ইউটিউব বর্তমান সময়ে অনলাইনে উপার্জনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। ইউটিউব অ্যাকাউন্ট খোলা সহজ হলেও সঠিক গাইডের অভাবে অধিকাংশ ইউটিউবার ইউটিউব থেকে যথেষ্ঠ পরিমান আয় করতে না পেরে হতাশ হয়ে যান।
আজ আমি আলোচনা করবো কিভাবে ইউটিউবের মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ পরিমান ইনকাম করতে পারবেন। নিম্নে বর্নিত পদ্ধতিগুলো বড় বড় ইউটিউবাররা ব্যবহার করে ইনকাম করে থাকে।
বলে রাখা দরকার, এই আর্টিকেলে আমি পদ্ধতিগুলো নিয়ে শুধুমাত্র আলোচনা করেছি। কিভাবে ধাপে ধাপে এগুলো ব্যবহার করতে হয় সেটি দেখানোর জন্য আমি শীঘ্রই ভিডিও আপলোড করবো ইনশা আল্লাহ।
ইউটিউব অ্যাডঃ
ইউটিউব অ্যাড হচ্ছে ইউটিউব থেকে ইনকামের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। এটা ইনকামের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিও বটে।
আপনি ইউটিউব অ্যাকাউন্ট করার পরে ইউটিউব অ্যাকাউন্ট থেকে ছোট্ট একটি ফরম পূরণ করলেই ইউটিউব আপনার অ্যাকাউন্টে অ্যাড অ্যাক্টিভেট করে দিবে।
আগে নতুন অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাডের জন্য আবেদন করা গেলেও এখন ইউটিউবের নতুন নিয়ম অনুযায়ী অ্যাডের আবেদন করতে হলে আপনার অ্যাকাউন্টে টোটাল ভিডিও ভিউ কমপক্ষে ১০,০০০ হতে হবে।
তারপর আপনি আপনার ভিডিওতে অ্যাড শো করতে পারবেন। প্রতি ১ হাজারবার অ্যাড শো করার বিনিময়ে বা প্রতি অ্যাড ক্লিকের বিনিময়ে ইউটিউব আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমানে টাকা দিবে।
এই টাকার পরিমান বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপরে নির্ভর করে। আমার ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে গড়ে প্রতি হাজার ভিডিও ভিউ এর জন্য ৪০-৫৫ সেন্ট পাই।
ইউটিউব অ্যাড টাকা উপার্জনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলেও এর থেকে ইনকামের পরিমান অন্য পদ্ধতিগুলোর চেয়ে অনেক কম।
একারনে ইউটিউব থেকে বড় অঙ্কের টাকা উপার্জন করতে চাইলে ইউটিউব অ্যাডের পাশাপাশি অন্য পদ্ধতিও ব্যবহার করতে হবে।
ভিডিও স্পন্সরশীপঃ
ভিডিও স্পন্সরশীপ হচ্ছে ইউটিউব থেকে উপার্জনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ইউটিউব অ্যাডের চেয়ে কয়েকশত গুণ বেশী ইনকাম করা সম্ভব।
ভিডিও স্পন্সরশিপ অনেকটা টিভি অ্যাডের মতোই। আপনার ভিডিওতে কোন কোম্পানীর প্রোডাক্টের প্রচার এর বিনিময়ে আপনি সেই কোম্পানী থেকে টাকা পাবেন।
ধরুন আপনার একটি হেলথ বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল আছে। এখন আপনার সাথে কোন ঔষধ কোম্পানী যোগাযোগ করে আপনার ভিডিওতে তাদের “ওজন কমানোর” ঔষধের বিজ্ঞাপন দিতে চাইলো। সেক্ষেত্রে তারা আপনাকে এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান টাকা অফার করবে।
আপনি আপনার ভিডিওতে তাদের ঔষধের গুণাগুণ বলে আপনি তাদের কাছে সেই টাকা পেতে পারেন। এই টাকার পরিমান আপনার চ্যানেলের জনপ্রিয়তার উপরে নির্ভর করবে।
বড় ইউটিউব চ্যানেলগুলো ভিডিও স্পন্সরশীপ এর মাধ্যমে প্রতি ভিডিওতে মাঝে মাঝে ১০,০০০ ডলারেরও বেশী টাকা পায়।
শুনতে অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি। ভিডিও স্পন্সরশীপ এতো লাভজনক ব্যবসা যে ২০১৬ সালে গুগল FameBit নামে একটি ভিডিও স্পন্সরশীপ মার্কেটপ্লেস কিনে নিয়েছে।
ভিডিও স্পন্সরশীপ ডিল খুঁজে পাওয়া খুব সহজ। এজন্য প্রথমে আপনাকে ভিডিও স্পন্সরশীপ মার্কেটপ্লেসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হচ্ছে https://famebit.com/
গুগলের মালিকানাধীন এই স্পন্সরশীপ মার্কেটপ্লেস ইউটিউবারদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। রেজিস্ট্রেশনের পরে আপনি সেখানে বিভিন্ন কোম্পানীর স্পন্সরশীপ এর লিস্ট দেখতে পাবেন।
তারা স্পেসিফিক্যালি কি ধরনের ভিডিওতে কি রকম ভাবে অ্যাড দিতে চায় সেটা বিস্তারিত বলা থাকে। আপনি আপনার পছন্দমতো যে কোন স্পন্সরশীপ ডিলের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
তারা আপনার চ্যানেল পছন্দ করলে আপনাকে জানাবে। আপনি তখন তাদের অ্যাড আপনার ভিডিওতে দিয়ে স্পন্সরশীপের টাকা হাতে পাবেন।
একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, আজকে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে আগামী কালই স্পন্সরশীপ ডিল পাবেন এইটা স্বপ্নেও আশা করেন না। আপনার চ্যানেল জনপ্রিয় করতে পারলেই শুধুমাত্র আপনি স্পন্সরশীপ ডিল পাবেন।
প্রোডাক্ট সেলঃ
আচ্ছা বলেন তো, বড় বড় কোম্পানীগুলো মাসে কোটি কোটি টাকা খরচ করে টিভিতে অ্যাড কেন দেয়? উত্তর তো সবাই জানে। তাদের পন্যের প্রচার তথা পন্য বিক্রি করার জন্য।
আপনার হাতে কোটি কোটি টাকা না থাকলেও আপনার ইউটিউব আছে। পন্যের প্রচারে ইউটিউবের ক্ষমতা টিভির চেয়ে আরও বেশী কারন দিন দিন টিভির চেয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখা বেশী জনপ্রিয় হচ্ছে।
তাই টাকা ছাড়াই পন্য প্রচার এবং বিক্রির ক্ষমতা ইউটিউব আপনার হাতে এনে দিয়েছে। এই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই অসংখ্য ইউটিউবার বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে প্রতি মাসে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করছে।
কেউ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করছে। আর কেউ নিজের প্রোডাক্ট প্রমোট এবং সেল এর জন্য ইউটিউব এর শক্তিকে ব্যবহার করছে।
যেমন ধরুন আপনি স্যামসাং এর লেটেস্ট মডেলের মোবাইল এর একটি আকর্ষনীয় ভিডিও রিভিউ তৈরি করলেন। যারা আপনার ভিডিও দেখবে তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষের নিশ্চয়ই সেই সেট কেনার আগ্রহ হবে।
এখন আপনি যদি ভিডিও এর বর্ননায় সেই সেট কেনার Amazon.com বা অন্য কোন অনলাইন স্টোরের অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক দেন তাহলে আগ্রহীরা সেই লিঙ্ক দিয়ে সাইটে গিয়ে সেই সেট কিনলে আপনি সেই বিক্রির কমিশন পাবেন।
এছাড়াও আপনি নিজের প্রোডাক্টও ইউটিউবে সেল করতে পারেন।
ধরুন আপনি একটি জিমের মালিক। আপনি ইউটিউবে এক্সারসাইজ সংক্রান্ত ভিডিও আপলোড করে সেগুলোতে আপনার জিমের মার্কেটিং করতে পারেন।
এতে আপনার জিমের পরিচিত এবং সদস্য সংখ্যা যে বাড়বে কোন সন্দেহ নাই। এভাবে অনেক ইউটিউবার তাদের নিজেদের ইবুক, ভিডিও কোর্স বা অফলাইন বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করছে।
ইউটিউবে আর্নিং শেখার যে কোন হেল্পের জন্য আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুনঃ
https://www.facebook.com/groups/1323412947756503/
চেষ্টা করলে আপনিও পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের মতোই ইউটিউবে প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন তাতে কোন সন্দেহ নাই।
সর্বশেষে একটা কথা মাথায় রাখবেন, ইউটিউবে ইনকামের মূল ভিত্তি হচ্ছে ভিডিও ভিউ বা চ্যানেলের জনপ্রিয়তা। আপনি যদি চ্যানেল জনপ্রিয় করতে পারেন এবং আপনার ভিডিওর যথেষ্ট দর্শক থাকে, আপনি নিজেই ইনকামের আরও উপায় খুঁজে নিতে পারবেন।
তাহলে আর দেরি কেন? আজই একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলুন আর প্রবেশ করুন সম্ভাবনার এক অসীম জগতে।
খুব সুন্দর উপস্থাপনা আপনার.. ধন্যবাদ আমাদের সাথে সুন্দর একটি বিষয় শেয়ার করার জন্য ..
ReplyDeleteঅনলাইনে টাকা ইনকাম সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে নিচের আর্টিকেলগুলো সম্পূর্ণ পড়ুন:
ব্লগিং করে টাকা আয় করুন ঘরে বসে
ঘরে বসে অনলাইনে টাকা ইনকাম করুন
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অনলাইনে টাকা আয় করার সেরা কিছু পদ্ধতি