দীনের ওপর অটল ও অবিচল থাকা মহান আল্লাহর নিয়ামতসমূহের মধ্যে অন্যতম। এজন্য বলা হয়, ‘দীনের ওপর অটল থাকা এক হাজার কারামত থেকে উত্তম।’
বস্তুত দীনের ওপর অটলই হলো মূল বস্তু। এটা ছাড়া কোনো কিছুই অর্জিত হয় না। মহান আল্লাহ তাঁর পথকে ‘মুস্তাকিম’ বলেছেন। যার অর্থ সরল সুদৃঢ় ও অটল। আলেমরা বলেন, ‘ইস্তিকামাত’ বা আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকার অর্থ হলো, সব কাজে নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য করা। চরম শিথিল ও বাড়াবাড়ির মাঝামাঝি পন্থায় নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের (নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সালেহিন) পথ সিরাতে মুস্তাকিমের অনুসরণ করা। তিনি বলেন, ‘আর এটিই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না।
তাহলে তা তোমাদের তার পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। এসব বিষয় তিনি তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা (ভ্রান্ত পথসমূহ থেকে) বেঁচে থাকতে পারো। ’ (সূরা আনআম : ১৫৩)। আল্লাহর পথ সুদৃঢ়। যা ভঙ্গুর নয়, পরিবর্তনশীল নয়, বরং সদা মজবুত এবং অপরিবর্তনীয়। যা কারও অনুগামী হবে না। বরং সবাই তার অনুসারী হবে। যা যুগের হাওয়ায় পরিবর্তন হয় না। বরং যুগকে সে পরিবর্তন করে। অতএব সিরাতে মুস্তাক্কিমের অনুসারীদের জন্য দীনের ওপর ইস্তিকামাত বা অটল থাকা অপরিহার্য। নইলে তার ওই দাবি মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে। এজন্য আল্লাহ তাঁর নবীকে নির্দেশ দেন, ‘আর তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছো সেভাবে অটল থাকো এবং যারা তোমার সঙ্গে (শিরক ও কুফরি থেকে) তওবা করেছে তারাও। আর তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের সব কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করেন। ’ (সূরা হুদ : ১১২)।
আবুবকর (রা.) একবার রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! আপনি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। ’ জওয়াবে তিনি বললেন, ‘আমাকে বৃদ্ধ করেছে সূরা হুদ, ওয়াকিয়া, মুরসালাত, নাবা, তাকভির প্রভৃতি সূরা। ’ (তিরমিজি)। অর্থাৎ আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকতে গিয়ে এবং তার আদেশ-নিষেধসমূহ যথাযথভাবে পালন করতে গিয়ে অভিশপ্ত শয়তানের মোকাবিলা করতে হয়। যারা দীনের ওপর অটল থাকে তাদের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। অতঃপর তাতে অটল থাকে। তাদের ওপর ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না ও চিন্তিত হইও না। আর তোমরা তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর। ইহকালীন জীবনে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। ’ (হা-মিম সাজদাহ : ৩০)।
বর্ণিত আছে, ‘দীনের ওপর অটল থাকা এমন কষ্টকর যেমন জ্বলন্ত কয়লাকে হাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে রাখা কষ্টকর। ’ আমর (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল! আপনি আমাকে ইসলামের এমন একটি কথা বলে দিন, যে সম্পর্কে আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা না করতে হয়। ’ তিনি বললেন, ‘তুমি বল, আমি আল্লাহর প্রতি ইমান আনলাম, অতঃপর (তার ওপর) অটল থাকো। ’ (মুসলিম, তিরমিজি)।
আমাদের সমাজে চার ধরনের মানুষ রয়েছে। দৃঢ়বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী, কপট বিশ্বাসী ও শিথিল বিশ্বাসী। অবিশ্বাসীরা দিশাহীন পথিক। ওরা পথভ্রষ্ট। ওদের আচরণ পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। কপট বিশ্বাসীরা সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী। এরা বলে এটাও ঠিক, ওটাও ঠিক। এরা মানুষের ঘৃণার পাত্র। এরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। শিথিল বিশ্বাসীরা ভীরু ও কাপুরুষ। এরা সর্বদা অন্যের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। সমাজে এদের সংখ্যাই বেশি। প্রথমোক্ত লোকেরাই সমাজের নেতা ও পরিচালক সাধারণত হয়ে থাকে। তারা যদি প্রবৃত্তিপূজারি হয় ও তার ওপর দৃঢ় থাকে, তাহলে তারা হয় হঠকারী ও সমাজ ধ্বংসকারী। অন্যদিকে তারা যদি আল্লাহভীরু হয় এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধের ওপর দৃঢ় থাকে, তাহলে তারা হয় সমাজের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
অনেক সময় অনেক দীনদার মানুষকে চরমপন্থি হতে দেখা যায়। এটা হয়ে থাকে তাদের দীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে। এদের থেকে বেঁচে থাকার জন্য রসুল (সা.) উম্মতকে সাবধান করে গেছেন। শৈথিল্যবাদীদের অবস্থা আরও করুণ। উভয় দল থেকে দূরে থেকে সর্বদা মধ্যপন্থি হয়ে আহলুস সুন্নাহর অনুসারী হওয়া একান্ত কাম্য।
মাওলানা মো. এহসানুল হক
পেশ ইমাম : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।
No comments:
Post a Comment