করল্লার উপকারীতা এতোই বেশি

করলা তেতো স্বাদযুক্ত এবং এর শরীর কাঁটার মত ওয়ার্টে ভরা। করলা (করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। ইংরেজিতে একে Balsam pear, alligator pear, bitter gourd, bitter melon, bitter cucumber ইত্যাদি বলা হয়। করলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia যা Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ।

এলার্জি প্রতিরোধে এর রস দারুণ উপকারি। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উত্তম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে করলার রস খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বাতের ব্যাথায় নিয়মিত করলা রস খেলে ব্যাথা আরোগ্য হয়। আর্য়ুবেদের মতে করলা কৃমিনাশক, কফনাশক ও পিত্তনাশক। করলার জীবানু নাশক ক্ষমতাও রয়েছে। ক্ষতস্থানের ওপর এর পাতার রসের প্রলেপ দিলে এবং উচ্ছে গাছ সেদ্ধ পানি দিয়ে ক্ষত ধুয়ে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষত শুকিয়ে যাবে। চর্মরোগেও করলা বেশ উপকারী। এছাড়া
জন্ডিস ও লিভারের অসুখে খাবারে অরুচি দেখা দিলে করলা খেলে রুচি বর্ধক হয়।

জানেন কি
করল্লা পছন্দ করেন বা ভালবেসে প্লেটে তুলে নেন এমন মানুষ খুব কম-ই পাওয়া যায়। করল্লা পছন্দ না করার প্রধান কারণ এর তিতা স্বাদ। কিন্তু করল্লার উপকারিতা এতোই বেশি যে পছন্দ না করলেও শরীর সুস্থ রাখতে ও বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে বাঁচতে করলা খাওয়া জরুরী।

কোন রোগের জন্য উপকারী

ডায়াবেটিস মেলিটাসঃ 
করল্লা এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক একধরনের এনজাইম বৃদ্ধি করে শরীরের কোষ গুলোর চিনি গ্রহনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। করল্লার রস শরীরের কোষের ভিতরে গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে চিনির পরিমান কমে যায়।

অ্যালার্জিঃ 
অ্যালার্জি প্রতিরোধে করল্লার উপকারিতা অপরিসীম। করল্লার রসে উপকার পাওয়া যায়।

গেঁটে বাতঃ 
নিয়মিত করল্লার রস খেলে বাতের ব্যাথায় উপকার পাওয়া সম্ভব।

স্ক্যাবিসঃ 
করল্লার রসে জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন রকম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে করল্লার উপকারিতা অপরিসীম।

এ্যাকজিমাঃ 
করল্লার রসে জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে যা বিভিন্ন রকম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। এ্যাকজিমা প্রতিরোধে করল্লার উপকারিতা অনেক।

লিভার ডিজিজঃ 
লিভার ডিজিজ খাওয়ার রুচি কমিয়ে দেয়। খাওয়ায় আবার রুচি ফিরিয়ে আনতে করল্লার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।

এনিমিয়াঃ 
ভিটামিন সি প্রোটিন ও আয়রন শোষণে সাহায্য করে। করল্লায় প্রচুর ভিটামিন সি আছে যা আয়রন শোষণ করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।

চুলের ক্ষতিঃ 
যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন সি থাকায় চুলের জন্য করল্লার উপকারিতা অনেক।

কোষ্ঠ্যকাঠিণ্যঃ 
করল্লা ডাইটারি ফাইবার সমৃদ্ধ। তাই পেটের সমস্যায় করল্লার উপকারিতা অনেক।

গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাগাল রিফাক্স ডিজিজ(জিইআরডি)ঃ  
পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।

ম্যালেরিয়াঃ 
ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করে।

মাথা ব্যাথাঃ 
মাথা ব্যথা কমিয়া দেয়।

এন্টিএজেনঃ 
অ্যান্টিওক্সিডেন্ট বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখে ও শরীরের কোষ গুলি কে রক্ষা করে। এতে আছে লুটিন ও লাইকোপিন। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লাইকোপিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। করল্লায় প্রচুর লাইকোপিন থাকে। বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে করল্লার উপকারিতা অপরিসীম।

রাতকানা রোগঃ 
করল্লাতে যথেষ্ট পরিমাণে বেটা ক্যারোটিন রয়েছে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ও চোখের সমস্যা সমাধানে বেটা ক্যারোটিন খুবই উপকারী।

খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ

কিডনী ডিজিজঃ 
যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি তাদের করল্লা না খাওয়াই ভাল। করল্লার উপকারিতা থাকলেও কিডনি ডিজিজের রোগীদের করল্লা এড়িয়ে চলা উচিৎ।

ডায়ারিয়াঃ 
এটি আশঁযুক্ত খাবার বলে ডায়ারিয়া রোগীদের দেওয়া হয় না।

লিভার সিরোসিসঃ 
তিতা বেশি খেলে লিভারে ক্ষতি করে। কারণ এটি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।

পরিষ্কার পানিতে করল্লা ভাল করেধুয়ে রান্না করুন।সতর্কতা:– একদিনে অতিরিক্ত পরিমানে করল্লাখাবেন না। তলপেটে সামান্য ব্যথা হতেপারে।– ডায়বেটিস পেশেন্টরা ডাক্তারেরকাছ থেকে জেনে নিন সারাদিনে কতটাপরিমাণে তেতো খেতে পারবেন।সুগারের ওষুধের সঙ্গে তেতোরভারসাম্য বজায় রাখা দরকার।– প্রেগনেন্ট মহিলারাও ডাক্তারেরপরামর্শ নিয়ে করল্লার রস খাবেন।

করল্লার জীবাণুনাশক ক্ষমতা রোগ-প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ের জন্য অসাধারন ক্ষমতা রাখে। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া কে প্রতিরোধ করতে এবং গুড়া কৃমি, ফিতা কৃমি, অ্যাস্ক্যারিয়াসিস, সাধারন সর্দ্দি-কাশি, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ, ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কিঅ্যাকট্যাইসিস, কোলনজাইটিস, গলস্টোন, গলব্লাডার ক্যান্সার, ও গলব্লাডার ডিজিজ সারাতে করল্লার উপকারিতা রয়েছে।


No comments:

Post a Comment