হত্যা, ধর্ষণ, অবিচার নির্যাতনে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির প্রতি সামান্য সহানুভূতিও দেখা গেলো না, গণতন্ত্রের ধ্বজাধারি ভারতের মোদী সরকারের পক্ষ থেকে। বরং বার্মিজদের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতি পরিষ্কার সাফাই গাইলো।
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে এসে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। বাংলাদেশ সেই শুরু থেকেই স্বল্প সম্পদ ও মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিও উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এখন পর্যন্ত কিছু দেশ ও সংস্থা এ আহ্বানে সাড়া দিলেও বাংলাদেশের প্রিয় বন্ধু ও প্রতিবেশী, ভারত কোন কর্ণপাতই করেনি। উল্টো এবার মায়ানমার সফরে গিয়ে মোদি রোহিঙ্গাদের প্রতি আরও নির্যাতনের সার্টিফিকেট দিয়ে এসেছে!
সাম্প্রতিক প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণে শত শত নিরপরাধ রোহিঙ্গা জনগণ নিহত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, অসহায় নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, বেসামরিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা ও আটক করা হচ্ছে, এমনকি বৃদ্ধ ও অবুঝ শিশুদেরও হত্যা করা হচ্ছে। সীমান্তে ভূমি মাইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বেশি আতংকের বিষয় হলো, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকেও এসব এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। যার ফলে দারিদ্র পীড়িত ও ভষ্মিভূত এসব এলাকায় মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে।
শুধুমাত্র কয়েকদিনেই এক লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশী মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মৃত্যুর মুখে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুদের এই ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও অভিবাসন থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি দিনকে দিন আরো শোচনীয় হচ্ছে।
নতুন করে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মাঝে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার থেকে মায়ানমার সফর করছেন। তার সফরের সময় যত এগিয়েছে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা বিরোধী কথাবার্তাও ততোবেশি শোনা গেছে।
২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের বেশ কটি পুলিশ ফাঁড়িতে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত সবসময় মায়ানমারের পাশে থাকবে।’ খবর বিবিসির।
তারও আগে ভারতের বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজু ঘোষণা করেন, ভারতে বসবাসরত ৪০ হাজার রোহিঙ্গার সবাইকে বহিষ্কার করা হবে। যদিও ভারতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৬০০০ জাতিসংঘ নিবন্ধিত শরণার্থী, তবুও রিজুজু বলেন, ‘জাতিসংঘের নিবন্ধনের কোনো অর্থ নেই। আমাদের কাছে ওরা সবাই অবৈধ।’
সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক, যিনি বর্তমানে মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনে রয়েছেন, বলছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের ঠিক আগে দিল্লির পক্ষ থেকে এসব বক্তব্য বিবৃতির মূল্য উদ্দেশ্য বৌদ্ধ অধ্যুষিত মায়ানমারের সাথে অধিকতর ঘনিষ্ঠতা। সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজদের রোহিঙ্গা বিরোধী কট্টর মনোভাবের সাথে একাত্ম হতে চাইছে ভারত। ভৌমিক বলছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে চীনের মৌনতার সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি সরকার।
সুবীর ভৌমিক বলছেন, ভারতের মূল উদ্দেশ্য মায়ানমারে চীনের প্রভাব বলয়ে ফাটল ধরানো।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে থাকার সুবাদে আর প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতকে সবসময় সাপোর্ট মনে করা হয়। কিন্তু অতি আশ্চর্যের বিষয়, অাজ যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতকে পাশে চাচ্ছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশকে পাশ কাটিয়ে, মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত।
No comments:
Post a Comment