‘ব্লু হোয়েল’ (গেম) আসলে কী? Blue Whale

কী এমন মরণনেশার খেলা ‘ব্লু হোয়েল’ যা শত শত মেধাবী ‌কি‌শোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীর প্রাণ কেড়ে নেয়! কোথায় এর উৎপত্তি? এই প্রাণঘাতী গেম খেলে এ পর্যন্ত কত কিশোর-কিশোরী প্রাণ হারিয়েছে?

অনলাইন সুইসাইড গেম ‘ব্লু হোয়েল’। একে বলা হয় "ব্লু হো‌য়েল গেম বা ব্লু হোয়েল চ্যালেন্জ" ইং‌রে‌জি‌তে "The Blue Whale Game" অথবা "Blue Whale Challenge"। এই গেমের ৫০টি ধাপ।  সর্বশেষ ধাপ বা পরিণতি হ‌চ্ছে আত্মহত্যা। ব্লু হোয়েলের লেভেল ও টাস্কগুলো ভয়ঙ্কর।  গেম যত এগোবে টাস্ক তত ভয়ঙ্কর হতে থাকবে। 

প্রথমদিকের টাস্কগুলো মজার হওয়ায় সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে কিশোর-কিশোরীরা।  কেউ খেলায় ইচ্ছুক হলে তার কাছে পৌঁছে যায় নির্দেশাবলি।  সেইমতো নির্দেশ বা চ্যালেঞ্জগুলো একে একে পূরণ করে তার ছবি পাঠাতে হয় গেম হ্যান্ডলারকে। 

জানা গেছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় এই প্রাণঘাতী গেম।  প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দু’বছর পরে।  প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে যেন আত্মহত্যার জন্যই।  সেই থেকেই এই গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল বা নীল তিমি’। 

প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা।  তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি।  একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়। অ‌নেকটা একা ও নিভৃ‌তে থাক‌তে হয়। চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদকসেবনও রয়েছে। 

গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ঙ্কর হতে থাকে টাস্কগুলো।  এই টাস্কগুলোতে অংশগ্রহণের পর সেই ছবি পোস্ট করতে হয় এর গেমিং পেজে।  প্রতিযোগিতার একেবারে শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ ৫০তম টাস্কের শর্তই হলো মৃত্যু। 

ফিলিপ বুদেকিন নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত রাশিয়ার এক মনোবিজ্ঞানের ছাত্র দাবি করে সেই এই গেমের আবিষ্কর্তা।  রাশিয়ায় অন্তত ১৬ জন কিশোর-কিশোরী এই গেমে অংশ নিয়ে আত্মহত্যা করার পরে বুদেকিনকে গ্রেফতার করা হয়। 

বুদেকিন তার দোষ স্বীকার করে নিয়ে বলেছে, যেসব ছেলেমেয়ের সমাজে কোনো দামই নেই, তাদেরকেই সে আত্মহত্যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে ‘সাফ’ করতে চেয়েছিল। 

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কয়েকশ’ কিশোর-কিশোরী এই গেম খেলতে গিয়ে ইতিমধ্যেই আত্মহত্যা করেছে।  ভারতেও মারা গেছে বহু সংখ্যক। শেষ পর্যন্ত এটা হানা দিয়েছে বাংলাদেশেও। 

কেন এ ধরনের ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে ওঠে কিশোর-কিশোরীরা? মনোবিদরা বলছেন, ‘ওই বয়সটা এমন যে তখন একটা ডেয়ার-ডেভিল কিছু করে দেখানোর ইচ্ছেটা প্রবল হয়।  তবে যারা এরকম গেম বেছে নিচ্ছে, তাদের মনে হতাশা, আত্মমর্যাদার অভাব, মনোকষ্ট- এগুলো থাকেই।  সেজন্যই তারা এমন একটা কিছু করে দেখাতে যায়, যাতে লোকে তাদের অকুতোভয় বলে মনে করবে। ’

ব্লু হোয়ে‌লের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের খোঁজে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে #ব্লুহোয়েলচ্যালেঞ্জ কিংবা #আইঅ্যামহোয়েল লিখে পোস্ট করলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নেয়।
মাঝপথে কেউ খেলা ছাড়তে চাইলে তা কেউ পা‌রে না। কারণ মুহূ‌র্তেই তার বি‌ভিন্ন তথ্য ব্লু হো‌য়ে‌লের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের হা‌তে চ‌লে যায়। এসক তথ্যকে ভি‌ত্তি ক‌রে ব্ল্যাকমেল করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এমনকি প্রিয়জনদের ক্ষতি করার হুমকি দেয় তারা। 

এই গেমিং অ্যাপ মোবাইলে একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে তা আর কোনোভাবেই মুছে ফেলা সম্ভব নয়।  শুধু তাই নয়, ওই মোবাইলে ক্রমাগত নোটিফিকেশন আসতে থাকে যা ওই মোবাইলের ইউজারকে এই গেম খেলতে বাধ্য করে। 

No comments:

Post a Comment