাবে।
আপনার সিভি বা রিজ্যুমে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে লিঙ্কডইন ইউআরএল হিসেবে। আপনার কাজের নমুনাগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যাবে যদি সেগুলো ইমেইলের ভেতরে লিঙ্ক হিসেবে দেন।
১৩. টি শার্ট পরে ইন্টারভিউতে হাজির হওয়া
অন্তত একটি শার্ট এবং টাই পরে ইন্টারভিউতে যাবেন। যাতে আপনাকে নিরাপদ লোক বলে মনে হয়। আর নারীরা একটু রক্ষণশীল কিন্তু স্টাইলিশ পোশাক পরুন।
১২. ভিডিও ইন্টারভিউর সময় পেছনে অগোছালো দৃশ্য বা বিড়াল
স্কাইপে বা গুগুল হ্যাঙআউটে লাইভ ভিডিও চ্যাটে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় যেন পেছনে কোনো অগোছালো দৃশ্য না থাকে বা খোলা জানালা দিয়ে বিড়াল লাফ দিয়ে না পড়ে। আগেভাগেই সব গুছিয়ে নিশ্চিত করে নিন।
১১. প্রথম সাক্ষাতেই বেতন নিয়ে আলোচনা করতে চাওয়া
এতে আপনাকে একেবারেই হালকা মনে হবে। মনে রাখবেন ইন্টারভিউ একটি প্রক্রিয়া। সুতরাং অপেক্ষা করুন। আপনি আরো শক্তভাবে দরকষাকষির সুযোগ পেয়ে যাবেন।
১০. ওয়েব অ্যাকাউন্টে কুকুর বা বাচ্চার ছবি দেওয়া
টুইটার, লিঙ্কডইন ও গুগলপ্লাসের অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ছবিতে কুকুর বা বাচ্চার ছবি ব্যবহার করবেন না। বা আপনার কোনো বাজে ছবি ব্যবহার করবেন না। সিভি পাঠানোর আগে ভালো করে চেক করুন।
৯. ইমেইলে ফলোআপ করতে ভুলে যাওয়া
সাধারণত সিভি পাঠানোর পর ইমেইলে ফলোআপ করতে হয়। আর নয়তো ইন্টারভিউতে বাদ পড়ে যেতে পারেন। কারণ নিয়োগকর্তারা এমন কাউকে চান যারা সত্যিই তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। সুতরাং সিভি পাঠানোর পর অন্তত একটি বাক্য হলেও ফের ইমেইল করুন।
৮. রেজ্যুমের শীর্ষে একগাদা ক্যারিয়ার অবজেকটিভ যুক্ত করা।
তরুণরা অনেক সময় এমনটা করেন। কিন্তু এটি করবেন না। নিয়োগকর্তারা শুধু আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং বাড়তি কোনো দক্ষতা আছে কিন তা জানতে চান।
৭. অপ্রাসঙ্গিক কোনো সৃষ্টিশীলতা দিয়ে নজরকাড়ার চেষ্টা
আপনি যেই কাজের জন্য আবেদন করেছেন তার সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক কোনো সৃষ্টিশীল দক্ষতা দিয়ে ইন্টারভিউ কর্তাদের মন জয় করার চেষ্টা করবেন না। এতে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে।
৬. ভিডিও রেজ্যুমে পাঠানো
ইমেইল বা অন্যান্য এইচ আর পদ্ধতিতে সিভি পাঠাতে হয়। সবচেয়ে ভালো লিঙ্কডইনের মাধ্যমে পাঠালে।
৫. লিঙ্কড ইন প্রোফাইলের লিঙ্ক দিতে না পারা
এতে নিয়োগকর্তার সহজেই আপনি তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক কিনা তা নির্ণয় করতে পারবেন।
৪. নিয়োগকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ভারি খাবার খাওয়া
নিয়োগকর্তা হয়তো আপনাকে চা-কফি খেতে খেতে কাজ নিয়ে কথা বলার জন্য ডেকেছেন। তাহলে ভুলেও সে সময় স্যান্ডউইচ বা ভারি কোনো খাবারের অর্ডার দিয়ে বসবেন না যেন।
৩. শক্তিহীনতা
ইন্টারভিউর সময় সঠিক মাত্রায় শক্তি প্রদর্শণ বেশ কঠিন কাজ বটে। আপনাকে দেখাতে হবে যে আপনি নাটকীয়তা পছন্দ করেন না। তবে আপনি আবার একেবারে একঘেঁয়ে কোনো লোকও নন। সুতরাং স্বাভাবিক হাসিখুশি ভাব বজায় রাখুন। তবে খুব বেশি উৎফুল্ল হতে যাবেন না যেন।
২. শেভ না করা
আজকাল হয়তো দাঁড়ি-গোফ রাখাতেও ফ্যাশন আছে। কিন্তু তাই বলে দাড়ি গোফ নিয়ে ইন্টাভিউ বোর্ডে হাজির হবেন না যেন।
১. আগে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই অথচ তিন পৃষ্ঠার সিভি!
আপনার যদি মনে হয় আপনার সিভিটি পরিপূর্ণ হয়নি তাতে উদ্বিগ্ন হবেন না। কারণ নিয়োগকর্তাদের আপনার ক্যারিয়ারের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার সময় নেই। মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই পড়ে ফেলা যায় এমন একটি সিভি তৈরি করুন। আর প্রথম পাতাতেই আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাগুলো তুলে ধরুন।
No comments:
Post a Comment