মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করুন অনলাই‌নে

অনেক সাধনা করে মনের মতো নতুন মোটরসাইকেল কিনেছেন। কিন্তু যখনই বাইক রেজিস্ট্রেশনের ভোগান্তির কথা মনে পড়ে মুহূর্তের মধ্যেই সব আনন্দ বিষাদে বদলে যায়। বাইক রেজিস্ট্রেশনে কতদিন ঘুরতে হবে? কত টাকা বেশি খরচ করতে হবে? ভোগান্তি ছাড়া বাইক রেজিস্ট্রেশনের জন্য দালালকে দিয়ে কাজ করালেই বা কেমন হয়? এমন অদ্ভূত চিন্তা করে অধিকাংশ নতুন বাইকারই নিজেদের মধ্যে অজানা শঙ্কা নিয়ে রাতের ঘুম হারাম করেন। সাধের মোটরসাইকেলটি কিনলেন, কিন্তু এটা সড়কে নামানোর বৈধতা নিয়ে পড়েন বিড়ম্বনায়। আবার দালাল খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত টাকা খসাতে হয় পকেট থেকে।

দালালের নয়, আপনার বাইকের রেজিস্ট্রেশন আপনি নিজেই করুন! এখানে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) ঢাকার মিরপুর-অংশের চিত্র তুলে ধরা হলো।

প্রথম ধাপ:

যে কোম্পানি বা শোরুম থেকে মোটরসাইকেলটি কিনছেন, তাদের থেকে কেনার সময়টাতেই টাকা জমার রশিদ, গাড়ির চেসিস নম্বর ও ইঞ্জিন নম্বর লেখা গেটপাশ এবং গাড়ির ওয়ারেন্টি কাগজ অবশ্যই যাচাই করে নেবেন।

এরপর সেই কোম্পানির সাথে সবসময় যোগযোগ রেখে গাড়ির বাকি কাগজপত্র খুব দ্রুতই সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। যেমন: চালানপত্র, আমদানিসংক্রান্ত কাগজপত্র, ব্যাংকের ট্রেজারি চালান, কাস্টমসসংক্রান্ত কাগজগুলো কোম্পানি কর্তৃক সত্যায়িত কি না নিশ্চিত হয়ে সেগুলো সংগ্রহ করুন। তবে কাগজ সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে আপনার ছবি, ভোটার আইডি ও বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি লাগবে। যেগুলো গাড়ি কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সত্যায়িতি করে দেবে।

দ্বিতীয় ধাপ:

টাকা জমার রশিদ, গেট পাস হাতে পাওয়ার পরপরই আপনার ভোটার আইডি কার্ড ও বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি যোগ করে বিআরটিএ’তে গিয়ে ওখানকার ব্রাক ব্যাংকে আপনার গাড়ির সিসি অনুযায়ী বিআরটিএ থেকে ধার্যকৃত টাকা জমা দিয়ে টাকা জমার রশিদ (দুটি:- একটি হালকা সবুজ ও দ্বিতীয়টি নীল) সংগ্রহ করতে হবে। অথবা আপনার গাড়ির সব কাগজ-পত্র হাতে পাওয়ার পরও টাকা জমা দিতে পারেন।

তৃতীয় ধাপ:

এবার ভোগান্তি এড়াতে দালালের চিন্তা হয়তো আপনার মাথায় উঁকি দিতে পারে। দালালের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আপনি নিজেই আপনার গাড়ির সব কাগজ নিয়ে বিআরটিএতে যান। তবে সচেতন মানুষ হিসেবে প্রতিটা কাগজেরই একাধিক ফটোকপি বা সেট সাথে রাখবেন। ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার রশিদের নীল কপিটা মূল কাগজের সাথে যুক্ত করুন, আর হালকা সবুজ বর্ণ বা মূল রশিদটা আপনার কাজে ডকুমেন্টস হিসেবে সব সময় রাখুন।

মোটরসাইকেল ও সেটার সব কাগজ সাথে নিয়ে প্রথমে এক নম্বর ভবনের ১০২ নম্বর রুমে মোটরযান পরিদর্শক রোকনুজ্জামানের (বর্তমানে) কাছে যাবেন। তিনি আপনার বাইকের চেসিস নম্বর ও ইঞ্জিন নম্বর দেখে আপনার গাড়ি কি না তা নিশ্চিত করবেন এবং গাড়ি পরীক্ষার পর (ক্লিয়ারেন্স) পরবর্তী ধাপের জন্য স্বাক্ষর দিয়ে আপনাকে একই ভবনের ২০৭ নম্বর রুম বা সংশ্লিষ্ট রুমে পাঠাবেন।

২০৭ নম্বর রুমে সহকারী পরিচালক শামসুল কবীরের (বর্তমানে) সই নেবেন। ওখান থেকে আপনাকে একই ভবনের ৩০৪ অথবা ৩১৪ নম্বর  রুমে পাঠাবে। ৩০৪/ ৩১৪ নম্বর রুম থেকে আপনাকে ৩০১ নম্বর রুমে বিআরটিএ’র মোটরযান পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলামের (বর্তমান) কাছে স্বাক্ষরের জন্য পাঠাবে।

তবে খেয়াল রাখবেন, আপনার সেই কাগজে তিন কপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি লাগানোর পরই রিয়াজুল ইসলামের স্বাক্ষর পাবেন। তাই পাসপোর্ট ও স্ট্যাম্প সাইজের পর্যাপ্ত ছবি সাথে করে নিতে ভুলবেন না।

রিয়াজুল ইসলামের কক্ষ থেকে পুনরায় ৩০৪/৩১৪ নম্বর রুমে যাবেন। সেখানে আপনার সব কাগজ জমা নিয়ে নিবে এবং আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষায় রাখবে। হতে পারে ভিড় বুঝে দুই একদিন সময়ও নিতে পারে। এই সময়টাতে তারা আপনার নাম বিআরটিএ’তে লিপিবদ্ধ করবে।

আপনার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়ে গেলে আপনাকে পুনরায় ২০৭ নম্বর রুমে শামসুল কবিরের কাছে পাঠানো হবে, সেখানে তিনি আপনার কাগজ যাচাই করে আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর বিআরটিএ সার্ভারে নির্দিষ্ট করে দিবে। কাজ শেষে আবারো ৩০৪/৩১৪ নম্বর রুমে যাবেন। এরপর তারা আপনাকে রেজিস্ট্রেশন নম্বরপত্র ও কর পরিশোধ সনদপত্র প্রিন্ট করে আপনার হাতে দেবে। যেখানে আপনি গাড়িতে ব্যবহারের জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবেন।

চতুর্থ ধাপ:

এরপর ডিজিটাল ব্লু-বুকের (স্মার্ট কার্ড) জন্য ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সেকশনে যোগাযোগ করুন। তারাই আপনাকে ডিজিটার রেজিস্ট্রেশনের নির্দষ্ট সময় জানিয়ে দেবে। ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের সময় টাকা জমার রশিদ, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও কর পরিশোধ সনদের কাগজ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে রাখুন। সব কাগজপত্র সঠিক পেলে ওইদিনই আপনার স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হবে। ওখান থেকেই আপনাকে পরবর্তী সময় জানিয়ে দেয়া হবে।

পঞ্চম ধাপ:

আপনার ডিজিটাল ব্লু-বুক (স্মার্ট কার্ড) ও ডিজিটাল নম্বর প্লেট তৈরি হয়ে গেলে বিআরটিএ থেকে আপনার মোবাইলে ডেলিভারি তারিখের এসএমএস পাঠানো হবে। সেই তারিখে আপনি বিআরটিএতে গিয়ে যোগযোগ করলেই স্মার্ট কার্ড ও ডিজিটাল নম্বর প্লেট পেয়ে যাবেন।

ডিজিটাল নম্বর প্লেটের জন্য আপনার রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে NP লিখে ৬৯৬৯ নম্বরে এসএমএস করুন। বিআরটিএর পক্ষ থেকে ফিরতি এসএমএসে আপনাকে নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেয়া হবে।

No comments:

Post a Comment