ডায়রিয়া নিয়ে ভুল ধারণা

বন্যাকবলিত বাংলাদেশে ডায়রিয়া হলে সব বয়সের রোগীদের সবার আগে যে জিনিসটি দিতে হবে, তা হচ্ছে খাবার স্যালাইন। কারণ, ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এতে শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। এই পানিস্বল্পতা চরম আকার ধারণ করে রোগীর মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।

ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বারবার পাতলা পায়খানা করবে, এটিই রোগের প্রথম উপসর্গ। বারবার পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণে শরীরে যে পানিস্বল্পতার সৃষ্টি হবে, তা পূরণের জন্যই খেতে হবে খাবার/ওরাল স্যালাইন। পাশাপাশি ডাবের পানি, গুড়ের শরবত, চিড়ার পানি, ভাতের মাড় ইত্যাদিও খাওয়া উচিত। আর স্বাভাবিক খাবার তো চলবেই। কিন্তু অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে তরল খাবারগুলো এড়িয়ে চলেন এবং শুকনো খাবার খেয়ে থাকেন। তাঁদের ধারণা, তরল খাবার খেলে বারবার পায়খানা হবে। বিষয়টি এমন যেন তরল খাবার বন্ধ রাখলে ডায়রিয়া সেরে যাবে। আসলে ডায়রিয়া জীবাণুঘটিত রোগ। এই জীবাণু শুকনো খাবারে দমন হয় না বা তরল খাবারে উদ্দীপ্ত হয় না। এ ছাড়া কয়েক দিনের মধ্যে ডায়রিয়া এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। সুতরাং ডায়রিয়া চলাকালীন শরীরে লবণ ও পানির স্বল্পতা পূরণ করতে পারলেই ডায়রিয়াজনিত ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া ডায়রিয়ায় ব্যবহৃত অধিকাংশ ওষুধ কাজ করে না অথবা ক্ষতি করে (সূত্র স্বাস্থ্য তথ্য)।

কাজেই ডায়রিয়াজনিত পানিস্বল্পতা রোধ করতে রোগীকে তরল খাবার দিতে হবে। যেহেতু পানিস্বল্পতা পূরণের অন্যতম উপায় হচ্ছে খাবার স্যালাইন গ্রহণ, তাই খাবার স্যালাইন গ্রহণের পাশাপাশি অবশ্যই রোগীকে তরলজাতীয় খাবার দিতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে এর আগে বুকের দুধ দিয়ে থাকলে সেটিও অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া স্বাভাবিক খাবার যা প্রতিদিন আমরা খাই, তা নিয়মিত খেতে হবে।
খাবার স্যালাইন, তরল খাবার ও স্বাভাবিক খাবার—এ সবকিছু মিলিয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী শরীরের পানিস্বল্পতা কাটিয়ে উঠবে এবং স্বাভাবিক পুষ্টি পেয়ে সুস্থ-সবল হয়ে উঠবে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী অনেক সময় বমি করতে পারে। বমি হলেও অনেকে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ রাখেন। এটি করাও ঠিক নয়। ডায়রিয়া রোগীর বমি হলে ১০/১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধীরে ধীরে আবার খাবার স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বমি যদি খুব বেশি হতে থাকে, তাহলে রোগীর শরীরের পানিস্বল্পতা শিরাপথে স্যালাইন প্রয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কাজেই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে তরল খাবার দেওয়া যাবে না—এ কথা একেবারেই ভুল; বরং উল্টোটিই অধিক সত্য যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে বেশি পরিমাণে তরল খাবার দিতে হবে। তবে তরল খাবারের মধ্যে খাবার স্যালাইন বেশি পরিমাণে দেওয়া ভালো। আর একই সঙ্গে সব স্বাভাবিক খাবারই তখন রোগীকে দেওয়া উচিত।

শিশুর বয়স ছয় মাস হলে চাল বা গমের সঙ্গে ডাল ও শাকসবজি মিলিয়ে খিচুড়ি দেওয়া যেতে পারে। টক দই ও ফলমূল ডায়রিয়া আক্রান্তের জন্য উপকারী। তবে শিশুকে যে খাবারটা দিতে হবে, তা হবে টাটকা। আর শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ালে ডায়রিয়া তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
সুতরাং ডায়রিয়া হলে তরল খাবার কিংবা স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করে দিলে অবস্থার উন্নতি না হয়ে দ্রুত অবনতি ঘটবে। এই কথা শুধু ডায়রিয়ার বেলায় নয়, সাদা আমাশয়, রক্ত আমাশয়ের বেলায়ও প্রযোজ্য। তবে আমাশয়ের ক্ষেত্রে প্রকারভেদে ওষুধও সেবন করতে হয়। কিন্তু খাবার-দাবার স্বাভাবিকই খেতে হবে। খেতে হবে তরল খাবার, প্রাধান্য পাবে খাবার স্যালাইন।

ডা. সজল আশফাক 
সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।

No comments:

Post a Comment