নতুন ব্যবসা শুরুর পূর্বে কিংবা শুরুর পর উদ্যোক্তাদের প্রধান চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় এর জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। আর ব্যবসাটি টিকিয়ে রাখতে কিভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে, এমনটা জানা না থাকলে যে কোনো নতুন উদ্যোক্তারই বিপদে পড়ার মতো অবস্থা হয়। এমন উদ্যোক্তাদের জন্যই এবারের লেখা। এতে থাকছে নতুন ব্যবসার জন্য অর্থ সংগ্রহের আটটি উপায়।
১. নিজের অর্থঃ
বহু উদ্যোক্তাই সফল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন সম্পূর্ণ নিজের অর্থে। নিজে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে তা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারলে সবচেয়ে নির্ভাবনায় থাকা যায়। আর এটি ব্যবসা শুরুর একটি বনেদি উপায় হিসেবে খ্যাত। অল্প ব্যয়ের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে। তবে ব্যয় যদি বেশি হয় তাহলে অন্য উৎস দেখতেই হবে। আর এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার আগেই ব্যবসার খরচের পাশাপাশি নিজের জীবনযাপনের খরচও হিসাব করতে হবে।
২. ব্যবসা ঋণঃ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ দেয়। আর নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরনের ঋণ নেওয়া কিছুটা কঠিন হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। আপনি যদি ব্যাংকগুলোর সব চাহিদা পূরণ করতে পারেন তাহলে ঋণ পাওয়াও সম্ভব। এক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে পেশাগত জীবনে আপনার ইমেজ ও পরিচিতি। এ ছাড়া ভালোভাবে করা বিজনেস প্ল্যান ঋণদাতাদের সন্তুষ্ট করতে সহায়ক হতে পারে।
৩. ব্যক্তিগত ঋণঃ
ব্যবসা শুরুর পর সেটা টিকিয়ে রাখার জন্য উদ্যোক্তার যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হয়। আর এসব চেষ্টার অন্যতম হতে পারে ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে তা ব্যবসায় বিনিয়োগ করা। অনেকেই নিজের বাড়ির উন্নয়ন কিংবা গাড়ি কেনার কথা বলে ঋণ নিয়ে তা ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। এ ছাড়া এ ধরনের পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে অনেকেই ধার করার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহে কিছুটা সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। যাদের দ্রুত অর্থ প্রয়োজন হতে পারে, তাদের কাছ থেকে অর্থ না নেওয়াই ভালো। কারণ ব্যবসায় ক্ষতি হলে এ অর্থ শোধ করতে আপনার বহু বছর লেগে যেতে পারে।
৪. আর্থিক প্রণোদনা ও সহায়তাঃ
আপনি যদি দারুণ কোনো ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেন তাহলে আর্থিক প্রণোদনা বা সহায়তার সন্ধানও পেয়ে যেতে পারেন। বহু দেশের সরকার এ ধরনের সহায়তা দেয়। অনেক স্থানে সরাসরি অর্থসহায়তা না দিলেও অন্যভাবে সহায়তা দেওয়া হয়। যেমন: সহজ নীতিমালা, ট্যাক্স ছাড়, সহজ শর্তে ব্যবসা পরিচালনার স্থান, মূলধন সহায়তা, পণ্য পরিবহনে সহায়তা কিংবা ক্রেতা খুঁজতে সহায়তা দেওয়া।
৫. কৃচ্ছতা সাধনঃ
ব্যবসার প্রাথমিক অবস্থায় উদ্যোক্তা নানাভাবে কৃচ্ছতা সাধন করতে পারে। প্রচুর পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে যথাসম্ভব কম খরচ করে ব্যবসা পরিচালনা করা এ ধরনের একটি উদ্যোগ। এজন্য প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষনতা।
৬. সরকারি সহায়তাঃ
বাংলাদেশসহ বহু দেশেই সরকার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সহায়তার ব্যবস্থা রাখে। এ ছাড়া রয়েছে ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ ও তার পাশাপাশি অর্থ ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা।
৭. বিনিয়োগকারী খুঁজে দেখুনঃ
আপনি যদি ব্যবসার দারুণ কোনো আইডিয়া নিয়ে আসতে পারেন তাহলে তা বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে পারে। আর এভাবে আপনি যেমন ব্যবসা ভালোভাবে চালানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন; তেমন পারবেন দ্রুত সাফল্য অর্জন করতেও। নতুন বিনিয়োগকারী পেলে অবশ্য আপনার ব্যবসার মালিকানাও ভাগাভাগি করতে রাজি থাকতে হবে। আর বিনিয়োগকারীরা সাধারণত উচ্চ প্রবৃদ্ধির ব্যবসার ক্ষেত্রেই এগিয়ে আসেন। এর মধ্যে থাকতে পারে প্রযুক্তি, বায়োটেকনোলজি কিংবা বিকল্প জ্বালানীশক্তি।
৮. সাধারণের অর্থ সংগ্রহঃ
ক্রাউডফান্ডিং নেটওয়ার্ক নামে একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যারা দারুণ সব আইডিয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে সহায়তা করে। আর এতে অর্থ দেয় সাধারণ জনগণ। আপনার যদি দারুণ কোনো সৃজনশীল আইডিয়া থাকে তাহলে এদের সাহায্য নিতে পারেন। এ ছাড়াও আপনার যদি যথেষ্ট সুনাম থাকে তাহলে পরিচিত-অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে ব্যবসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করাও অসম্ভব নয়।
No comments:
Post a Comment