পবিত্র মাহে রমজান অতি সন্নিকটে। মাহে রমজানে প্রতিদিনের ইফতারিতে খেজুর আমাদের জন্য থাকবেই। খেজুর ছাড়া ইফতারির কথা ভাবাই যায় না। প্রশ্ন হচ্ছে যে, আপনি এই খেজুর কি জেনেশুনে খাচ্ছেন ? নাকি শুধু খাদ্য হিসেবে খাচ্ছেন ? যদি তাই হয়, তবে আজ থেকে জেনে রাখুন খেজুরের অসাধারণ পুষ্টিগুণের কথা। শুধু রমজান মাসেই নয়, আপনার উচিৎ হবে প্রতিদিনের নাস্তার উপকরন হিসেবে খেজুর ব্যবহার করা।
এই বিশেষ বরকতময় ফলটিতে রয়েছে মরণরোগকে নিয়ন্ত্রণ করার অশেষ ক্ষমতা।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার প্রিয় ফল ছিল খেজুর। তিনি প্রতিদিন সকালে ৭টি খেজুর খেয়ে নাস্তা করতেন। তিনি রমযানের রোযায় সকল মুমিন মুসলমানদেরকে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতে বলতেন।
আমরা অনেকেই জানি না যে, খেজুর খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক। আর সুন্নত মুবারকের মধ্যেই আছে সমস্ত প্রকার ভালো দিক। তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফেও খেজুরের অনেক অনেক গুণাবলীর কথা বর্ণনা করা আছে। তারপরও বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানীরা খেজুর নিয়ে গবেষণা করে খেজুরের ব্যাপকতর গুনাগুনের কথা জানতে পেরেছেন। তারা বলেছেন, পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খেজুর অসাধারণ ঔষধিগুনে ভরপূর। তাই সারা বছর খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যর পক্ষে খুবই উপযোগী।
এখানে খেজুরের কিছু অসাধারণ স্বাস্থ্য গুণাগুণের বর্ণনা করা হলো।
* প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে ২৭৭ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে শর্করা ৭৪.৯৭ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮১ গ্রাম, কোলেস্টেরল ০.০০ গ্রাম ও ৬.৭ গ্রাম ফাইবার রয়েছে। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে, সোডিয়াম, কপার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফসফরাস, থায়ামিন, নিয়াসিন, রিবোফ্ল্যাভিন, বিটা-ক্যারোটিনসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে।
* খেজুর পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
* খেজুরে বিপুল খাদ্যশক্তি থাকায় শারীরিক দুর্বলতা সহজে দূর হয়।
* খেজুর স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে
* খেজুর ফুলের পরাগরেণু পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করে শুক্রাণু বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
* হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর বেশ উপকারী।
* খেজুরের প্রচুর খাদ্য উপাদান রয়েছে।
* খেজুর শরীরে রক্ত উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
* খেজুর হজমশক্তি বর্ধক, যকৃৎ ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক।
* খাবারে রুচি বাড়ায়।
* ত্বক ভালো রাখে।
* দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
* খেজুর যৌনশক্তি বাড়ায়।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
* পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী।
* ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
* খেজুর প্রসব যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। এটি জরায়ুর পেশি দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে তাড়াতাড়ি প্রসব হতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফল প্রসব পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
* খেজুরে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।
* খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে।
* নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত।
* তাজা খেজুর নরম এবং মাংসল যা সহজেই হজম হয়।
* খেজুরে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।
* ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।
* খেজুরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ফাইবার। গবেষণায় দেখা গেছে খেজুরে ক্যানসার প্রতিরোধ করার উপাদান রয়েছে। অন্ত্রের ক্যানসার নিরাময়ে এটি খুবই উপকারি। নিয়মিত খেজুর খেলে ক্যানসারের সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যায়। খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে।
* আজওয়া খেজুর বিষের মহৌষধ।
* মুখের অর্ধাঙ্গ রোগ, পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী। খেজুরের বিচিও রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
* পাতলা পায়খানা বন্ধ করে।
* এর চুর্ণ মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার হয়।
* খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী।
* দীর্ঘসময় পেট খালি থাকলে শরীরে প্রচুর গ্লুকোজের প্রয়োজন হয়। তেমনি সারাদিন রোজা রাখার পর পেট খালি থাকে বলে শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটা দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।
* তুলনামূলকভাবে শক্ত খেজুরকে পানিতে ভিজিয়ে (সারা রাত) সেই পানি খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
* পেটের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে খেজুর। এছাড়াও মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধেও এই ফল বেশ কার্যকরী।
* মুখের লালাকে ভালোভাবে খাবারের সঙ্গে মিশতে সাহায্য করে খেজুর। ফলে বদহজম দূর হয়।
* হৃদরোগ কমাতেও খেজুর বেশ উপকারী।
* উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।
* নেশাগ্রস্তদের অঙ্গক্ষয় প্রতিরোধ করে খেজুর। স্বাস্থ্য ভালো করতে বাড়িতে তৈরী ঘিয়ে ভাজা খেজুর ভাতের সাথে মিশে খেতে হবে। ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির যোগান দেয় খেজুর।
* খেজুর হৃদয়ের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ও রক্ত পরিশোধন করে। এটি হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণ সঠিক রাখে। তাই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য খেজুর ভীষণ উপকারি।
* সুস্থ্য হৃদপিন্ডে দেহযন্ত্রে স্বাচ্ছন্দ এবং সতেজ বিধান করে এমন শক্তিদায়ক বা বলবর্ধক ঔষধ হিসেবে খেজুরের জুড়ি নেই।
* যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী।
* প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর ব্লেন্ড করা জুস খেলে হার্টের সমস্যায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি ভাল সমাধান পাবেন।
* খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে বিধায় যারা একটু দূর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী, সামান্য পরিশ্রমে হয়রান হয়ে যায় তাদের জন্য খেজুর একটি উৎকৃষ্ট পথ্য।
* ৭/৮ মাস সময় থেকে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খেজুর একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য। এসময় গর্ভবতী মায়েদের শরীরে অনেক দুর্বলতা কাজ করে। তখন খেজুর মায়েদের শরীরের এই দুর্বলতা কাটাতে অনেক সাহায্য করে এবং ডেলিভারীর পর মায়েদের অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করতেও খেজুর সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তী সময়ে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
* দেহকে সচল ও কার্যক্ষম রাখতে শক্তির প্রয়োজন। এর অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়। এসব ক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাদ্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।আর এই শর্করা জাতীয় খাদ্য হিসেবে খেজুর খাদ্য শক্তির উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করে।
* ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সাহায্য করে। খেজুরে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম রয়েছে। এর ফলে এটি হাড় ও দাঁত মজবুত করে এবং হাড় ও দাঁত ক্ষয়ের হাত থেকে মুক্ত রাখে। খেজুর দেহে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
* খেজুর লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে কার্যকর পালন করে। রক্তে লৌহিত কণিকার প্রধান উপাদানের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। খেজুর লৌহসমৃদ্ধ বলে এই রক্তশূন্যতা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে।
* খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম বিদ্যমান যা আমাদের শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সচল রাখার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম বিদ্যমান থাকে যা মানুষের ষ্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহতাকে ৪০% কমিয়ে দেয়।
* খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ঔষধ হিসেবে কাজ করে ।
* খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল, যা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।
* প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে ৩২৪ মিলিগ্রাম ক্যালরি থাকে। ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া খেজুরে রয়েছে ৭৭.৫% কার্বহাইড্রেট, যা অন্যান্য খাদ্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজ করে।
* ক্ষুধা নিবারণের বিকল্প খাদ্য হিসেবে আমরা ২-৪টি খেজুর খেয়ে এক গ্লাস পানি পান করতে পারি।
* খেজুরে রয়েছে ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ – যা হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহয়তা করে।
* আয়রনের পরিমাণও রয়েছে খেজুরে। তাই রক্তস্বল্পতা ও শরীরের ক্ষয়রোধ করতে খেজুরের রয়েছে বিশেষ গুণ।
খেজুরের এতোসব পুষ্টিগুন যেমন আছে, তেমনি এতে মারাত্বক ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এর ক্ষতিকর দিকটি হচ্ছে অপরিষ্কার বা মেডিসিন মেশানো। তাই খেজুর খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিয়ে তারপর খেতে হবে।
খেজুরের উপকারীতা, খেজুরের গুন, খেজুরের অসাধারন স্বাস্থ্য উপকারীতা, খেজুরের স্বাস্থ্য গুনাগুন
No comments:
Post a Comment