কন্যা সন্তানদের বাবা মার জন্য জান্নাত অবধারিত!

নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্য পশ্চিমা অপশক্তিগুলো আজ উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু নারীর অধিকার আদায়ে ইসলাম কতোটুকু অবদান রেখেছে আর অন্য ধর্ম কতোটুকু বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে। পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক এই পৃথিবীতে এখনও কন্যাসন্তান অনাকাঙ্খিত। অথচ ইসলাম উত্তমরূপে কন্যাসন্তান লালন-পালন করাকেও ইবাদত হিসেবে গণ্য করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কোনো কন্যাসন্তান থাকে এবং তাকে সে উত্তম শিক্ষা দেয়, তার জন্য জান্নাত অবধারিত।’ অথচ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য তথা সমগ্র বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন একটি অনাকাঙ্খিত সমস্যা।


কিন্তু এ সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনায় এমনভাবে ব্যাপারটিকে উপস্থাপন করা হয়, যেনো এটি শুধু মুসলিমবিশ্বেরই একটি সমস্যা। এর কারণ হিসেবে সবসময় দায়ি করা হয় ইসলামকে। ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা সমাজে প্রচলিত আছে। যেমন, ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে নারী নির্যাতন করার অধিকার, ইসলামে নারীর নেই শিক্ষাগ্রহণের অনুমতি, রাজনীতি কিংবা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের নেই অধিকার, নারীর নেই কোনো বিষয়ে নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার, নারীর নেই স্বামী নির্বাচন বা তালাকের অধিকার, হিজাব বা পর্দাপ্রথার মূল উদ্দেশ্য নারীদের অবরুদ্ধ করা, ইত্যাদি।
অথচ বিস্ময়কর হলেও সত্য, এসব কোনো প্রচারণার সঙ্গেই নেই ইসলামের দূরতম সম্পর্ক। আজ থেকে চৌদ্দশো বছর আগে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে সকল প্রকার নারী নির্যাতন। উপযুক্ত সম্মানের সঙ্গে নিশ্চিত করেছে নারীর সুস্পষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু আজ সমস্ত বিশ্বব্যাপী ইসলামি রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে নারী বঞ্চিত হয়েছে তার আল্লাহপ্রদত্ত সকল অধিকার থেকে। ইসলামপূর্ব আরবসমাজে নারীদের অবস্থা এমনটাই ছিলো। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মে আজ পর্যন্ত নারীজাতির অধিকারের কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। হিন্দুধর্মে নারীজাতিকে মৃত্যু, নরক, সর্প, বীষ ও আগুন থেকেও মারাত্মক বলা হয়েছে। স্বামী ছাড়া নারীজাতির আলাদা কোনো অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়নি। যার কারণে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও তার স্বামীর সঙ্গে সহ-মরণে যেতে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে। খৃস্টানধর্মে নারীজাতিকে চরম লাঞ্চনার বস্তু আখ্যা দেয়া হয়েছে। তাইতো খৃস্টান পাদ্রী মিস্টার সেন্ট টার্টুলিয়ামের মতে, ‘নারী হচ্ছে বন্য জন্তুর চেয়েও অধিক বিপজ্জনক। অন্য আরেক পাদ্রী সেন্ট ক্রিয়ান নারীকে বীষধর সাপের সঙ্গে তুলনা করে তার থেকে দূরে সরে যেতে বলেছেন। সপ্তদশ শতকে খৃস্টধর্মের রাজধানী রোমে বিত্তবানদের একটি কাউন্সিলে সমবেত সকল শীর্ষ ব্যক্তি এ মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছিলো, নারীর কোনো আত্মা নেই। ইহুদিধর্মে নারীকে পুরুষের জন্য প্রতারক বলা হয়েছে। তাদের মতে, একজন সতী নারীর চেয়ে একজন পাপিষ্ঠ পুরুষ বহুগুণে শ্রেষ্ঠ। বৌদ্ধধর্মে কন্যাসন্তান জন্মলাভ করাকে কুলক্ষণে মনে করা হয়। নারীর কোনো অধিকার আছে বলে স্বীকৃতি দেয় না তারা। এভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মেই নারীজাতিকে পাপিষ্ঠ, অলক্ষণে, অপয়া ও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকে কোনো অধিকার দেয়া তো দূরের কথা, মানুষ বলেই স্বীকার করা হয়নি। তারা নারীদেরকে কেবল ভোগের পণ্য হিসেবেই গণনা করতো।

এমনিভাবে সর্বত্রই যখন নারীজাতির এমন লাঞ্চনা-গঞ্জনা আর অসম্মান, ঠিক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে ইসলাম এসে তৎকালীন সেই বর্বর যুগের অমানুষিক জুলুম থেকে নারীকে মুক্ত করেছে। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যা নারীজাতিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের যথাযথ অধিকার। ইসলাম এসে ধাপে ধাপে নারীজাতিকে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। যেই সমাজে নারীজন্মই পাপ বলে গণ্য হতো, সেখানে ইসলাম সর্বপ্রথম নারীজন্মের অধিকার নিশ্চিত করেছে। নারীসন্তানকে হত্যাকারীদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। ঘোষণা করেছে ‘স্মরণ করো সেদিনের কথা, যখন জীবন্ত পুঁতে রাখা কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?’ (সুরা তাকভির : ৮-৯)। অথচ আজ তথাকথিত কিছু নারীবাদী কিছু লোক ইসলামের এ চিরসত্য ও শাশ্বত অবদানের ওপর দিব্যি বুড়ো আঙুল তুলছে। তবে সুশীল নারীসমাজকে নয়, ঠেলে দিচ্ছে নিজেদেরকেই ধ্বংসের অতল গহ্বরে।

No comments:

Post a Comment