আইএস-এর ভিশন মিশন কি ইসলাম প্র‌তিষ্ঠা করা?

আইএস-এর লক্ষ ও উ‌দ্দেশ্য কি ইসলাম প্র‌তি‌ষ্ঠিত করা না মুস‌লিম বিশ্বের মা‌ঝে বিভ‌ক্তি সৃ‌ষ্টি ক‌রে- সন্ত্রাস সৃ‌ষ্টি ক‌রে; বিশ্ব‌কে জা‌নি‌য়ে দেয়া যে, মুস‌লিমরা সন্ত্রাসী জা‌তি, তারা সন্ত্রা‌সের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা। বিশ্বে মুসলমান‌দের থাকার অ‌ধিকার নেই!
একথা দিবাল‌কের ম‌তো সত্য যে, ইসরাঈলের কুখ্যাত গো‌য়েন্দা সংস্থা 'মোসাদ' ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'সিআইএ'-র প্রত্যক্ষ ও প‌রোক্ষ মদ‌দে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামের জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছে। আইএস'রা মুসলমান নয়, মুসলমান লেবাসধারী কাল‌পিট মোসাদ সিআইএ'র এ‌জেন্ট। তারা ইসলাম ও জিহা‌দের দোহাই দি‌য়ে যে ইসলামী খিলাফ‌ত প্র‌তিষ্ঠা ও সাধারণ জনগন‌কে হত্যার কথা ব‌লে। তা কখনই প‌বিত্র ইসলাম ধর্ম সমর্থন ক‌রে না। মধ্যপ্রা‌চ্যে অ‌নেক আইএস'কে ব‌ন্দি করার পর প্রমাণ পাওয়া গে‌ছে যে, তারা
ইহুদী না হয় ইহুদী সম্প্রদা‌য়ের লোক।
আইএস'র একমাত্র লক্ষ ও উ‌দ্দেশ্য হ‌লো ইসলা‌মের না‌মে, মুস‌লিম নাম ধ‌রে মানবতা‌বি‌রোধী কাজকর্ম ক‌রে, বি‌শ্বের কা‌ছে মুস‌লিম‌দের শত্রু বা‌নি‌য়ে- পৃ‌থিবী থে‌কে মুসলমান‌দের নাম-নিশানা চিরত‌রে মি‌শি‌য়ে দেয়া। কিন্তু তারা জা‌নেনা যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ইসলা‌মের পৃষ্ট‌পোষক।
ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড দ্য লেভান্ট (সংক্ষেপে আইসিল) ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকারী একটি সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী। এছাড়াও তারা লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল, মিশরের সিনাই উপদ্বীপ এবং মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় রয়েছে। এছাড়াও এই দল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড সিরিয়া বা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড আল শাম (সংক্ষেপে আইসিস) নামেও পরিচিত। ২০১৪ সালের জুনে দলটির নাম বদলে ইসলামিক স্টেট (আইএস) রাখা হয়।
অত্যন্ত প‌রিতা‌পের বিষয় হ‌চ্ছে যে, আইএস'কে ঘি‌রে মুস‌লিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ থাকার প‌রিব‌র্তে শিয়া-সু‌ন্নি‌তে বিভক্ত হ‌য়ে একে অ‌ন্যের উপর দোষা‌রোপ চলছে। তা‌তে কুচক্রীমহল আরও বেশি সু‌বিধা ভোগ কর‌ছে। আসলে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে কিছু বিষয়ে মতভেদ থাকলেও অনেক মৌলিক বিষয়েই রয়েছে মিল। উভয় মাজহাবই এক আল্লাহ, পবিত্র কুরআন এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সর্বশেষ নবী হিসেবে মানেন। উভয় মাজহাবই পরকালের প্রতি তথা পুনরুত্থান ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ও নারীদের পর্দা করা ফরজ হওয়ার বিষয়সহ আরো অনেক বিষয়েই একমত। শিয়া-সু‌ন্নি কেউই আইএস তথা সন্ত্রাসবাদীতায় বিশ্বাস ক‌রে না। কারণ প্রকৃত কোরআন-হাদীস দি‌ক্ষিতরা কখনই চরমপন্থায় যে‌তে পা‌রে না।
তবুও ইসরাঈল-মা‌র্কিন মুস‌লিম নিধন কৌশ‌লের কা‌ছে আমরা পরা‌জিত শুধুমাত্র মুস‌লিম ভেদা‌ভে‌দ আর ক্ষমতার দ্ব‌ন্দের কা‌র‌ণে।
স্বভাবতই প্রশ্ন জা‌গে, বিশ্বত্রাস আইএস'র অর্থ যোগানদাতা কে ?
হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা আইএস'র অর্থনীতির ভিত কি ?
এ‌তো পোষাক, গা‌ড়ি, অত্যাধু‌নিক অস্ত্র তারা পায় কি করে ?
আর অর্থ, বাড়ি, গাড়ি, অস্ত্র, সা‌পোর্ট দিচ্ছে তারাই, যারা ইসলাম ও মুসলমানকে ধ্বংস করতে ইহুদী-মা‌র্কিনপন্থী গোষ্ঠী আইএস সৃষ্টি করেছে। উইকিলিকসও ইহুদী-মা‌র্কিন-আইএস সম্পৃক্তার মুখোশ উ‌ন্মোচন ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। দে‌শি-বি‌দে‌শি বি‌ভিন্ন মি‌ডিয়ায় বি‌ভিন্ন সম‌য়ে প্রকা‌শিত তথ্য এরকম, * বাগদাদি ও মোসা‌দের গোপন বৈঠক; * আমেরিকাই আইএসআইএল'র অর্থ যোগানদাতা; * আইএ‌স'র পৃষ্ঠ‌পোষকতায় ইসরাঈল * আ‌মে‌রিকা-ইসরাঈ‌লের আইএস সম্পক্ততা * আইএসকে অর্থ দেয় ৪০টি দেশ: ব‌লে‌ছেন মি. পুতিন; * আমেরিকা আইএস‌'কে অস্ত্র, গাড়ি ও টাকা দেয়; * বিমান থেকে আইএসআইএলের জন্য অস্ত্র ফেলল আমেরিকা।।
সারা বি‌শ্বের অস্ত্রের প্রায় ৩০ ভাগ নিয়ন্ত্রন করে আমেরিকা। আর আ‌মে‌রিকা‌কে নিয়ন্ত্রন ক‌রে ইসরাঈল। এরা মুস‌লিম নিধ‌নে আইএস'র মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি ক‌রে; তা‌দের পক্ষ-বিপক্ষ শ‌ক্তির কা‌ছে অস্ত্র বিক্রি করে।
আমে‌রিকা-ইসরাঈল'র সাহায্যপুষ্ট আইএস এতোটাই অদম্য ছি‌লো যে, তা‌দের সামনে সব আধু‌নিক মারণাস্ত্র বিকল। তারা অপ্রতিরোধ্য, দুর্দমনীয়। কিন্তু যখন রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা‌র্থে ও তার দে‌শের হুম‌কিস্বরুপ মিত্র‌দেশ সি‌রিয়ার আইএসকে আঘাত করতে শুরু করল। পাশাপা‌শি ফ্রান্স আইএস দ্বারা আক্রান্ত হ‌লে; রা‌শিয়া-ফ্রান্স জোট বে‌ধে আইএস দম‌নে সর্বশক্তি নি‌য়োগ ক‌রে। সপ্তাহ ঘুর‌তেই দেখা গেল আইএস দুর্গ ভেঙ্গে পড়েছে। আইএস তখন খোলস ছা‌ড়ি‌য়ে বি‌শ্বের বি‌ভিন্ন দে‌শে হত্যাযজ্ঞ চালা‌তে থা‌কে। যা‌দের সর্ব‌শেষ শিকার বাংলা‌দেশ। য‌দিও বাংলা‌দেশ সরকার আইএস'র সম্পৃক্ততা অ‌স্বীকার ক‌রে।
এখা‌নে উ‌ল্লেখ্য যে, আইএস য‌দি স‌ত্যিকার অ‌র্থেই খেলাফত প্র‌তিষ্ঠা কর‌তে চায়; ত‌বে সর্বপ্রথম ইসলা‌মের স্বীকৃত শত্রু‌দের বিরু‌দ্ধে ইসলাম সম্মত ল‌ড়েই- সেই কাজ‌টি করা উ‌চিত ছিল। কিন্তু না; আইএস সেটা না ক‌রে বরং একের পর এক মুস‌লিম রাষ্ট্রগু‌লো‌কেও তা‌দের টা‌র্গে‌টে প‌রিণত কর‌ছে। অথচ আজ পর্যন্ত যত হামলা-হুম‌কি জা‌রি হ‌য়ে‌ছে, তা‌তে ইসরাইলের বিরু‌দ্ধে কোন রকম উচ্চবাচ্য লক্ষ করা যায়‌নি বা একটি পশমও স্পর্শ করেনি।
কারণ এ বিশ্বে যত অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তার মুলে ইসরাঈল-আ‌মে‌রিকার স্বার্থ ও মুস‌লিম নিধন নীতিই দায়ী। আর আইএস নামক পরজীবীতো আ‌ছেই।
আইএস'র কর্মকা‌ন্ডে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে তাদের সাথে ইসলাম বা জিহাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এরা শুধু ইসলামের নাম ব্যবহার করে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে।
আইএস সংগঠনটির সব রকম কাজ ইসলাম সম্মত আর তারা বিশ্ব জুড়ে ইসলামিক আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায় ! এটাই তারা প্রচার ক‌রে বেড়ায়। তা‌দের এই প্রচা‌রের ফলে পুরো বিশ্বের সামনে ইসলামের ভাবমূর্তি নস্ট হচ্ছে। তার উপর এভাবে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করতে থাকলে বি‌শ্বে মুসলিম বিরোধী শক্তির সৃষ্টি হবে। পাশাপা‌শি বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে তার দ্বায় স্বীকার করে আইএস জানান দি‌চ্ছে‌  যে মুস‌লিম দেশগু‌লো উগ্রবাদ, জ‌ঙ্গিবা‌দের আঁখড়া। এর ফলে একসময় সব শক্তিশালী অমুসলিম দেশগুলো তখন জঙ্গি দমনের নামে নির্বিচারে মুস‌লিম দেশগু‌লো‌তে তথা মুসলমানদের উপর হামলা করে মুসলিম বিশ্বকে সিংহাসন ছাড়া রাজা বা‌নি‌য়ে দেবে।
মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী এই ধারনা দিতে তৈরি করা হল আল কায়দা। এরপরে শুধু সন্ত্রাসী না ভয়ঙ্কর অত্যাচারী, নৃশংস আর মানবতাবিরোধী রূপে তৈরি করা হল আইএস। তারা ডর-পরাজয়হীন এটা প্রমাণের জন্য বছরের পর বছর ধরে নাটক মঞ্চা‌য়িত হলো। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়ে গেল যে মুসলমানরা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। শান্তির ধর্ম ইসলাম রাতারাতি হয়ে গেল সন্ত্রাসী আদর্শ!
বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামী শাসনব্যবস্থা’ কায়েমের আদর্শে মত্ত আইএস ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি। মোসাদ আইএস'র সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর আইএস'র সব মারণাস্ত্রগু‌লো যুক্তরা‌ষ্ট্রের দেয়া।
@ অতএব এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কারা আইএস তৈরি করেছে। কারা তাদের অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দি‌চ্ছে। কি জন্য তা‌দের কর্মকান্ড প‌রিচা‌লিত হ‌চ্ছে।

No comments:

Post a Comment