দোকানদার প্রতারণা কর‌লে; আপনার অবশ্য করণীয়...

য‌দি কোন পণ্য কি‌নে প্রতা‌রিত হোন, আর সেই প্রতারণার সু‌নি‌র্দিষ্ট প্রমান য‌দি আপ‌নি দেখা‌তে পা‌রেন, ত‌বে নি‌শ্চিতভা‌বে ডাবল অায় কর‌লেন! প্রতা‌রিত হ‌য়ে আয়? নিশ্চয়ই চোখ কপা‌লে! ত‌বে বিস্তা‌রিত জে‌নে নিনঃ 

আপ‌নি কি কোনো পণ্য কিনে ঠকেছেন? হতাশ না হয়ে অভিযোগ করুন, আয়ের একটি নতুন পথ খুলবে আপনার জন্য। ধরুন, আপনি এক লিটারের একটি পানির বোতল কিনলেন, যার মোড়কে লেখা মূল্য ২৫ টাকা। কিন্তু আপনি যে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন, সেখানে অনেকটা গায়ের জোরেই ৩০ টাকা নিল। একটু কষ্ট করে রসিদ সংগ্রহ করুন। অভিযোগ করুন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনি জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ পেয়ে যাবেন।


এমন অভিযোগ করে ভোক্তা জরিমানার ভাগ পেয়েছেন এমন ঘটনা অনেক আছে। ২০১০ সাল থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে (ডিএনসিআরপি) পণ্য কিনে ঠকার অভিযোগ করে ১৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা পেয়েছেন ৯৪১ জন ক্রেতা। এর মধ্যে গত দুই মাসেই ৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা পেয়েছেন ৫৮৮ জন ক্রেতা। শুধু সাধারণ রেস্তোরাঁ বা দোকান নয়, ডিএনসিআরপিতে জরিমানার মুখে পড়েছে গ্রামীণফোন, রবির মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও।

ভোক্তারা ‌যেকোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেই ঘটনা সংঘটনের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে লিখিতভাবে, ফ্যাক্সের মাধ্যমে, ই-মেইলের মাধ্যমে অথবা এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। তবে অভিযোগকারীর কাছে প্রমাণ থাকা লাগবে। যেমন বাজার থেকে কোনো পণ্য কিনে রসিদ না নিলে সেটার প্রমাণ থাকে না। ফলে বিক্রেতা যে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নিয়েছেন, সেটি প্রমাণ করা অসম্ভব হয়ে যায়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অনেকগুলো ধারায় অধিদপ্তর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপরাধগুলো হলো ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করা, ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারিত করা, ওজনে কারচুপি, বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি, মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ওষুধ বিক্রি ইত্যাদি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (DNCRP) এর মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করি। তবে জটিল কিছু হলে একটু সময় লাগে।
২০০৯ সালে সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন করার পর এর অধীনে গঠিত হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল বাজারে অভিযান চালিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে এ সংস্থা। তাদের হিসাবে, সেখানে এ পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৪ হাজার ২৪৫টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৩টি। বাকি অভিযোগগুলোর তদন্ত চলছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর জানান যে, ২০১৫ সালে অভিযোগ এসেছিল মাত্র ২২৫টি। পরের বছর এ সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৬২২টিতে উন্নীত হয়। আর চলতি বছর প্রথম দুই মাসেই অভিযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৬৮২টিতে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ যে সচেতন হচ্ছে, এ সংখ্যাটিই তার প্রমাণ।’
এদিকে অনেক গ্রাহকই অভিযোগ করে জরিমানার ভাগ পাওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরছেন। জাহির রফিক নামে একজন গ্রাহক লিখেছেন, তিনি একটি সুপারশপে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম রাখায় অভিযোগ করে জরিমানার ভাগ হিসেবে আড়াই হাজার টাকা পেয়েছেন। রুবেল আমিন তৌফিক নামের একজন লিখেছেন, একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় পানির বোতলের দাম ২৫ টাকার বদলে ৫০ টাকা রাখায় তিনি অভিযোগ করেন। তিনিও জরিমানার ভাগ হিসেবে আড়াই হাজার টাকা পান।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আজ বুধবার (১৫-ই মার্চ) বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালন করবে। প্রতিবছর এ দিনকে বিশ্বব্যাপী ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘ভোক্তার আস্থাশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ি’।

No comments:

Post a Comment