তিন তরুণের গার্মেন্টস ব্যবসায় এগিয়ে চলার গল্প

উ‌দ্যোক্তার খোঁ‌জে: চট্টগ্রাম থেকে কখনও রাজধানী শহর ঢাকা আবার কখনও বা উত্তর বঙ্গের জনপদে। দিনের পর দিন ঘুরে বেড়িয়েছেন ব্যবসার খোঁজে। কি করবেন কি করবেন। কোথা থেকে শুরু করবেন কিভাবে শুরু করবেন ভাবতে ভাবতে এক সময় রাজশাহীতে ছোট্ট একটি সাহসী উদ্যোগ নিয়ে এক একরের একটি আম বাগান তিন বছরের জন্য লীজ নিয়ে ফেললেন মাত্র ৫৭,০০০ হাজার টাকায়। কিন্তু যার চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন সে কিভাবে থেমে থাকবেন মাত্র একটি সিজনের ক্ষুদ্র ব্যবসা নিয়ে।

আবার ঢাকার পথে, নারায়নগঞ্জের পথে প্রান্তরে, অলিতে গলিতে একটি ব্যবসার খোঁজে যেখান থেকে বড় হওয়ার স্বপ্নটাকে বাস্তবে রুপ দিতে পারবেন। মাদ্রাসায় পড়াশুনা করলেও বর্তমানে ঢাকা কলেজে অনার্স করছেন এ উদ্যোক্তা। আর এগিয়ে চলেছেন স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দেওয়ার সাহসী পথে। শুরুটা খুব বেশী ভাল ছিল তা নয়। গার্মেন্টস ব্যবসার কোন রকম পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও আরও দুই জনকে সাথে নিয়ে নেমে পড়েন কাজে।

শুরুটা ছিল মাত্র তিনটি মেশিন দিয়ে। না ছিল কাপড় সম্পর্কে আইডিয়া না জানা ছিল কাপড় তৈরীর পুরো প্রক্রিয়া। কোথা থেকে প্রয়োজনীয় সুতা বোতাম কিনতে হয়, কিভাবে কোথা থেকে কাজ পাবে সে সম্পর্কেও ভাল ধারনা ছিল না। সহযোগী দুই জন আর এই ব্যবসায় জড়িতদের কাছ থেকে এক এক করে শিখেছেন সবই। সবকিছু গুছিয়ে যখন শুধুই এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশ্যায় পা বাড়িয়েছেন ঠিক তখনই এক ধাক্কা।

মাঝপথে সহযোগীদের অসহযোগীতা শুরু। এক পর্যায়ে সহযোগী দুই জন ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিতে থাকে। কিন্তুু সেই দুঃসময়েও হাল ছাড়েননি তরুন উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন। সমস্ত বাধা মোকাবেলা করে আরও নতুন উদ্যোমে শুরু করেন এগিয়ে চলা। তার সাহসী উদ্যোগের সহযাত্রী হয়ে হাতে হাত রেখে নতুন করে এগিয়ে আসে আরও দুজন স্বপ্নোজ্বল তরুন সাখাওয়াৎ হোসেন ও মীর মোবাশশীর।

এগিয়ে চলার এ সময়ে যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন মেশিন। বাড়তে থাকে কর্মযজ্ঞ। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোতে থাকেন সামনের দিকে। কিন্তু বড় অর্ডার না পাওয়ায় বেশ বেগ পোহাতে হয় ফ্লোর চালাতে। শ্রমিকদের পর্যাপ্ত কাজ দিতে না পারায় ক্ষতির সম্মূখীন হতে হয়। তার পরও থেমে থাকেননি। মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাতে থাকেন কিভাবে বড় অর্ডার পাবেন। বড় বড় গার্মেন্টস ও বায়িং হাউজ গুলোর সাথে যোগাযোগ বাড়াতে থাকেন প্রতিনিয়ত।

তারই ফসল হিসেবে তাদের আগ্রহ দেখে সাহস করে প্রথম বড় অর্ডারটি এনে দেন রাশিয়ান বায়িং হাউজ থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাসান। আর প্রথম পাওয়া এ অর্ডারের কাজ করার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় বেগ পোহাতে হলেও সঠিক সময়ে কাজটি ডেলিভারী করতে সক্ষম হন। এর পর থেকে আর বড় ধরেনের কোন বেগ পোহাতে হয়নি। এগিয়ে চলেছেন বেশ সাচ্ছন্দেই। দেড় বছরের ব্যবসায়িক সময়ের ব্যবধানে এখন মেশিনের সংখ্যা ১৭টি। কর্মসংস্থানের তেরী হয়েছে প্রায় অর্ধশত লোকের। যেকোন ধরনের নীট আইটেম এর প্রোডাক্ট তৈরী করতে সক্ষম বেলাল হোসেনের বিএসএম ফ্যাশন।

বিএসএম ফ্যামিলির পথচলার এ সল্প সময়ে রাজধানীর গুলিস্তানে বিএসএম লাইফষ্টাইল নামে নিজস্ব শোরুম পরিচালিত হচ্ছে অক্টোবর থেকে। এখানে নিজস্ব ব্যান্ডের সতন্ত্র ডিজাইনের এক্সপোর্ট কোয়ালিটির তৈরী পোশাক বিক্রি হচ্ছে খুচরা ও পাইকারী দামে।

বিএসএম ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তরুন উদ্যোক্তা বেলাল হোসেনের সাথে কথোপকথনের সময় বলেন যারা আগামীর উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের সাহস ও বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে জানতে হবে। তিনি আরও বলেন হাজার হাজার ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে দিনের পর দিন চিন্তা ভাবনা না করে লক্ষ ঠিক করে একটা ব্যবসা শুরু করে দিন। ধৈর্য্য আর সততা নিয়ে এগোতে থাকুন। সফলতা অবশ্যই হাতের মুঠোয় আসবে।

বেলাল হোসেনের আর এক বড় সহযোদ্ধা সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন শুধু চোখে স্বপ্ন রেখে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে সাফল্য আসবে না। সাফল্যের জন্য প্ররিশ্রমী হতে হবে। এগিয়ে যেতে হতে হলে অবশ্যই প্রতিটা সম্পর্ককে সম্মান করতে হবে। কারও সাথে খারাপ আচরন করা চলবে না।

তাদের আরেক সহযোগী মীর মোবাশশীর হোসেন নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্যেশ্যে বলেন যেকোন কাজে ধৈয্য ধরার কোন বিকল্প নেই। প্রতিটা কাজে আল্লাহর সাহায্য পার্থনা করে শুরু করলে তাতে সফলতা মিলবেই। আর ইতিবাচক মনোভবের লোকদের সাথে ‍চলার পরামর্শ দেন তিনি। আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন ভাল চিন্তার ফলাফল সবসময় ভালই হয়।

সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিব আমি মাসুদুর রহমান মাসুদ। সেই সাথে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি উদ্যোগী এ তিন তরুনকে যারা তাদের শত ব্যস্ততার মাঝেও এগিয়ে চলার গল্প শুনিয়েছেন আমাদের। উদ্যোক্তার খোঁজের সাথে থাকতে আমাদের পেইজে লাইক দিতে ভুল করবেন না। সেই সাথে আপনার সফলতার গল্প আমাদের জানাতে চাইলে ফোন করুন ০১৭৩৫২৮৪৬১৭ এই নাম্বারে।
www.facebook.com/uddoktarkhoje

No comments:

Post a Comment