১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের একটি মেয়ের শরীরের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন, বুকের স্তন সুডৌল আকার ধারণ, তলপেটের মাংস বৃদ্ধি, চেহারার লাবণ্যতা, কোমরের পিছনের দিকে মাংস বৃদ্ধি, ইত্যাতি। এগুলোর প্রধান কারণ হলো রজঃস্রাব বা মাসিক (Period)।
মাসিক স্বাভাবিক নিয়মে প্রতি মাসে একবার করে হয়। এটি সাধারণত ৩/৪ দিন স্থায়ী হয়। তবে কারো কারো ৭ দিনও স্থায়ী হতে পারে।
মাসিক চলাকালীন সময়ে অনেক মেয়েরই তলপেটে অতিরিক্ত ব্যাথা, শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, মাথা ও শরীরে যন্ত্রনা, অতিরিক্ত রক্ত পড়া বা কম রক্ত পড়াসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়।
মাসিক স্বাভাবিক বা নিয়মিত হওয়া কিছু শর্তের উপর নির্ভর করে। যেমন: সুস্বাস্থ্য, সঠিক পুষ্টি, আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ, দেহের ওজন ঠিক থাকা, জিনগত বৈশিষ্ট, শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থির হরমোন ঠিকভাবে নিঃসৃত হওয়া, ইত্যাদি। শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থির ভিতর রয়েছে ওভারি, অ্যাডরেনাল ও থাইরয়েড। অনিয়িমিত মাসিকের জন্য সুনির্দিষ্টিত কোন কারণ সনাক্ত করা না গেলে তাকে ডিইউবি বলা হয়। যাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
বয়ঃসন্ধিকালীন :
মাসিক শুরু হওয়া থেকেই অতিরিক্ত রক্ত পড়তে থাকে। যার ফলে শরীরে রক্তের অভাব ও স্থূলতা দেখা দেয় এবং শরীর শুকিয়ে যায়। এরকম সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সরণাপন্ন হতে হবে।
প্রজননকালীন :
এই সময় ১০ থেকে ১২ দিন পরপর বা সারাটা মাস জুড়ে অল্প অল্প করে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
রজঃনিবৃত্তির আগে :
একটা নির্দিষ্ট বয়সে পা রাখলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। কোন নারী যখন ৪০ থেকে ৪৮ বছরে পা রাখে তখন এই রকম সমস্যা দেখা দেয়।
মাসিকে কেন এমন হয় ?
নারীদের জরায়ুতে রক্ত সরবরাহ ও রক্ত চলাচল করার জন্য শারীরবৃত্তিয় সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। যদি কোনো কারণে সমন্বয়হীনতা হয় বা অনেক সময় অতিরিক্ত আবেগ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত দুঃখবোধ অথবা বিবাহিতদের যৌন অসহযোগিতার কারণেও এ রকম হয়ে থাকে।
প্রতি মাসেই মাসিকের শারীরিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন যন্ত্রণার মুখোমুখি হন বহু নারী। কিন্তু মাসিকের এ যন্ত্রণা লাঘব করার কিছু উপায় রয়েছে। এ লেখায় তুলে ধরা হলো তেমন কিছু উপায়।
১. কম ক্যাফেইনযুক্ত চা পান করুন
গরম চা মাংসপেশিতে আরাম দেয়। এ কারণে চা পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে কম ক্যাফেইনপূর্ণ চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের কলকাতার পার্ল ক্লিনিকের গবেষক ড. রিমা চ্যাটার্জি। চায়ের উষ্ণতা ব্যথাপূর্ণ পেশিতে কিছুটা আরাম দেবে। এ জন্যে চামোমাইল টি, জিঞ্জার টি, পিপারমিন্ট টি, ল্যাভেন্ডার টি, গ্রিন টি, লেমোনগ্রাস টি, কার্ডামোম টি এবং আরো কয়েক ধরনের হার্বাল চা উপকার দেবে।
২. প্রচুর পানি পান করুন
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা মাসিকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়। এ বিষয়ে মুম্বাইয়ের হেলথ সেন্টারের ড. হিতেশ শর্মা জানান, পিরিয়ড চলাকালীন প্রচুর পানি খাওয়া উচিত। এ সময় দেহে বাড়তি পানি প্রয়োজন হয়।
৩. আদা
বিশেষ সময়ে আদা একটি দারুণ কার্যকর ওষুধ। ব্যথা উদ্রেককারী প্রোস্টাগ্লাডিয়ানসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে আদা। এর সঙ্গে অবসাদ দূর করতেও সহায়তা করে। এক কাপ গরম পানিতে এক টুকরা আদা ছেঁচে তার সঙ্গে সামান্য মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।
৪. হট ওয়াটার ব্যাগ
ব্যথার সময়ে তলপেটে একটা হট ওয়াটার ব্যাগ রাখুন। এতে যন্ত্রণাকাতর পেশিগুলো শিথিল হবে। ব্যথা কিছুটা কমে আসবে।
৫. ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকুন
চা-কফিতে ব্যবহৃত ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকাটা বাঞ্ছনীয়। ক্যাফেইন রক্ত চলাচলকারী শিরা-উপশিরাকে সংকুচিত করে দেয়। এত ব্যথা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।
৬. চর্বি এড়িয়ে চলুন
চর্বিযুক্ত খাবার এ সময় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। এসব খাবারে ক্ষতিকর উপাদান ও লবণ থাকে, যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা বৃদ্ধি করতে পারে। কলা খান। এর পটামিয়ামে উপকার মিলবে।
৭. দারুচিনি
পিরিয়ডের ব্যথা উপশমে দারুণ কাজ করে দারুচিনি। এতে ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। এক টেবিল চামচ দারুচিনি গুঁড়ো চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এতে সামান্য মধু মিশিয়ে খান। পিরিয়ড শুরু হওয়ার দুই-তিন দিন আগে থেকে এই চা দুই-তিন কাপ খেলে ব্যথা থাকবে না।
৮. অর্গাজম
মাসিকের ব্যথা দূর করতে কার্যকর একটি উপায় হলো অর্গাজম বা আনন্দময় যৌনতা। এতে দেহের রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায় এবং বহুধরনের হরমোন নির্গত হয়। ফলে মাসিকের ব্যথা অনেকাংশে উপশম হয়।
এছাড়াও মাসিকের সমস্যা প্রতিকারের আরও কিছু উপায় :
১.জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষধ নিয়মিত সেবন করতে হবে।
২.অতিরিক্ত বা কম ওজন থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩. প্রচুর আয়রনযুক্ত, ভিটামিন সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
৪.ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
পরীক্ষার প্রয়োজন হলে কাজগুলো প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমেই করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মাসিকের সমস্যা সমাধান, পিরিয়ডের সমস্যা সমাধান, মাসিক নিয়মিত করা, মাসিক, পিরিয়ড, মাসিকের যন্ত্রণা, মাসিকের কষ্ট দূর,
No comments:
Post a Comment