সম্ভাবনাময় যে ব্যবসা আপনি শুরু করতে পারেন- ১

প্রথমআ‌লো: আমি কিছু ছোট ব্যবসা, যা নারী-পুরুষ উভয়ই করতে পারেন, তার ওপর ধারাবাহিক লিখব। যার প্রথম পর্ব এটি। আপনাদের কারও উপকারে আসলে ভালো অনুভব করব।

ধরুন আপনি একজনকে ভালোবাসেন। তার জন্য আপনি সবকিছু করতে পারেন। সবকিছু ছাড়তে পারেন। এমনকি আপনি আপনার জীবনও বাজি ধরতে পারেন। এটার অর্থ এই নয় যে, আপনি সকলের জন্য এমনটি করতে পারেন। এটা আপনি করতে পারেন শুধু তার জন্য, যাকে আপনি ভালোবাসেন।
অনেকে বলেন আমি ব্যবসা করব। ব্যবসা আমি ভালোবাসি। চাকরিবাকরি আমার ভালো লাগে না। কিন্তু তিনি জানেন না আসলে তিনি কি করতে চান। ব্যবসা তো হাজার হাজার আছে। সব ব্যবসা করতে কি আপনার ভালো লাগবে? সব ব্যবসা করতে কি আপনি জীবন বাজি ধরতে পারবেন? সব ব্যবসা কি আপনার চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে মিলে যাবে?
আগে ঠিক করুন আসলে আপনি কি ভালোবাসেন। কি করতে আপনি নিজকে প্রস্তুত করছেন? সে কাজটা যত ছোটই হোক না কেন, আপনার লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ঠিক থাকলে, কাজের প্রতি আপনার ভালোবাসা আর পরিশ্রম আপনাকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছাবে। যদি এমন কিছু না থাকে তাহলে নিজেকে নিয়ে একটু গবেষণা করুন। দেখুন কি করতে আপনার ভালো লাগে কিংবা কি করতে ভালো লাগে না।
এমন কিছু আছে যে, অন্য কেউ কাজ করে আর আপনি সেটার প্রতি আসক্ত। মনে মনে ভাবেন আমি যদি করতে পারতাম। তাহলে তার ওপরই পরিকল্পনা করুন, প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আবার এমনটিও করতে পারেন—২৫টি ব্যবসার তালিকা করুন। এর থেকে আপনার পছন্দের পাঁচটি বাছাই করুন। এই পাঁচটির ভালো ও মন্দ উভয় দিক একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করুন। এরপর দেখুন কোনটি আপনার পছন্দ ও সামর্থ্যের (মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক) সঙ্গে মিলে যায়। সেটি করার জন্য প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। সব সময় অভিজ্ঞ পরামর্শকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
এই ধারাবাহিকে আমি চেষ্টা করব সম্ভাবনাময় কিছু ব্যবসার আলোচনা করতে। প্রতি ব্যবসার জন্য আপনার নির্দিষ্ট দক্ষতা প্রয়োজন হবে। প্রতিটি ব্যবসাতেই আপনার কিছু প্রযুক্তির সমন্বয় প্রয়োজন হবে। যদি দেখেন যে ব্যবসাগুলো ইতিমধ্যে অন্য কেউ শুরু করেছেন, তাহলেও আপনার জন্য ভালো যে, আপনি প্রতিযোগিতা করে বাজার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক আজকের পর্ব। আজকের পর্বে থাকছে স্বাধীন (Independent) ইভেন্ট প্লানিং ব্যবসার ওপর আলোচনা।

প্রথম পর্ব

১। স্বাধীন ইভেন্ট প্ল্যানার (Independent Event Planner)
দিন যতই যাচ্ছে মানুষের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে, নারী-পুরুষ উভয়ইকেই ঘরে ও বাইরে ঘরের কাজ, অফিসের কাজ ও ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তাই বলে ছোটখাটো উপলক্ষগুলো তো আর থেমে থাকতে পারে না। এই ধরুন ছেলেমেয়ের জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী, বোনের গায়েহলুদ, অফিসের পার্টি, নতুন পণ্যের প্রচার, বিভিন্ন ধরনের পুনর্মিলনীর জন্য আপনিই হতে পারেন তাদের একমাত্র ভরসা। এ জন্য আপনাকে হতে হবে পেশাধারী। উন্নত দেশে ইভেন্ট প্লানিংয়ের জন্য লাইসেন্সিং ও সার্টিফিকেট ব্যবস্থা আছে, যাতে আপনি পেশাধারী হতে পারেন। দেশে যদি এরকম কোনো কোর্স থাকে তবে করে নিতে পারেন। যদি না থাকে তবে ইভেন্ট প্ল্যানিংয়ের ওপর কিছু বই পড়তে হবে। আপনার প্রধান কাজ হবে পরিকল্পনা, ডিজাইন, সমন্বয় ও সম্পাদন করা।
একটা উদাহরণ দিই। আমি নিউইয়র্ক থেকে ঠিক করলাম, আগামী নভেম্বরে ঢাকাতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপর দুই দিনের একটা ওয়ার্কশপ করব। আমি গুগল করে আপনার ওয়েবসাইট/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দেখলাম আপনি একজন পেশাধারী ইভেন্ট প্ল্যানার। আমি আপনাকে আমার চাহিদা জানলাম যে, আমার বাজেট এক লাখ টাকা। দুই দিন ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ওয়ার্কশপ হবে, ২০০ লোকের ব্যবস্থা থাকতে হবে, হল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে, প্রজেক্টর, হোয়াইট বোর্ড থাকতে হবে, ফ্রি পানি ও রিফ্রেশমেন্ট থাকতে হবে ইত্যাদি। আমি এও বললাম যে, আমার আমন্ত্রিত অতিথিদের নিমন্ত্রণপত্র পাঠতে হবে এবং তাদের উপস্থিতি নিতে হবে।
একজন পেশাধারী ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে আপনার অবশ্যই এগুলোর সঙ্গে সংযোগ থাকবে। আপনি সেমিনার রুম ভাড়া করলেন, খাবারের ব্যবস্থা করলেন, নিমন্ত্রণপত্র পাঠালেন এবং দুই দিনের সেমিনারটি তদারকি করলেন। সবকিছুর খরচ সর্বমোট এক লাখ টাকা হলো। এবার আপনার ফি। এটা আপনি দুইভাবে করতে পারেন। একটা হলো মোট খরচের ওপর নির্দিষ্ট হারে (সাধারণত ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে) ফি। যদি আপনার ফি মোট খরচের ১৫ শতাংশ হয় তবে এ ক্ষেত্রে আপনার ফি হবে ১৫ হাজার টাকা। তা ছাড়া ইভেন্ট অনুসারেও আপনি ফি ধার্য করতে পারেন তবে শতাংশ হারে ফি হলো স্ট্যান্ডার্ড। এটা হলো একটা উদাহরণ। ফি নির্ধারণ হলো সম্পূর্ণ আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপর।

আপনার বাজার কোথায়?
ইভেন্ট প্ল্যানারের জন্য দুটি বড় বাজার। ১) করপোরেট, ২) সামাজিক/ব্যক্তিগত।
করপোরেট ইভেন্ট যেমন ফান্ড রাইজিং পার্টি, পণ্য প্রমোশন, সেমিনার, এজিএম, কনফারেন্স, মিটিং, অফিস পার্টি, অ্যাপ্রিশিয়েসন পার্টি, সেলিব্রেশন পার্টি ইত্যাদি।
সামাজিক ইভেন্ট যেমন, জন্মদিন, বার্ষিকী, পুনর্মিলনী, গায়েহলুদ, বিয়ে, হোম পার্টি ইত্যাদি।

আপনি কি করবেন?
একজন পেশাধারী ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে আপনার প্রধান কাজ হবে পরিকল্পনা, ডিজাইন, সমন্বয় ও সম্পাদন করা।
—প্রপোজাল জমা (কোনো কোনো সময় কাজ পাওয়ার জন্য প্রপোজাল জমা দিতে হয়)।
—পরিকল্পনা করতে হবে (Research, Design, Plan)
—সাইট নির্বাচন করতে হবে।
—খাবার ও আনন্দ ব্যবস্থা।
—ট্রান্সপোর্টেশন।
—নিমন্ত্রণপত্র প্রেরণ।
—আমন্ত্রিতদের থাকার ব্যবস্থা।
—সমন্বয়।
—সাইট তদারকি।
—মূল্যায়ন নেওয়া (যদি দরকার হয়)।
—অন্যান্য।

শুরু করতে কেমন খরচ
এ ব্যবসাটি মূলত শহরকেন্দ্রিক। যেকোনো বিভাগীয় শহরে শুরু করা যায়। খরচ নির্ভর করে আপনি কোথায় ব্যবসাটি শুরু করবেন তার ওপর। শুরুতে অফিসের প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই করতে পারেন। নিজকে প্রস্তুত করার জন্য (কোর্স, ট্রেনিং ও সার্টিফিকেশন) বিজনেস কার্ড, ব্রোশিয়ার, ওয়েবসাইটের জন্য খরচ হবে। কিন্তু এসব করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। আগে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করে নিন। ছোট থেকে শুরু করুন। ছোট ছোট ইভেন্ট করলে বড় ইভেন্ট করার সাহস হবে। বিজনেস কার্ড, ব্রোশিয়ার, ওয়েবসাইট করার জন্য একজন কনটেন্ট লেখকের সাহায্য নেবেন। কারণ এসবই হলো আপনার ব্যবসার সেলস, মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং পণ্য। শুরুতে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার দরকার নেই। ইভেন্টভিত্তিক কাউকে প্রয়োজনে নিতে পারেন। যোগাযোগ, মার্কেটিং ও প্রমোশনের জন্য কিছু খরচ আছে। কিন্তু প্রথম দিকে এগুলো নিজেরটা নিজে করবেন।

পেশাদারিত্ব
ব্যবসায়িক মন মানসিকতা থাকতে হবে। সততা, দায়বদ্ধতা ও গ্রাহক সেবার মন মানসিকতা যদি না থাকে তবে ব্যবসা থেকে দুরে থাকাই উত্তম। আপনার পেশাদারিত্ব আপনার জন্য ব্র্যান্ড হিসেবে কাজ করবে।
এখানে অনেক কিছু জড়িত। যেমন কীভাবে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করবেন। কী কী ধাপে একটি ইভেন্ট সম্পন্ন করবেন। কীভাবে সেলস ও বাজারিকরণ করবেন। বিজনেস কার্ড, ব্রোশিয়ার, ওয়েবসাইট করতে কী কী টেকনিক অবলম্বন করবেন। কীভাবে ইভেন্ট প্রপোজাল তৈরি করবেন। কীভাবে লিড জেনারেট করবেন। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসাটি করতে আগ্রহী হন তবে ইমেইল করবেন। আমি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে চেষ্টা করব।

আপনার ব্যবসায়ের যাত্রা শুভ হোক, সকলের জন্য শুভকামনা।
(চলবে)

আ হ ম করিম: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
ইমেইল: za19@outlook.com

No comments:

Post a Comment