স্ট্রোকের কারণ, ঝুঁ‌কি ও চি‌কিৎসা

স্ট্রোক বিষয়ে এনটিভিতে কথা বলেছেন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান। বর্তমানে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।

স্ট্রোকের কারণ কী?
কোনো কারণে মস্তিষ্কের কোনো অংশ অবশ হয়ে যাওয়ার সমস্যাকে স্ট্রোক বলা হয়। মাথাব্যথা, শরীরের কোনো অংশ অবশ হয়ে যাওয়া, কথা বলতে না পারা ইত্যাদি স্ট্রোকের লক্ষণ।
বিভিন্ন কারণে স্ট্রোকের সমস্যা হতে পারে। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইত্যাদিকে স্ট্রোকের কারণ হিসেবে ধরা হয়।

প্রশ্ন : স্ট্রোকের কারণ কী?
উত্তর : কারো যদি রক্তচাপ বেশি থাকে, সে যদি নিয়মিত ওষুধপত্র না খায়, তাহলে এটি স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, তাদের স্ট্রোক হতে পারে। পাশাপাশি কিছু কিছু পারিবারিক ইতিহাস থাকে। যেমন, মা-বাবা বা কাছের কারো স্ট্রোক করেছে এ রকম যদি থাকে, তাহলে দেখা যায় ওই সমস্ত রোগী বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এগুলো সাধারণত স্ট্রোকের কারণ। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য কী?
অনেকে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোককে মিলিয়ে ফেলে। বিষয়টি আসলে সম্পূর্ণ আলাদা। মূলত, হার্ট অ্যাটাক হৃৎপিণ্ডে হয়। আর স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে।

প্রশ্ন : হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক দুটোর পার্থক্য কী? কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোথায় যাওয়া উচিত?
উত্তর : হার্ট অ্যাটাক হলো হার্টের অসুখ। আর স্ট্রোককে বলতে বোঝায় ব্রেন অ্যাটাক। স্ট্রোক করলে অবশ্যই নিউরোসার্জিক্যাল বা নিউরোলজিস্টের কাছে যেতে হবে। হার্ট অ্যাটাক হলে সাধারণত আমরা হার্টের হাসপাতালেই যাই।
প্রশ্ন : এটি উপসর্গ দিয়ে কি বোঝার কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : অবশ্যই রয়েছে। হার্ট অ্যাটাকের রোগী সাধারণত বুকে ব্যথা নিয়ে আসে। সাধারণত অজ্ঞান হয় না। তীব্র বুক ব্যথা হয়। সঙ্গে সঙ্গে ঘাম হয়। সে ঘামতে থাকে। দেখা যায় রক্তচাপ নেমে যায়। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো হলো বুকে ব্যথা, এরপর কথা বলতে না পারা, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বুকে আঁটসাঁট অনুভব করা। এ ধরনের সমস্যা হয়। হঠাৎ করে খুব ঘাম হয়, রক্তচাপ নেমে যায়, শেষ মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে যায়।
আর স্ট্রোকের যে সমস্যা, সেখানে প্রথমেই রোগীর মস্তিষ্কে তীব্র মাথাব্যথা থাকবে। রোগীর একটি অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায় অথবা খিঁচুনি হয়। তবে হার্ট অ্যাটাকের রোগী সাধারণত খিঁচুনি নিয়ে আসে না।

স্ট্রোকের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে করণীয়
স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। স্ট্রোক হয়েছে বোঝা গেলে দ্রুত রোগীকে কাছের হাসপাতালে নেওয়া জরুরি।

প্রশ্ন : স্ট্রোকের রোগীকে প্রাথমিকভাবে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়?
উত্তর : প্রাথমিক অবস্থায় আমরা রোগীকে প্রথমে পরীক্ষা করি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী অচেতন থাকে। কাছের আত্মীয়দের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়। জিজ্ঞেস করি, তার কী লক্ষণ ছিল? মাথাব্যথা হয়েছিল কি না বা বমি হয়েছিল কি না বা শরীরের কোনো একটি অংশ অবশ হলো কি না বা খিঁচুনি হলো কি না। এসব লক্ষণ দেখে আমরা সন্দেহ করি, তার স্ট্রোক হতে পারে।
এর পর খুব জরুরি একটি পরীক্ষা আমরা করি, সেটি হলো সিটিস্ক্যান। এখন এটি সহজলভ্য হয়ে গেছে। এখন শহরে তো আছেই, উপজেলা পর্যায়েও অনেক জায়গায় সিটিস্ক্যান মেশিন রয়েছে। সুতরাং সিটিস্ক্যান করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারি এটি কী ধরনের স্ট্রোক। স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি হলো ইসকেমিক স্ট্রোক, আরেকটি হেমোরেজিক স্ট্রোক। বাংলায় বলতে গেলে, রক্ত চলাচল বন্ধের জন্য একটি স্ট্রোক হচ্ছে, আরেকটি রক্তক্ষরণের কারণে স্ট্রোক হচ্ছে। তাই সিটিস্ক্যান করামাত্র আমরা সঙ্গে সঙ্গে কারণটা ধরতে পারি।
প্রশ্ন : কারণ ধরে ফেলার পরে আপনাদের পদক্ষেপ কী থাকে?
উত্তর : পরবর্তী পর্যায়ে আমরা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর প্রাথমিক যে চিকিৎসা, সেগুলো আমরা দিই। কিছু ওষুধপত্র থাকে। যদি ইসকেমিক স্ট্রোক হয়, রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে যদি হয়, তাহলে আমরা ওই রোগীদের সাধারণত অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ দিই। অ্যাসপিরিন এবং কিছু সেরিভাল ভেসোডায়ালেটার দিই। আর রক্তচাপ যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে, রক্তচাপের ওষুধ দেওয়া হয়। ডায়াবেটিস যদি বেশি পরিমাণে থাকে, তাহলে ডায়াবেটিসের ওষুধপত্র দিয়ে আমরা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা দিই।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন

স্ট্রোক দুই ধরনের—ইসকেমিক ও হেমোরেজিক। অনেক সময় হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারির পর কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়।

প্রশ্ন : সার্জারির পর আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?
উত্তর : তখন চর্বিজাতীয় খাওয়া-দাওয়া এড়িয়ে যেতে বলি। হার্টের চিকিৎসায় ডাক্তার সাহেবরা যেমন এসব কথা বলেন, তেমনি মস্তিষ্কের চিকিৎসায়, রক্তনালি সরু যেটি হচ্ছে, সেটি বড় করার জন্য লিপিট সমৃদ্ধ খাবার যেগুলো, চর্বিজাতীয় খাবার যেগুলো সেগুলো এড়িয়ে যেতে বলা হয়। যেমন—গরুর মাংস, খাসির মাংস, চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে বলা হয়। ব্যায়াম করতে বলা হয়। উচ্চ রক্তচাপ যদি থাকে, নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়। ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা মানতে পারলে এর ঝুঁকি থেকে বেঁচে যাওয়া সম্ভব।

No comments:

Post a Comment