লজ্জা মানুষের জীবনের সঙ্গী বটে। মানুষ বিভিন্নভাবে লজ্জা পায়। কারণে-অকারণে বা নিজের কর্মের কারণেও লজ্জিত হয়ে থাকে। কিন্তু যদি কোনো কারণ ছাড়াই লজ্জা পান? অথবা কারণ থাকলেও সেটা যদি হয় খুবই সাধারণ, তাহলে সেই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে একটু চেষ্টা তো করাই যায়। যেমন কারও সামনে কথা বলতে গেলে লজ্জা, পরিচিত হতে লজ্জা, বাইরে চলাফেরা করতে লজ্জা, প্রেমের প্রস্তাব দিতে লজ্জা—এমনকি লোকের সামনে খেতে বসেও লজ্জা পেতে দেখা যায় অনেককে।
বাংলায় লজ্জা বা শরম দিয়েই সব ধরনের লাজের প্রকাশ ঘটে থাকে। যা হোক, সাধারণ এসব লজ্জা কিন্তু আপনি চাইলেই কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজের ভেতরে একধরনের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনে হয়ে উঠতে পারেন নতুন এক ‘আমি’।
কেন মানুষ মামুলি কারণে লজ্জা পায়? এটা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, ‘লজ্জার আসলে নানা ধরন আছে। এখন কেউ যদি মানুষের সামনে কথা বলতে লজ্জা পায়, তাহলে সেটাকে শাই ফিল করা বলা যেতে পারে। আবার অনেকে নিজের কর্মের জন্য লজ্জাবোধ করেন। দুটি দুই ধরনের লজ্জা। একটার জন্ম বিব্রতবোধ থেকে, আরেকটা অন্যায়-উদ্বেগ থেকে।
এখন আমি যদি প্রথমটা ধরে কথা বলতে যাই, তাহলে বলতে হবে, অনেকের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধের অভাব কাজ করে। যার ফলে সে মানুষের সামনে কথা বলতে লজ্জা পায়। আবার এসব ক্ষেত্রে একধরনের উদ্বেগও থাকে যে এত মানুষের সামনে আমি কী বলব? কেন বলব ইত্যাদি।’
যখন নিজের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাব থাকবে, তখনই কেবল লজ্জা বা শরমের ব্যাপারটি বেশি ঘটে থাকে। কারও যদি ধারণা থাকে যে ‘আমি নিজের কথা গুছিয়ে বলতে পারব না’, তাহলেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। নিজের সম্পর্কে সচেতন না হতে পারলে এটা কাটিয়ে ওঠা শক্ত।
ছোটবেলা থেকে যদি কেউ উৎসাহ না পায় তাহলে কথা বলার অভ্যাস গড়ে ওঠে না। অনেক পরিবারেই ছোটদের কথা বলা দমিয়ে রাখে। এই দমিয়ে রাখতে রাখতেই সে কথা বলায় উৎসাহ হারায়। আর একটা সময় সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়—যা তার আত্মবিশ্বাসকে দুমড়ে-মুচড়ে শেষ করে দেয়। যে কারণে ছোটরা কোনো কাজ করতে গেলে লজ্জা পায়। ফলে এই বোধ আসলে ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠে মানুষের মধ্যে। যার পেছনে পরিবারের অন্য সদস্যদের বিশেষ ভূমিকা থাকে।
ছেলেবেলা থেকেই নিজের মধ্যে বেড়ে ওঠা এই লজ্জা বড়বেলায় কি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব? মেহতাব খানম বলেন, ‘অবশ্যই সম্ভব।’ সে ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি বাতলে দিলেন তিনি।
১. নিজেকে দক্ষ করে তুলতে চেষ্টা করতে হবে।
২. বাড়াতে হবে নিজের শব্দভান্ডার।
৩. জানার পরিধি যত বড় হবে, লজ্জা কাটিয়ে ওঠা যাবে তত সহজে।
৪. অন্যদের সামনে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন।
৫. গড়ে তুলুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস।
৬. লজ্জার বিরুদ্ধে ‘আক্রমণ’ চালাতে হবে, ট্রেনে-বাসে বা বিমানে চলাফেরার সময়ে আপনার পাশের যাত্রীর সঙ্গে নিজের পরিচয় দিয়ে তার সম্বন্ধে জানতে পারেন।
৭. নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চর্চা দিয়েই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে শুরু করতে পারেন। এতে নিজের মস্তিষ্কও প্রসারিত বা অভ্যস্ত হতে শুরু করে।
৮. নিজের সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমার ভালো-খারাপ মিলিয়েই আমি।
৯. মানুষ কী বলল, সেটা খুব বেশি গায়ে মাখা যাবে না। বরং নিজের দুর্বলতাগুলো চর্চার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে হবে। আর তাহলেই লজ্জা পালিয়ে যাবে।
লজ্জার কারন, লজ্জা কাটানোর উপায়, লাজ দূর করার টিপস্, লজ্জা কাটাতে যা করবেন, লাজ বা শরম কাটানোর উপায়
No comments:
Post a Comment