ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার আজকাল নারীদের একটি ভয়াবহ রোগ। এ রোগের কারণে অনেক নারী মারা যাচ্ছেন। কিন্তু এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের নারীর ঝুঁকি বেশি সে বিষয়ে নতুন করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন ডাক্তার। তারা বলেছেন, যেসব নারীর ব্রেস্টের ঘনত্ব যত বেশি তার জেনেটিক কারণের চেয়ে শুধু এ কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অন্যদিকে যাদের ব্রেস্টের ঘনত্ব কম বা থলথলে তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম।
যুক্তরাষ্ট্রের এ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর জ্যাক কুজিক বলেছেন, অনেক সময় শুধু এক্সরে করে এ বিষয়টি বোঝা যায় না। শুধু এক্সরে’র ওপরে ভিত্তি করে বোঝা যায় না একজন নারীর ব্রেস্ট কতটা ঘন বা শক্ত, অথবা কতটা থলথলে। এক্ষেত্রে একজন নারীও নিজেকে লজ্জায় নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। ফলে ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। তাই তিনি এক্ষেত্রে শুধু এক্সরে’র ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আরো কিছু স্ক্রিনিং পদ্ধতি অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার রাতে নারীদের সচেতন করতে এ সতর্কতা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওই চিকিৎসকরা। তারা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, অনেক নারী পারিবারিক কারণে বা জেনেটিক কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তবে এর চেয়ে বড় ঝুঁকি হলো ব্রেস্টের ঘনত্ব বা শক্ত গড়নের ব্রেস্ট। এ বিষয়ে ডাক্তারদের একটি দল সম্প্রতি গবেষণা করেছেন। তারা তাতে দেখেতে পেয়েছেন, যুবতীদের মধ্যে যারা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে চার জনই আক্রান্ত হয়েছে তাদের ব্রেস্টের ঘনত্ব অত্যধিক হওয়ার কারণে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যেসব নারীর ব্রেস্টের ঘনত্ব কম বা থলথলে তাদের ব্রেস্টে ফ্যাট সেল বেশি। এ জন্য তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে কম। কিন্তু শক্ত গড়নের বা বেশি ঘনত্বের ব্রেস্টে থাকে উচ্চ মাত্রায় গ্রান্ডুলার বা গ্রন্থিযুক্ত টিস্যু। এ কারণে তাদের ঝুঁকিটা বেশি।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্রেস্টের এই ঘনত্ব নির্দারণ করা যায় স্ক্যানিং করে। এ ছাড়া আরো উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। ওদিকে বৃটেনে জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে ব্রেস্ট স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের অধীনে নারীদের নিয়মিতভাবে জিজ্ঞেস করা হয় না তাদের ব্রেস্টের গড়ন থলথলে নাকি শক্ত অর্থাৎ ঘনত্ব বেশি। প্রফেসর কাজিক বলেছেন, যেসব নারীর ব্রেস্টের সব স্থানে একই রকম ঘনত্ব তাদেরকে বেশি করে স্ক্রিনিং পদ্ধতি অবলম্বরে যুক্তি দিয়েছে বিজ্ঞান। এক্ষেত্রে যেসব নারীর ব্রেস্টের ঘনত্ব বেশি তাদের টিউমার সনাক্ত করতে স্ট্যান্ডার্ড মানের এক্স-রে বা ম্যামোগ্রাফিতে অনেকটা বেগ পেতে হয়। কারণ, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নারীর ব্রেস্টের টিস্যু ও টিউমার দু’টোই সাদা দেখায়।
লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির উলফসন ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের পরিচালক প্রফেসর জ্যাক কুজিক। তিনি বলেন, এই সাদা দেখানোর কারণে অনেক ক্যান্সার শুরুতে সনাক্ত করা যায় না। এ জন্য ঘন ব্রেস্টের নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। তিনি এমন নারীদের ট্যামোক্সিফেন জাতীয় প্রতিরোধমুলক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে ব্রেস্টের ঘনত্ব কমে যায়। ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ ডিরেক্টর অব স্ক্রিনিং ডাক্তার অ্যানি ম্যাকি বলেন, ব্রেস্টের ঘনত্বের কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকির বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য আমরা একটি কমিশন করেছি। তাতে ব্রেস্ট ক্যান্সার সনাক্ত করার বিষয়ও নজরে রাখা হবে। ওই পর্যালোচনার রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা।
No comments:
Post a Comment