মনপুরা দ্বীপ : অপরূপ সৌন্দ‌র্যের লীলাভূ‌মি

বাংলাদেশের বৃহওম রূপালী দ্বীপ ও অপরূপ সৌন্দ‌র্যের ম‌নোমুগ্ধকর দর্শণীয় জায়গা হ‌চ্ছে মনপুরা। চতুর্দিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ-শ্যামল ঘেরা মনপুরা। সুবিশাল নদী, চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগানে সমৃদ্ধ। মনপুরা উপজেলা দেশের মানুষের কাছে যেমন আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গা তেমনি বিদেশিদের কাছেও। এ দ্বীপে সকালবেলার সূর্য যেমন হাসতে হাসতে পূর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়; তেমনি বিকেল বেলাতে আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে অস্ত‌মিত দৃশ্যও চো‌খে প‌ড়ে।
বাংলাদেশের বৃহওম দ্বীপ ভোলা জেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এক‌টি দ্বীপ মনপুরা। মেঘনার কোলে লালিত
সবুজ-শ্যামল ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা। ভোলা জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পুর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষে মেঘনার মোহনায় ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলা প্রায় দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস।

এখানে না আসলে বোঝাই যাবেনা সবুজের দ্বীপ মনপুরায় কি সৌন্দর্য লুকায়িত আছে। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় পুরানো এ দ্বীপটি। পর্যটক আর ভ্রমন পিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেয়ার বহু উপকরণ রয়েছে এ দ্বীপে। মনপুরাতে এসেই কেবল সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা যায়।
মিয়া জমিরশাহ’র স্মৃতি বিজড়িত মনপুরা দ্বীপ অতি প্রাচীন। একসময় এ দ্বীপে পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় কেশওয়ালা কুকুর। মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচেছ ম্যনগ্রোভ প্রজাতির সারিসারি বাগান। মনপুরায় ছোট বড় ৮ থেকে ১০ টি চর ও বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যাম্পাস মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এসব চরাঞ্চল। এই চরগুলো হলো চরতাজাম্মুল, চর পাতালিয়া, চর পিয়াল, চরনিজাম, চর সামসুউদ্দিন, ঢালচর, চর বদনা, চর জামশেদ, কলাতলীর চর ইত্যাদি।

মনপুরা সদর থেকে ২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে মনপুরা ফিশারিজ লিমিটেড। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২শ’ ১০ একর জমিতে গড়ে উঠা খামার বাড়ীটি গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। খামার বাড়িতে সারি সারি নারিকেল গাছ ও বিশাল ৪ থেকে ৫টি পুকুর রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন খামার বাড়িটি হতে পারে পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ। খামার বাড়িটির পূর্ব পাশেই বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাগান। মাঝে মধ্যে এখানে হরিণও দেখা যায়।

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থাই মনপুরার প্রধান সমস্যা। মন চাইলে যে কেউ মনপুরা আসতে বা যেতে পারবে না। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালিত হয় রুটিন মাফিক। প্রতিদিন ঢাকা থেকে একটি লঞ্চ বিকাল সাড়ে ৫টার সময় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে মনপুরা হয়ে পরদিন সকাল ৯টার সময় হাতিয়া পৌছে। ঐ লঞ্চটি আবার হাতিয়া থেকে ছাড়ে দুপুর ১২ টায়। মনপুরাতে আসে দুপুর ১টায় এবং ১ ঘণ্টা যাত্রা বিরতি থাকে রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে। মনপুরার মানুষ যে লঞ্চে করে ঢাকা থেকে মনপুরা আসেন আবার ঐ একই লঞ্চে করে ঢাকায় চলে যান। এছাড়া ঢাকা কিংবা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমুদ্দিন সি-ট্রাক ঘাট থেকে মনপুরা যাওয়া যায়। বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানায় সীমিত পরিসরে স্পীড বোট চলাচল করছে।
এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নদী পথটি ভয়ানক হিসেবে চিহ্নিত।

মনপুরাতে ভালোমানের পর্যটন হোটেল না থাকায় পর্যটকরা যেতে খুব একটা আগ্রহী হন না।
প্রাকৃ‌তিক দৃশ্য ছাড়াও এখানে বিশেষ বিশেষ কিছু খাবার লক্ষ্য করা যায়। শীতের হাঁস, মহিষের দুধের দধি, টাটকা ইলিশ, বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি। মেঘনা নদী থেকে ধরে আনা টাটকা ইলিশ ও চর থেকে আনা কাঁচা দুধের স্বাদই আলাদা।

মনপুরার মানুষ সহজ সরল প্রকৃতির। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে বসবাস করে। এখানকার মানুষ অতিথি পরায়ন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে যে কাউকে আপন করে নেয়।
রুপালী সৌন্দর্যের দ্বীপ মনপুরার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ভাল মানের হোটেল, যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে পারলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ নীলাভূমি রুপালী দ্বীপ মনপুরায়।

^
^
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ নীলাভূমি রূপালী দ্বীপ মনপুরা, @ পর্যটন স্পট, monpura, vola . ভোলার মনপুরা ঘু‌রে আ‌সি, ঘু‌রে বেরা‌নোর জায়গা মনপুরা দ্বীপ

No comments:

Post a Comment