ঘর বাড়ি‌র সৌন্দর্য বাড়া‌তে অ‌র্কিড লাগা‌নোর নিয়ম

বাড়িতেই দৃষ্টিনন্দন অর্কিড লাগাতে চান? নিয়মগুলো জেনে নিন
অর্কিড অনেকেরই প্রিয়। কিন্তু এ অর্কিড যদি বাড়িতে লাগাতে পারেন তাহলে কেমন হয়? এক্ষেত্রে অনেকেরই ধারণা অর্কিড লাগানো কিংবা বড় করা কঠিন। তবে বাস্তবতা হলো, কিছু অর্কিড রয়েছে যেগুলোকে সহজেই বড় করা যায়। এ লেখায় তুলে ধরা হলো অর্কিড পালনের কিছু নিয়ম। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।


১. শুরুর চ্যালেঞ্জ
অর্কিড পালন করা অনেকাংশে নেশার মতো। আপনি যদি একবার অর্কিড ভালোভাবে পালন শুরু করতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে এজন্য আগ্রহের অভাব হবে না। বাজারে বা নার্সারিতে যেসব অর্কিড পাওয়া যায় সেগুলোর অধিকাংশই হাইব্রিড প্রজাতির। এগুলো লালন-পালন কঠিন নয়। বাড়ি কিংবা অফিসে সামান্য কয়েকটা বিষয়ে মনোযোগী হলেই আপনি এটি পালন করতে পারবেন।

২. প্রথমে পালন করতে
আপনি যদি অর্কিড পালন শুরু করতে চান তাহলে মনে রাখতে হবে এমন সব অর্কিড নিন যেগুলো পালন করা সহজ। এক্ষেত্রে মথ অর্কিড হতে পারে একটি
আদর্শ। এছাড়া রয়েছে ফ্যালেইনপসিস ও ক্যাটলিয়া। এ অর্কিডগুলোতে বেশি আলো প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বিভিন্ন মাত্রার আর্দ্রতাও গ্রহণ করতে পারে এগুলো। তবে অতিরিক্ত আর্দ্রতা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত পানি দিলে এ অর্কিড মারা যেতে পারে। ভান্ডা নামে একটি অর্কিড প্রজাতি রয়েছে, যাকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। এটি সাধারণত অন্য গাছেও ওপর হয়। এ কারণে এটি বড় হওয়ার জন্য মাটি নয় প্রয়োজন গাছ ও বায়ু। এ গাছের মূল থাকে অন্য কোনো গাছ কিংবা পাথরে। অনেকেই ভুল করে অর্কিডকেও টবের মাটিতে লাগান। এতে গাছটির উপকারের তুলনায় ক্ষতি হয় বেশি।

৩. আলো
অর্কিড বড় করার জন্য সরাসরি রোদ নয় বরং আলো প্রয়োজন হয়। ক্যাটলিয়া ও বান্দ্রা প্রজাতির অর্কিডের জন্য অবশ্য উজ্জ্বল আলো প্রয়োজন হয়। তবে কম আলোতে অধিকাংশ অর্কিডই বাঁচতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি অর্কিড পালন করতে চান তাহলে মনে রাখতে হবে, এটি যতখানি আলো সহ্য করতে পারে ততখানিই দেওয়া উচিত। পুরু ও ঘন পাতার অর্কিড সাধারণত বেশি আলো গ্রহণ করতে পারে। অন্যদিকে হালকা-পাতলা প্রজাতির অর্কিড কম আলো গ্রহণ করতে পারে। অনেকেই নতুন অর্কিড লাগিয়ে বাড়ির ভেতরের প্রায় অন্ধকার স্থানে রাখেন। এতে অর্কিড মারা যায় কিংবা দুর্বল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জাতের আলোর প্রয়োজন অনুযায়ী অর্কিড জানালায়, বারান্দায় কিংবা এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত আলোময় স্থানে রাখতে পারেন।

৪. তাপমাত্রা
অর্কিডের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হতে পারে ২১ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রার মধ্যেই রয়েছে ফ্যালেইনোপসিস অর্কিড। সাধারণ বাজারে যে অর্কিডগুলো পাওয়া যায় সেগুলো আপনার বাড়ির তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবে, এমনটাই আশা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে বাড়ির তাপমাত্রা যেন খুব গরম কিংবা খুব ঠাণ্ডা না হয় সেজন্য মনোযোগী হতে হবে।

৫. আর্দ্রতা
অধিকাংশ অর্কিডই প্রায় ৭০ শতাংশ আর্দ্রতায় ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তবে বাতাসের আর্দ্রতা যদি তার চেয়ে বেড়ে যায় তাহলে অর্কিডকে সে আর্দ্রতা থেকে বাঁচাতে হবে। এছাড়া বাতাসের আর্দ্রতা যদি খুব কমে যায় তাহলে ঘন ঘন পানি স্প্রে করা যেতে পারে। তবে আর্দ্রতা বেড়ে গেলে বাড়তি পানি স্প্রে করা যাবে না।

৬. পুষ্টি
অর্কিডের বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। এর মধ্যে কয়েকটি উপাদান তারা গাছের কাণ্ড, পাথর, ধূলোবালি ইত্যাদি থেকে ও কয়েকটি উপাদান বাতাস থেকে নেয়।

৭. পানি সাবধান
অতিরিক্ত পানি দিলে অর্কিড মারা যেতে পারে। তাই যখনই মনে হবে যথেষ্ট আর্দ্রতা রয়েছে তখনই পানি দেওয়া বন্ধ করুন। বাজারে যেসব অর্কিড পাওয়া যায় সেগুলোর অধিকাংশই সপ্তাহে একবার করে পানি দেওয়ার জন্য উপযুক্ত। তবে অর্কিড যদি একেবারেই শুষ্ক হয়ে যায় তাহলে গাছের ক্ষতি হতে পারে। তাই সঠিক নিয়ম অনুযায়ী পানি দেওয়া উচিত।

৮. ছাঁটা
অর্কিড গাছ যদি প্রয়োজনীয় আকারে রাখতে চান তাহলে এটি ছেটে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, অপ্রয়োজনে কখনোই ছাটা উচিত নয়। এক্ষেত্রে পুরনো পাতা, শেকড় কিংবা অপ্রয়োজনীয় অংশ কাঁচি দিয়ে ছেটে দিতে পারেন। তবে ছাটার আগে ছুরি-কাঁচি বা টুলগুলো সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে ভুলবেন না। অন্যথায় রোগাক্রান্ত হতে পারে আপনার অর্কিড।
©kalerkantho

No comments:

Post a Comment