খুশ‌কি মুক্ত চু‌লের জন্য যা কর‌বেন

খুশকির যন্ত্রনা! তাহ‌লে খুশকিমুক্ত চুল পেতে অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু নির্বাচন করুন। খুশকির জন্য আলাদা মেডিকেটেড শ্যাম্পু পাওয়া যায়। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। মেডিকেটেড শ্যাম্পুতে অনেকের আবার চুল রুক্ষ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ও হেয়ার সেরাম ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। এ ছাড়া ঘরোয়া কিছু পরিচর্যাও খুশকি সমস্যায় উপকার দেয়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আকাঙ্খা’স বিউটি পার্লারের রূপবিশেষজ্ঞ জুলিয়া আজাদ।

নারিকেল তেল
খুশকি দূর করার জন্য নারিকেল তেলের ব্যবহার অপরিহার্য। মাথা শ্যাম্পু করার আগে নারিকেল তেল দিয়ে মাথার স্কাল্প ম্যাসাজ করে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর সাধারণ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

তেঁতুল পানি
পুরনো তেঁতুল পানিতে গুলে নিন। গোলানো তেঁতুল চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগান। ১০ থেকে ১২ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তেঁতুল মাথায় দিন। এতে খুশকি যেমন দূর হবে, তেমনি মাথার চুলকানিও কমবে।

লেবু
লেবুর রস দুই টেবিল চামচ মাথায় ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা যত দিন খুশকি থাকবে, তত দিন নিয়মিত ব্যবহার করুন।

রসুন
রসুন ছেঁচে হাত দিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন শ্যাম্পু করার আগে। রসুনের গন্ধ দূর করার জন্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। রসুন খুশকির জন্মদায়ক ব্যাকটেরিয়া রোধ করে।

অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল ১০ ফোঁটা মাথার স্কাল্পে ম্যাসাজ করে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে সারা রাত মাথা ঢেকে রাখুন। সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

টক দই
টক দই খুশকি দূর করতে ও চুল ঝলমলে করতে খুবই কার্যকর। ৬ টেবিল চামচ টক দই খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এরপর এতে ১ টেবিল চামচ মেহেদি বাটা ভালোভাবে মেশান। মিশ্রণটি চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চুল ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। চুল খুশকিমুক্ত ও সিল্কি হবে।

পেঁয়াজের রস
পেঁয়াজের রস খুব দ্রুত খুশকি দূর করে। পেঁয়াজ মিহি করে বেটে রস ছেঁকে নিন। পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে লাগান। ২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার স্কাল্পে পেঁয়াজের রস লাগান। এতে স্কাল্প চুলকানোও কমে যাবে।

ডিম
একটি ডিমের সাদা অংশ ও টক দই ৪ টেবিল চামচ খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। এরপর ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি স্কাল্পসহ পুরো চুলে লাগান। ২০ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করুন।

কর্পূর ও নারিকেল তেল
কর্পূর তেল খুশকি কমাতে সাহায্য করে। আধা কাপ নারিকেল তেলের মধ্যে এক চা চামচ কর্পূর তেল নিয়ে এয়ারটাইট কৌটায় সংরক্ষণ করুন। রাতে শোবার আগে মাথার স্কাল্পে এই তেল লাগান। মিনিট দশেক ধরে ঘষে স্কাল্পে মাখুন। সকালে অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। দুই সপ্তাহ ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন। খুশকি কমে গেলেও সপ্তাহে এক দিন এই তেল মাথায় মাখুন।

বেকিং সোডা
হালকা গরম পানিতে বেকিং সোডা গুলে নিন। মাথা ও চুল ভালো করে ভিজিয়ে মাথার স্কাল্পে গোলানো বেকিং সোডা ঘষে ঘষে লাগান। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু না করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে স্কাল্পের খুশকি দূর হবে। অনেকের মাথার ত্বক শুষ্ক হয়। সে ক্ষেত্রে আধা মগ পানিতে দুই টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে গোসল শেষে মাথা ও সব চুলে ঢেলে দিন। তারপর আর পানি ব্যবহার করবেন না। এক দিন পর ভালো ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

অ্যালোভেরা
খুশকি তাড়াতে অ্যালোভেরার শাঁস ভালো কাজ করে। অ্যালোভেরা শাঁসের সঙ্গে মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে লেবুর রস আর শুষ্ক ত্বকের জন্য মধু মেশাবেন। এরপর এই মিশ্রণ মাথার ত্বক ও চুলের আগা পর্যন্ত মেখে রাখুন ঘণ্টাখানেক। খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি নরম ও মসৃণ চুল পাবেন।

মেথি-তেল
নারিকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে কয়েক দিন কাচের বয়ামে ভরে রোদে দিন। নিয়মিত মেথি মেশানো তেল মাথায় ম্যাসাজ করলে খুশকির ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন।

অ্যাসপিরিন
অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট দুটি গুঁড়া করে নিন। শ্যাম্পু করার সময় শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। অ্যাসপিরিন মেশানো শ্যাম্পু মাথায় ১ থেকে ২ মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলে আবার শুধু শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে দুদিন করে এক মাস ব্যবহার করুন। খুশকি থাকবে না।

টি ট্রি অয়েল
সাধারণ শ্যাম্পুর সঙ্গে ৫ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি থাকবে না।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মাথার ত্বকের পিএইচ লেভেল পরিবর্তন করে ত্বক ভালো রাখে। ফলে খুশকি জন্মায় না। আপেল সিডার ভিনেগার আধা কাপ, পানি আধা কাপের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে বোতলের সাহায্যে মাথার ত্বকে স্প্রে করুন। এরপর মাথা টাওয়েল দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। শেষে শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে দুবার করতে হবে।

এবা‌রে লক্ষ করুনঃ

♦ নিয়মিত চুল আঁচড়ান। এতে খুশকি হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
♦ পুষ্টিকর খাবার খান। মাথার ত্বক ও চুল ভালো থাকবে।
♦ চুল নিয়মিত পরিষ্কার করুন। কারণ অপরিষ্কার চুলে খুশকি বেশি হয়।
♦ কিছু চর্মরোগ দেখতে খুশকির মতো। তাই মাথায় খুশকির পরিমাণ বেশি মনে হলে খুশকি না ভেবে চর্মরোগবিশেষজ্ঞর কাছে যান।

No comments:

Post a Comment