ঘুরতে যে‌তে পারেন অপরূপ সা‌জের বড়লেখায়

চির সবুজের দেশ বাংলা‌দেশ। নৈস‌র্গিক দৃ‌শ্যের যে‌নো মিলন মেলা প্রিয় এই দেশ‌টি। তেম‌নি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলার উত্তর প্রান্তিক জনপদ বড়লেখা। পর্যটকদের মুগ্ধ করার জন্য এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড, এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি ও পাখপাখালির অভয়াশ্রম হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের পাখিবাড়ি, যা পর্যটকদের মনকে মাতিয়ে রাখবে। ম‌নে হয়, ভরা যৌবনে হাকালুকির স্বচ্ছ জলরাশির শান্তভাব যেনো প্রকৃতির বুকে শীতলপাটি বিছিয়ে দেয়।
এছাড়াও রয়েছে নতুন সৃষ্ট ঝরণা, ছয় শ' বছরের পুরনো খোঁজার মসজিদ, জুড়ীতে সৃষ্ট নতুন আরেকটি ঝর্ণা। এসব ছাড়াও পাহাড়-টিলা, চা বাগান
তো রয়েছেই।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত : মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে যাওয়ার উত্তম সময় হলো বর্ষাকাল। এই সময় ঝর্ণা পানিতে পূর্ণ থাকে। এই স্বর্গীয় আমেজের খুঁজেই ঘুরে আসতে পারেন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে। কয়েক যুগ ধরে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের অঝরধারা প্রবাহমান থাকলেও সত্তরের দশকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটির পরিচিতি পায়।

বড়লেখা উপজেলার ৮নং দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঁঠালতলী) ইউনিয়নের গৌড়নগর মৌজায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের অবস্থান। প্রায় দুই শ' ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, সুবিশাল পর্বতগিরি, শ্যামল-সবুজ বনরাজিবেষ্টিত ইকোপার্ক, পাহাড়ি ঝরণার প্রবাহিত জলরাশির কলকল শব্দ সব মিলিয়ে মাধবকুণ্ড বেড়াতে গেলে পাওয়া যায় এক স্বর্গীয় আমেজ। সম্প্রতি জলপ্রপাতের পাশ ঘেঁষে যাওয়া খালটির উপর নির্মাণ করা হয়েছে কৃত্রিম পাখি, মৎস্যকন্যা, মাছ প্রভৃতির দৃষ্টিনন্দন সব মূর্তি।

জলপ্রপাত এলাকায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় নির্মিত হয়েছে রেস্ট হাউস, পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে রেঁস্তোরা। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় স্থাপিত দেশের প্রথম ইকোপার্ক, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, আশপাশ এলাকার চা বাগান, পাহাড়ি টিলা, হাকালুকি হাওর দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের দিন দিন কাছে টানছে।

হাকালুকি হাওর : বর্ষা আর হেমন্ত- এ দুই মৌসুমে প্রকৃতির বুকে দুই ধরণের চিত্র ধারণ করে হাকালুকি হাওর। ভরা যৌবনে হাকালুকির স্বচ্ছ জলরাশির শান্তভাব যেনো প্রকৃতির বুকে শীতলপাটি বিছিয়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখে বিমোহিত হন পর্যটকরা। স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটেন অনেকেই। হাকালুকির এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে হলে বড়লেখার অংশে অবস্থান করতে হয়। সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা। এক শ'-দুই শ' টাকায় স্থানীয়রা ছোট ট্রলারে করে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখান হাকালুকির তীরবর্তী এলাকা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় হাওরের জলরাশির মধ্যে সূর্যের প্রতিচ্ছবি মুগ্ধ করে পর্যটকদের। এছাড়া হাওরের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নির্মিত ওয়াচ টাওয়ার এবং বন্যপ্রাণি বিভাগের স্থাপনা নজর কাড়বে যে কারো।

বাড়িপাখি : প্রায় তিন যুগ ধরে হাকালুকি হাওর এলাকায় অতিথি পাখির অভয়াশ্রম ও পাখির মেলা বলতে প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমীরা এ বাড়িকেই বুঝে থাকেন। দেশি-বিদেশি পাখির দখলে চলে যাওয়ায় বাড়ির প্রকৃত মালিক মনোহর আলীর নাম চাপা পড়ে পাখিবাড়ি নামে পরিচিতি পেয়েছে এ বাড়িটি। বড়লেখা পৌর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে হাকালুকি হাওরের পূর্বপাড়ে হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে পাখিবাড়িটির অবস্থান। দিনের প্রতিটি মুহূর্ত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এ বাড়িসহ চারপাশের এলাকা।
শীত মৌসুম ছাড়াও বছরজুড়ে মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়ি পাখির আনাগোনায় মুখরিত থাকে। তবে শীতের আগমনী বার্তার সাথে পাখির সমাগমও বৃদ্ধি পায়। হাজার হাজার পাখির আগমনে পুরো এলাকা যেনো পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নামার সাথে হাওরের বিভিন্ন বিল- জলাশয় থেকে পাখিরা এসে আশ্রয় নেয় মনোহর আলীর পতিত বাড়ির বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালিতে। ভোর হলেই পুনরায় খাদ্যের সন্ধানে পাখিরা ছুটে চলে হাওরের বিল আর জলাশয়ে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পাখি দেখতে ও কলতান শুনতে গমন করেন মনোহর আলী মাস্টারের বাড়িতে। বিশেষ করে ছুটির দিনে পাখির টানে পাখিপ্রেমীরা বেশি ভীড় জমান।
^
^
ভ্রমন, সুন্দর স্থান, নৈসর্গিক বড়লেখা, ঘোরার জায়গা, মৌলভীবাজার ভ্রমন, পর্যটন জায়গা, স্থান

No comments:

Post a Comment