যে কোন ঋতুর তুলনায় বর্ষা ঋতু সবার জন্যই একটু বেশিই সেনসিটিভ। তবে শিশুদের জন্য তা আরও বেশি। বর্ষাকালের আবহাওয়া কখনও ঠান্ডা আবার কখনও গরম। বড়রা এক্ষেত্রে কিছুটা মানিয়ে চলতে পারলেও শিশুদের জন্য তা অস্বস্থিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। বর্ষার বৈরি আবহাওয়া শিশুদের মধ্যে খুব সহজেই নানা ধরনের অনাকাঙ্খিত রোগের জন্ম দেয়।
এসব কারণে বর্ষা ঋতুতে পরিবারের
শিশুদের দিকে বিশেষভাবে বাড়তি খেয়াল
রাখতে হবে। তাই বর্ষাকালে শিশুর
বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাড়তি যত্ন নিনঃ
* বৃষ্টির পানি শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শিশুর শরীরে বৃষ্টির পানি লাগলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ও
শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
* অনেক সময় বর্ষার রাতে ঠান্ডা কিংবা গরমে শিশুর বুকে ঠান্ডা বসে যায়। কাজেই আপনার শিশুর মধ্যেও যদি এ জাতীয় সমস্যা দেখা দেয় তাহলে রাতে ঘুমানোর সময় তার বুকের ওপর হালকা কোনো কাপড় রাখতে হবে। সেই সাথে রাতে ঘুমের মাঝে শিশু অত্যধিক পরিমাণে ঘেমে যাচ্ছে কিনা সেটিও খেয়াল করতে হবে।
* বর্ষাকালে ত্বক ভেজা থাকলে
ত্বকে সহজেই ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া
আক্রমণ করতে পারে। তাই এ ঋতুতে
শিশুর ত্বক সবসময় শুকনো রাখতে হবে।
* শিশুরা যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে বৃষ্টিতে ভিজে
যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মাথা ও
শরীর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে
শুকনো কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিন।
* বর্ষার সময়টায় যাদের বাড়ির আশপাশে পানি জমে যায় তাদের বাড়িতে মশার উপদ্রব হতে পারে। এক্ষেত্রে দিনের বেলা কিংবা সন্ধ্যার সময় বিশেষ করে শিশুর ঘুমের সময়টিতে তাকে মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপশি মশার ওষুধ ছিটিয়ে মশার উপদ্রব কমাতে হবে।
* শিশুকে এ ঋতুতে সবসময় পরিষ্কার -
পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেসব শিশু স্কুলে যায় বা বাড়ির বাইরে নির্দিষ্ট একটি সময় খেলাধুলা করে তারা যেন বর্ষায় রাস্তার পাশে জমে থাকা অপরিচ্ছন্ন পানির সংস্পর্শে কোনো ধরনের চর্মরোগের শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তা নাহলে ত্বকে ময়লা জমে খোস- পাঁচড়াসহ সহজেই নানা ধরনের ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
* শিশুকে কাদামাটি,
ময়লামিশ্রিত রাস্তায় একদম নামতে
দেয়া যাবে না। বর্ষার কাদামাটি
শিশুর ত্বকে হঠাৎ লেগে গেলে তা
সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে
ফেলতে হবে।
* বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়ার সময়
শিশুকে অবশ্যই রেইনকোট, ছাতা ,
গামবুট ব্যবহার করতে হবে। শরীরে
কাদা, ময়লা পানি লাগলে তা
পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে
হবে।
* খোলামেলা পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন
পরিবেশে শিশুকে খেলতে দিতে
হবে।
* অনেক অবিভাবক মনে করেন যে, বর্ষার সময় শিশুকে প্রতিদিন গোসল করালে তার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। এটি একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। শিশুর সু-স্বাস্থ্যের জন্য শীত কিংবা বর্ষা সবসময়ই প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত পানিতে শিশুকে গোসল করানো উত্তম। এক্ষেত্রে শিশুর ঠান্ডার ভাব থাকলে হালকা গরম পানিতে যেকোনো জীবাণুনাশক, যেমন: স্যাভলন বা ডেটল মিশিয়ে শিশুকে গোসল করানো যেতে পারে। আর গোসলের পর শিশুর মাথা এবং শরীর অবশ্যই ভাল করে মুছিয়ে দিতে হবে।
* গরমে শিশু ঘেমে যাওয়ার প্রবনতা দেখা গেলে শিশুর ত্বকে বেবি পাউডার ব্যবহার করতে
হবে।
* খাওয়া , গোসল, খেলাধুলা , হাত-মুখ
ধোয়া, ঘামযুক্ত শরীর মুছিয়ে দেয়া
শিশুর সুন্দর ত্বকের জন্য খুবই প্রয়োজন।
তাই মায়েদের অবশ্যই এসব বিষয়ে
বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
* বর্ষাকালে শিশুকে ভিটামিন-
সি জাতীয় ফলমূল ও পানি জাতীয়
খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে।
সেইসঙ্গে শিশুর পর্যাপ্ত পরিমাণে
ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
* বর্ষাকালে ত্বকে বারবার পানি
লাগালে ত্বক ভেজা থাকার কারণে
শিশুর ত্বকের ন্যাচারাল তৈলাক্তভাব নষ্ট
হতে পারে। এ কারণে ত্বকে নিয়মিত
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
* বর্ষার সময় শিশু যেসব পোশাক পরে সেগুলোর প্রতিও মা-বাবার খেয়াল রাখতে হবে। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় শিশুর পোশাকে যেন ড্যাম ভাব চলে না আসে সে বিষয়ের প্রতি সচেতন হতে হবে। একই ভাবে শিশু যে বিছানায় ঘুমায় কিংবা যেখানে বসে পড়াশোনা করে সেসব জায়গাতেও যেন বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে ভাব না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
বর্ষা ঋতুতে সুস্থতার জন্য সবাই সতর্ক
থাকলেও পরিবারের সবচেয়ে ছোট
সদস্যটির দিকে আলাদা নজর দিতে
হবে। মনে রাখতে হবে শিশুদের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের চেয়ে অনেক
কম। তাই শিশুদের প্রতি বিশেষভাবে
খেয়াল রাখা দরকার।
বর্ষাকালে শুধু শিশুর ত্বকের যত্নই নয়, খাবার ও কাপড় -চোপড়ের দিকেও একটু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
কারণ বর্ষাকালে চোখওঠা রোগ,
পেটের অসুখ , ঠান্ডা , কাশি ও
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি
শিশুদেরই বেশি।
গোসলের পর ত্বক ভালোভাবে মুছিয়ে দিতে হবে। নরম জামা পরাতে হবে। ছয় ঘণ্টা পর পর
জামা পাল্টে দেয়া ভালো।
শিশুর বসবাস ও খেলার জায়গা পরিষ্কার
রাখতে হবে।
প্রতি সপ্তাহে শিশুর হাত , পায়ের নখ কেটে দিতে হবে ও খেয়াল রাখতে হবে আঙুলের ফাঁকে পানি জমে গিয়ে যেন সেখানে
কোনো ছত্রাকের জন্ম না হয়।
আপনার শিশুর সুস্থতা নির্ভর করছে আপনার সচেতনতার ওপর। শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে যেকোনো রোগে শিশু খুব দ্রুতই দুর্বল হয়ে যায়। তাই এসময় শিশু যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েই যায় তাহলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হবেন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এ ঋতুতে সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাই আসুন বর্ষায় পরিবারের শিশুদের
দিকে বাড়তি নজর দিই। সেইসঙ্গে
কিছু নিয়ম মেনে চলি ও তাদের
সুস্থতা নিশ্চিত করি। সর্বোপরি শিশুর যত্নে সচেতন হোন।
No comments:
Post a Comment