বছরের ১২ মাসই ত্বক ও চুলের যত্ন নিতে হয় । তবে বর্ষাকালে এটি বাধ্যতামূলক। কারণ বর্ষার আবহাওয়া ঠান্ডা ও গরম। এ
সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে। এ
কারণে জন্ম নেয় ছত্রাক । ফলাফল ত্বক ও
চুলের নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া । এ ঋতুতে
ত্বক ও চুলের পরিচর্যার দিকনির্দেশনা
দিচ্ছেন হারমনি স্পার কর্ণধার
রাহিমা সুলতানা।
ত্বকে ছত্রাক জন্মানোর কারণে ব্রণ হয়। ত্বক
দেখতে মাঝেমধ্যে নিষ্প্রাণ লাগে।
অনেকের অ্যালার্জির পরিমাণও
বেড়ে যায়। এ কারণে যতটা সম্ভব ত্বক
পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে দুটো
উপকার পাবেন। মরা চামড়া দূর হবে
এবং ত্বকের ছিদ্রে অক্সিজেন যাবে।
মরা চামড়া দূর করার জন্য স্ক্রাব ব্যবহার
করুন সপ্তাহে একবার। ঘরে বসেই এটি
বানাতে পারবেন।
চালের গুঁড়া, লেবুর রস, শসার রস ও
গাজরের রস-এই উপকরণগুলো মিশিয়ে
এক মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন।
অ্যালার্জি না থাকলে একটু কাঁচা
হলুদ বা নিমপাতা মিশিয়ে নিন।
অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ
করবে।
মাস্কঃ ত্বক ঠিক রাখতে এবং
উজ্জ্বলতা বাড়াতে দিতে পারেন এই
মাস্কটি।
একটি পাকা কলা, এক টেবিল চামচ
চালের গুঁড়া বা ময়দা ও দুই টেবিল
চামচ পাকা পেঁপে মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট
মুখে লাগিয়ে রাখুন।
অনেকের অভিযোগ, রোদে ত্বক
পুড়ে যাচ্ছে। শুধু পাকা পেঁপে
লাগিয়ে নিন। পোড়া ভাব কমে
যাবে।
শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা
নিচের মিশ্রণটি লাগাতে পারেন।
পরিমাণমতো দুধ ও মধু মেশান। সঙ্গে
নিন পেঁপে ও কলার মিশ্রণ। মিশিয়ে
১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন মুখে।
তবে যাদের ত্বক স্বাভাবিক, তাদের
এই প্যাকটির দরকার হবে না ।
বাতাসে আর্দ্রতার কারণে ছত্রাক জন্ম
নেয়। ফলাফল খুশকির উপদ্রব।
পাশাপাশি আরেকটি সমস্যা-এই
ঋতুতে চুলের গোড়া নরম থাকার
কারণে চুল পড়ে বেশি। সুতরাং চুলের
একটু বাড়তি যত্ন আবশ্যক।
তাড়াহুড়ো না থাকলে চুলে হেয়ার ড্রায়ার
ব্যবহার না করাই ভালো। ভেজা চুল
আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
সপ্তাহে দুবার না হলেও একবার চুলে
ম্যাসাজ দেওয়া উচিত।
নারকেল তেল গরম করে এর সঙ্গে দিন
লেবুর রস। চুলের গোড়ায় দিয়ে
আলতো হাতে কিছুক্ষণ ঘষতে হবে।
এতে মরা চামড়া বা খুশকি চলে
যাবে।
একটি তোয়ালে গরম পানিতে চুবিয়ে ১০ মিনিট মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। চুলের গোড়া শক্ত
হবে।
মাস্কঃ টক দুই, মেথির গুঁড়া, নিমপাতা
ও একটি ডিম ব্লেন্ড করে সপ্তাহে এক
দিন মাথায় দিতে পারেন। রাখতে
হবে ২০-৩০ মিনিট।
বর্ষায় যতটা সম্ভব ফ্যাশন উপকরণ চুলের
আশপাশে না আনাটাই ভালো।
রিবন্ডিং, স্পাইরাল বাইন্ডিং, আয়রন
ও চুলের রং ব্যবহারে ক্ষতিই হবে
চুলের ।
বর্ষার সময় বৃষ্টি ঝরবে না, তা তো হয় না ।
তাই বলে ঘরে বসে থাকা চলবে না কারও, তাই
না?
বৃষ্টিতে পরিপাটি চুলের দফারফা হয়ে যায় প্রায়ই । এ চুলটাকে ঠিকঠাক করে আবার সুন্দররূপে
ফিরিয়ে আনার কৌশল জানিয়েছেন
রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা আরমান ।
বৃষ্টির পানি, ধুলাবালি আর ঘামে
ভেজা চুলের চাই একটু বাড়তি
পরিচর্যা । বৃষ্টিভেজা চুল প্রথমেই
শুকনো তোয়ালে দিয়ে হালকা করে
মুছে নিতে হবে।
বাইরে বেরোলে অবশ্যই মনে করে ব্যাগে একটি ছোট তোয়ালে রেখে দিন । চুলটা ফ্যানের
নিচে বসে হালকা শুকিয়েও নিতে
পারেন। তারপর চুল বেঁধে নিন। এটা
হচ্ছে সাময়িক পরিচর্যা ।
বৃষ্টিতে ভেজা চুলের আসল যত্নটা নিন বাসায়
পৌঁছে । অবশ্যই চুল শ্যাম্পু করে নিন। এ
ঋতুতে চুল প্রতিদিন শ্যাম্পু করুন । এ
ক্ষেত্রে কোমল শ্যাম্পু বেছে নিন।
যদি প্রতিদিন শ্যাম্পুতে সমস্যা হয় তবে
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে চুল পরিষ্কার
করুন।
* প্রাকৃতিক শ্যাম্পু হিসেবে সরষের
খৈল বেছে নিতে পারেন । রাতে
ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ছেঁকে রসটা
চুলে লাগান ।
* রিঠা গুঁড়া করে ভিজিয়ে রেখে
ছেঁকে রসটি শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার
করতেl পারেন। সপ্তাহে দুই দিন চুলে
একটা প্যাক লাগান । প্যাকটা চুলের
ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে। প্যাক
হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন—
*এক চামচ ভিনেগার ও একটি ডিম
মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর
ধুয়ে ফেলুন ।
* টক দই ও ডিম একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে
লাগাতে পারেন। l
* হেনা গুঁড়ো অথবা প্রাকৃতিক
মেহেদি লাগাতে পারেন।
* বৃষ্টিভেজা চুলের জন্য গরম তেল
মালিশ খুবই ভালো । এ ক্ষেত্রে মাথার
তালুতে আঙুলের মাথা দিয়ে ঘষে
ম্যাসেজ করুন । তারপর গরম পানিতে
তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় ভাপ
নিতে পারেন।
* বৃষ্টিতে ভেজার কারণে এ ঋতুতে চুল
পড়ার প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে ।
কারণ, চুল স্যাঁতসেঁতে ও তৈলাক্ত হয়ে
পড়ে আর ধুলাবালি তো আছেই।
দুশ্চিন্তা না করে চুলের কিছু বাড়তি
পরিচর্যার পরামর্শ দিয়েছেন
ফারজানা আরমান ।
শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে নিচের প্যাক
লাগাতে পারেন।
* মুলতানি মাটি ভিজিয়ে রেখে
ফুলে উঠলে তা চুলে লাগান । পরে ধুয়ে
ফেলুন ।
* কলা ভালোভাবে চটকে নিন।
তারপর চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট
রেখে ধুয়ে ফেলুন ।
* মধু ও টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে
লাগাতে পারেন। তৈলাক্ত চুলের
ক্ষেত্রে।
* টক দই ও ভিনেগার মিশিয়ে
লাগাতে পারেন।
* ডিম, মাখন ও মাল্টার রস একসঙ্গে
মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন ।
* জাম্বুরার রস ও ডিম মিশিয়ে চুলে
লাগানো যায় । কোঁকড়া চুলের
ক্ষেত্রে।
* কলা ও এক চামচ টক দই, এর সঙ্গে অলিভ
অয়েল মিশিয়ে লাগাতে পারেন ।
সাধারণ চুলের ক্ষেত্রেও একই ধরনের
প্যাক লাগাতে পারেন ।
* এ তো গেল বৃষ্টিভেজা চুলের
পরিচর্যা । তবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের
কাজ হচ্ছে বাইরে বেরোনোর আগে
প্রস্তুতি নেওয়াটা। চুল পনিটেইল করে
বেঁধে নিন অথবা সুন্দর একটা খোঁপার
কাঁটায় আটকে নিন । আর একটা সুন্দর
ছাতা নিন ব্যাগে ভরে। এবার কিন্তু
বেরোনোর পালা।
যারা প্রতিদিন বাসার বাইরে বের হন, বর্ষাকালে
নোংরা পানি পায়ে লাগা
তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়।
নোংরা পানি ও স্যাঁতস্যাঁতে
আবহাওয়ার কারণে বর্ষাকালে
পায়ে ছত্রাক সংক্রমিত হওয়ার
সম্ভবনা বেশি থাকে। ফলে পায়ে
চুলকানি, জ্বালাপোড়া , ছোটছোট
ফুসকুরি , পায়ের তলা খসখসে হয়ে
যাওয়াসহ নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এছাড়া আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে
সাদা সাদা স্তর জমে থাকে, যা
দেখতে একেবারে বিচ্ছিরি লাগে।
পায়ের সঠিক যত্ন নিলে মিলবে এসব
সমস্যার সমাধান।
বাইরে থেকে ঘরে ফিরে
জীবানুনাশক দিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন।
পা পরিষ্কার করার সময় নখের কোণায়
জমে থাকা ময়লা ভালো মতো
পরিষ্কার করুন। নখ কেটে ছোট করে
রাখুন।
সম্ভব হলে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে পা ১০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে নরম ব্রাশ দিয়ে
পরিষ্কার করে ফেলুন।
অথবা গরম পানিতে ভিনেগার
মিশিয়ে পা ২০ মিনিট ভিজিয়ে
রেখে পরিষ্কার করুন। গোসল করার পর
পা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
বর্ষাকালে কখনো খালি পায়ে
হাটবেন না।
ভেজা জুতা কিংবা মোজা পরবেন
না। ভেজা জুতা কিংবা মোজা
পড়লে পায়ে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভবনা
থাকে। প্রতিদিন সুতি পরিষ্কার
মোজা ব্যবহার করুন। খোলামেলা ও
আরামদায়ক সেন্ডেল ব্যবহার করুন।
সপ্তাহে একদিন ঘরে বসে
পেডিকিউর করে নিন। রাতে ঘুমাতে
যাওয়ার আগে পায়ে অলিভ অয়েল
মেখে ঘুমাতে যান।
খাবারঃ
ঋতুভিত্তিক খাবার আমাদের সহায়তা
করে রোগ প্রতিরোধে। রাহিমা
সুলতানা বলেন, ‘বর্ষার সময় যে
সমস্যাগুলো আমাদের হয়, সেগুলোর
সমাধান পাওয়া যায় এ সময়ের
খাবারগুলোতে। এ ঋতুতে প্রচুর
পরিমাণে পানি পান করা উচিত,
শাকসবজি ও ফলমূল রাখুন প্রতিদিনের
খাবারের তালিকায়। মাছ-মাংস একটু
কম খেলে উপকার আপনিই পাবেন।’
সৌন্দর্য বাইরে প্রকাশিত হলেও
নিয়ন্ত্রিত হয় ভেতর থেকে।
অভ্যন্তরীণ কার্যক্ষম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে নিচের সহজ নিয়মটি মেনে
চলুন। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে
খেতে হবে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি, এক
টেবিল চামচ লেবুর রস ও এক টেবিল
চামচ মধু।
হজমের সমস্যা এই ঋতুতে প্রায়ই
হতে পারে। এ সমস্যা দূর করতে রইল
ছোট্ট একটি টিপসঃ
এক টেবিল চামচ আদার রস, সিকি
টেবিল চামচ জিরার পাউডার ও আধা
কাপ স্বাভাবিক মাত্রার পানি
মিশিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন,
উপকার পাবেন ।
ভেষজ স্নানঃ
সারা দিনের দুর্বলতা, ক্লান্তিকর
ভাব ও চাপ দূর করতে নিন ভেষজ
পদ্ধতিতে গোসল। জেনে নেওয়া
যাক, কীভাবে তৈরি করবেন আপনার
ভেষজ স্মান।
দরকারঃ নিমের পাতা, চায়ের
পাতা, তুলসীর পাতা ও কাঁচা হলুদ গরম
পানিতে ফুটিয়ে নিন। পরে এক
টেবিল চামচ জলপাই বা তিলের তেল
মেশান। ঘরে থাকলে জয়ফল দিতে
পারেন, যা জীবাণুনাশক হিসেবে
কাজ করবে। গোসলের শেষে ভেষজ
উপকরণসমৃদ্ধ পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে
ফেলুন।
সূত্র : টি নিউজ
No comments:
Post a Comment