বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ‘লম্বা হউন’, ‘লম্বা হতে চান’ জাতীয় বিজ্ঞাপন অনেকেরই চোখে পড়ে থাকবে। আর যাঁরা খাটো বা বেঁটে ধরনের তাদের তো এ ধরনের বিজ্ঞাপন রসগোল্লার মতো লুফে নেওয়ার কথা।
এ জাতীয় বিজ্ঞাপন বিভিন্ন জাতীয় পত্রপত্রিকায় বছরের পর বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এসব চটকদার বিজ্ঞাপনের ভাষায় আরো কিছু কথা থাকে। সেগুলো হচ্ছে- মাত্র কয়েক মাসে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হওয়ার প্রতিশ্রুতি। লম্বা হওয়ার এই পদ্ধতিটি ডাকযোগে সহজেই সংগ্রহ করা যায়। ফেরত খাম ও ডাকটিকিটসহ লিখলেই কয়েকশ টাকা পাঠানোর অনুরোধ আসে। টাকা পাঠালেই লম্বা হওয়ার তথাকথিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সমৃদ্ধ বই হয়তো ডাকযোগে হাতে পৌঁছে যায়। কী থাকে এই বইয়ে? তাতে থাকে কিছু অসম্ভব ধরনের ব্যায়াম। একজন সাধারণ লোকের জন্য এই ব্যায়াম অভ্যাস করা দুঃসাধ্যই বলা যায়। লম্বা হওয়ার আশা নিয়ে মানুষ এসব বিজ্ঞাপনের পেছনে ছোটে এবং প্রতারিত হয়।
প্রকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নামে এটি প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। মানুষের মেরুদণ্ডের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান রয়েছে। নির্দিষ্ট সেই অবস্থান থেকে কশেরুকা বা ভার্টিব্রা সরে গেলে তার পরিণতি হয় মারাত্মক। অথচ তথাকথিত সেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সেই মারাত্মক পরিণতিকেই লম্বা হওয়ার পদ্ধতি হিসেবে তুলে ধরা হয়। এ রকম একটি অস্বাভাবিক ও অসম্ভব পদ্ধতিকে কখনোই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা যায় না।
মানুষ সাধারণত বংশগতভাবেই বেঁটে হয়ে থাকে। এ ছাড়া আরো অনেক অসুস্থতা এবং পরিস্থিতি রয়েছে যে কারণে মানুষ বেঁটে হয়। লম্বা হওয়ারও একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে। সাধারণভাবে পুরষরা ২১ বছর এবং নারী ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত লম্বা হয়। বাৎসরিক এই বৃদ্ধির হার ৯/১০ বছর থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বেশি থাকে। নির্দিষ্ট সেই বয়সসীমার পর কোনোভাবেই লম্বা হওয়া সম্ভব নয়। বংশগত ও ক্রোমোজোমাল অ্যাবনরমালিটির কারণে বেঁটে হয়ে থাকলে চিকিৎসার মাধ্যমে সেটি সরানো সম্ভব। কিন্তু এই চিকিৎসাও লম্বা হওয়ার নির্দিষ্ট বয়সসীমার আগেই করতে হবে।
বেঁটে হওয়ার কারণ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা রয়েছে। এ বিষয়ে একজন এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের কাছে যান। বেঁটে হওয়ার নিরাময়যোগ্য কারণ থাকলে তা ঠিক করে নিলেই লম্বা হওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে।
ডা. সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
No comments:
Post a Comment