একা‌কিত্ব দূর করার কার্যকরী উপায়

একা‌কিত্ব এক‌টি মান‌সিক সমস্যা। একা থাকা অনেকের কাছেই আশংকার কোনো বিষয়। ত‌বে একাকিত্ব বিষয়টিকে আপনি যত বেশি প্রশ্রয় দিবেন এটি ততো বেশি গ্রাস করতে থাকবে আপনাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা একঘেয়ে ও বিচ্ছিন্নতার নামান্তর। তাই একা‌কিত্ব জীবন‌কে ঝা‌মেলা না ভে‌বে মান‌সিকভা‌বে শ‌ক্তিশালী হোন আর তা‌কে উপ‌ভোগ কর‌তে শিখুন।

আপনি যদি একা থাকা‌কে সমস্যা মনে করেন তাহলে নি‌চের লেখাগু‌লোয় ম‌নো‌যোগী হ‌তে হ‌বে, এতেই সমাধান হবে আপনার একাকীত্বের।

সমস্যার মূলোৎপাটন করুন
একা‌কিত্ব যদি আপনার কা‌ছে সমস্যার ম‌নে হয় ত‌বে তার মূলোৎপাটন করুন। ম‌নো‌যোগ সহকা‌রে ভাবুন কিভা‌বে, কখন, কি‌সের জন্য আপনা‌কে একা লাগ‌ছে। এসব বের ক‌রে তার সমাধা‌নে নিষ্ঠার সা‌থে এ‌গি‌য়ে যান।

সমস্যা চি‌হ্ণিত করুন
আপনার সমস্যার উৎস নির্ণয় করুন। এটা কি একাকিত্ব নাকি অন্য কোনো সমস্যা, তা জেনে নিন। আপনার একাকিত্বের কারণ যদি হয় পুরনো কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা বা স্মৃতির কারণে তাহলে তা জেনে নিন। সমস্যার ভেতরে প্রবেশ করা, সমাধানের উপায় বের করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।

মনের বাধাকে ধামাচাপা দিন
সামাজিক জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিকটি হলো মনে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে থাকা। এগুলো দূর করুন আর আপন ল‌ক্ষে এ‌গি‌য়ে যান। নয়তো একা হয়ে পড়বেন। রাগ, ঘৃণাসহ যেকোনো নেতিবাচক মানসিকতা একা করে দেয়।

ইতিবাচক হ‌য়ে এ‌গিয়ে যান
অতীতের সব নেতিবাচক পরিস্থিতি স্মৃতি থেকে ঝেড়ে ফেলতে একটা বড় পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। এজন্য আপনার নেতিবাচক পরিস্থিতি ও দ্বীধাদ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসতে নিজের ওপর জোর খাটানোর প্রয়োজন হবে। এজন্য ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যেতে হবে এবং দ্বীধাদ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।

আপনার সখগু‌লো‌কে জাগ্রত করুন
একা‌কিত্ব কা‌টি‌য়ে তোলার জন্য আপনার নতুন বা পুরাতন সখগু‌লো‌কে কা‌জে লাগান। আপনি কি পশু পা‌খি পালন, বাগান করতে, ক্যাকটাস বা বনসাই জমাতে অথবা রান্না করতে ভালোবাসতেন? বেশি না ভেবে আপনার শখের কাজগুলো আবার শুরু করুন। এতে ভালোভাবে সময় কাটানোর পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতাকে ঝালিয়ে নেওয়াও সম্ভব হতে পারে।

আপনার মূল কাজ নি‌য়ে ভাবুন
আপনি যদি কোন কাজ ক‌রেন বা চাকরিজীবী হন, তবে কাজে আরো সময় দিন। কাজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন। এতে আপনার কা‌জের উন্নতি যেমন কেউ আটকাতে পারবে না, তেমনি কাজে উপযুক্ত সময় ব্যয় আপনাকে করে তুলবে আনন্দিত ও আত্মবিশ্বাসী।

সহকর্মীদের সময় দিন
জীবনের একাকিত্ব দূর করেন অফিসের সহকর্মীরা। তাদের সঙ্গে দিব্যি কাজ করতে করতে সময় কেটে যাবে আপনার। আমা‌দের জীবনের সবচেয়ে বে‌শি সময় অ‌তিবা‌হিত হয় কাজের মধ্য দিয়ে।

ভ্রমন করুন
ভ্রমণ হ‌চ্ছে একা‌কিত্ব দূর করার এক‌টি কার্যকরী উপায়। বন্ধু বা আত্বীয় কা‌ছে, কাছে বা দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন, কাউ‌কে সা‌থে না পে‌লে বেরিয়ে পড়ুন একাই। দে‌শে কিংবা বি‌দে‌শ থে‌কে বেড়িয়ে আসুন। কোথায় যাবেন? জায়গাটা বাছুন আপনার ব্যাক্তিত্ব অনুযায়ী।

বই পড়ার অভ্যাস গড়ুন
বই হ‌তে পা‌রে আপনার একা‌কিত্ব জীব‌নের নিত্তদি‌নের সঙ্গী। একা‌কিত্ব কা‌টি‌য়ে ওঠার জন্য বই‌য়ের ভূ‌মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বে‌শি বে‌শি বই পড়ার অভ্যাস করুন। এ‌তে আপনার জ্ঞান-বু‌দ্ধি বৃ‌দ্ধি পাবার সা‌থে সা‌থে একা‌কিত্ব থাকার যন্ত্রণাও দূর হ‌য়ে যা‌বে।

বন্ধু‌দের সা‌থে সময় কাটান
একা‌কিত্ব সমস্যা থে‌কে মু‌ক্তি পে‌তে বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। গল্প বা কাজ যে‌কোন বিষ‌য়ে তা‌দের সা‌থে শেয়ার করুন। কাটিয়ে আসুন মজার কিছু মূহুর্ত। মাঝে মাঝে পার্টি দিন সবাইকে নিয়ে।

অনলাই‌ন ডেটিং
যদি আপনার পক্ষে বন্ধু বানানো খুব কঠিন ম‌নে হয়, তবে অনলাইনে সময় দিন। অনলাই‌নের দু‌নিয়া ক‌তো বিশাল হ‌তে পা‌রে তা জানার চেষ্টা করুন। এ‌তে অন্তত ভালো সময় কাটবে। শুধু সময় কাটানোর জন্যই অনেকে এখানে সময় অ‌তিবা‌হিত ক‌রেন।

সহায়তার আশ্রয় নিন
সব সমস্যা একাই সমাধান করা যায় না। আপনার সমস্যার মাত্রা যদি এমন পর্যায়ে যায় যে, তা নিজে সমাধান করতে পারছেন না, তাহলে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন। তারা বহু বড় সমস্যা সমাধান করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ফলে তাদের সহায়তা আপনার সমস্যা সমাধানে কার্যকর হবে।

ব্যায়াম করুন নিয়‌মিত
একলা একা ভা‌লো লা‌গে না ? নিয়‌মিত ব্যায়াম করে দেখুন, ভা‌লো লাগ‌বে। ব্যায়াম আপনা‌কে সুস্থ্য দেহ আর সুন্দর মন উপহার দি‌বে। তাই ব্যায়াম করুন, ভা‌লো থাকুন।

স্বেচ্ছা সেবায় অাত্ম‌নি‌য়োগ করুন
এই কাজটি নিজের এবং সমাজের দুই উপকারই করে। যেকোনো সামাজিক কর্মসূ‌চি, অনুষ্ঠান বা নিজ উ‌দ্যো‌গে স্বেচ্ছাশ্রম বা সেবা দিন। হতে পারে কোনো টিকাদান কর্মসূচি, প‌রিচ্ছন্নতা অ‌ভিযান, শিক্ষাদান বা বৃক্ষরোপন কর্মসূচি।

এছাড়াও মনের মতো কোনো ক্লাবে যোগ দি‌তে পা‌রেন। যেমন, বই পড়ার ক্লাব, খেলার ক্লাব, ই‌য়োগা ক্লাব ইত্যা‌দি আপনার একাকিত্ব দূর করতে পারে।
বি‌ভিন্ন সামা‌জিক আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দিন। জাতীয় আয়োজন থেকে শুরু ক‌রে ছোট মেলাতেও যে‌তে পারেন।
যেকোনো কোর্স কর‌তে সেখা‌নে ভ‌র্তি হয়ে যান। সেটা হ‌তে পা‌রে ভাষা শিক্ষা, রান্না, গান বা ব্যায়ামের কোর্স।
কাজ শেষে শপিং-এ যান অথবা সিনেমা হলে গিয়ে দেখে আসুন প্রিয় কোন সি‌নেমা।

একাকী জীবনটাকে বদলাতে আপনার ভিত‌রে ইচ্ছাশ‌ক্তি অর্থাৎ আত্ম‌বিশ্বাসকে জাগ্রত করতে হ‌বে। একা‌কিত্বকে সমস্যা না ভে‌বে সাম‌নে এ‌গি‌য়ে যাওয়ার চেষ্টায় স‌চেষ্ট থাক‌তে হ‌বে।

No comments:

Post a Comment