রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলো

সকাল ৯টায় অফিস। চলে রাত ৯টার পরেও। উন্নতি করতে হবে। গাড়িও তো চাইই চাই! সেই সঙ্গে বছরে একবার বিদেশ ভ্রমণ না করলে ফেসবুক প্রোফাইলটা কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগে। তাই তো ১২ কেন, ১৪ ঘন্টা কাজ করতে হলেও ক্ষতি নেই। মাইনে মাত্রা ছাড়ালেই খুশি! এমন ভাবনাতে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে দেল এক অসম লড়াইয়ে নেমে পড়ছে বিশ্বের তাবড় যুব সমাজ। ফলে একদিকে বাড়ছে ওবেসিটি, মানে ওজন। সেই সঙ্গে স্ট্রেস লেভেল হাতের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে বাড়ছে রক্তচাপ। ফলে ফাটছে শিরা, মরছে হার্ট।
পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশেও কম বয়সিরা হার্ট অ্যাটাকের কারণে মারা পড়ছেন। আর হার্টের এমন করুন অবস্থার পিছেন দায়ি থাকছে ব্লাড প্রেসার।
এখানেই শেষ নয়, বেশ কিছু গবেষণায় এও দেখা গেছে যে কম বয়স থেকেই রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে এক সময়ে গিয়ে শুধু হার্ট নয়, শরীরের একাধিক অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। ফলে সময়ের আগেই নিভতে শুরু করে জীবন বাতি। আর সবথেকে ভয়ের বিষয় হল, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার পরেও অনেক বুঝতেই পারেন না যে তাদের শরীরের অন্দরে এমন ক্ষতি হয়ে চলেছে। ফলে দিনে দিনে শরীর এতটাই ভেঙে যায় যে, একটা সময়ে গিয়ে আর কিছুই করার থাকে না। তাই তো সময় থাকতে থাকতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। না হলেই খেল খতম!
এখন প্রশ্ন হল, এমন জীবনযাত্রার মাঝেও ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক রাখবেন কিভাবে? এক্ষেত্রে কতগুলি ঘরোয়া পদ্ধতি দারুন কাজে আসতে পারে। ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে সাধারণত যে যে প্রকৃতিক উপাদানগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল...

১. আদা-এলাচ চা
২০০৯ সালে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োফিজিকসে প্রকাশিত এক স্টাডি অনুসারে এই দুটি প্রাকৃতিক উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো চা যদি প্রতিদিন খাওয়া যায়, তাহলে ব্লাড প্রেসার তো কমেই। সেই সঙ্গে সারা শরীরে রক্তের প্রবাহে উন্নতি ঘটে। ফলে হার্টের পাশাপাশি শরীরের প্রতিটি অঙ্গ চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

২. তরমুজ খাওয়া শুরু করুন
এই ফলটিতে উপস্থিত সিট্রলাইন নামে একটি উপাদান ব্লাড ভেসেলকে প্রসারিত করে দেয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই রক্তচাপ কমতে শুরু করে। তাই তো শুধু গরমকালে নয়, সারা বছর ধরেই তরমুজ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।

৩. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার
দা ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজি-তে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে এই ভিটামিনটি শরীরে প্রবেশ করার পর ব্লাড প্রেসার চোখে পড়ার মতো কমে যায়। সেই কারণেই তো বয়স ২৫ পেরলেই প্রতিদিন মাছ, দুধ, দই, মাখন এবং ডিমের মতো ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৪. হার্বাল চা
ফুল এবং আরও সব প্রকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হার্বাল চা আজকাল প্রতিটি বাজারেই পাওয়া যায়। এই ধরনের চা দিনে ২-৩ কাপ খেলে রক্তচাপ নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না। একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে হার্বাল চায়ে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি শিরা এবং ধমনীর কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ কমতে শুরু করে।

৫. অর্জুন গাছের ছাল
অর্জুন গাছের ছাল যদি প্রতিদিন গ্রহণ করা যায়, তাহলে শুধু রক্তচাপ কমে না, সেই সঙ্গে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট ফেলিওর এবং হাই কোলেস্টরলের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে।

৬. ডার্ক চকোলেট
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণা অনুসারে ডার্ক চকোলেটে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড নামে একটি উপাদান শুধু ব্লাড প্রেসার কমায় না, সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো প্রতিদিন এক টুকরো করে ডার্ক চকোলেট খেলে দারুন উপকার মেলে।

No comments:

Post a Comment