প্রতিদিনই নতুন নতুন টেকনিক শিখি: আলোকচিত্রী নিলাভ

আবু সুফিয়ান নিলাভ পেশায় একজন আলোকচিত্রী। তার নিজের প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ও ইভেন্ট ফটোগ্রাফি প্ল্যাটফর্ম নিজলক্রিয়েটিভ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। স্বপ্ন অনেক দূর যাবার। তাই কাজ করার পাশাপাশি এখনো ফটোগ্রাফিকে শেখা, জানা আর চেনার চেষ্টা প্রতিনিয়ত। প্রতিদিনই শিখচ্ছেন নতুন নতুন অনেক টেকনিক। সেগুলো কাজে লাগাচ্ছেন। এ ছাড়া যেকোন ওয়েডিং, কর্পোরেট অথবা প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ও এডিটিংয়ে পারদর্শী নিলাভ। ছবি এডিট, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ছাড়াও ছবি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি একজন ওয়েব ডেভেলপারও। ফটোগ্রাফি করার পাশাপাশি একই বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হয়ে ক্লাসও নেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। আবু সুফিয়ান নিলাভ এবং দেশে ফটোগ্রাফি পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন নাজমুল হক ইমন।


যেভাবে ফটোগ্রাফি শুরু হলো?
কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ২০০৬ সালে এক বন্ধুর সঙ্গে অংশীদার হয়ে খুলনাতে একটি স্টুডিও দিয়ে কর্মজীবনে যাত্রা শুরু করেন। বন্ধুর কাছ থেকেই ফটোগ্রাফিতে শুরু হয় হাতে খড়ি। এরপর ইন্টারনেটের সহায়তায় আরো জানতে থাকা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসারও বয়স বাড়ে। ৪ বছরের মাথায় হঠাৎ করেই বন্ধুর সঙ্গে চুকে যায় ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তবে হার মানেননি নিলাভ। পরের বছর ২০১১ সালে ক্যামেরা, লেন্স ও একটা ফ্লাশ নিয়ে শুরু করেন নিজের ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান নিজল ক্রিয়েটিভ। এরপর প্রিজম থেকে ডিপ্লোমা করে নিজেকে ঝালিয়ে নেয়া।

পরিবার ও শিক্ষা জীবন?
নিলাভ। পুরো নাম আবু সুফিয়ান নিলাভ ভুঁইয়া। ব্যবসায়ী বাবা মোঃ মহিব উল্লাহ্ ভুঁইয়া ও গৃহিণী মা লায়লা বেগমের একমাত্র সন্তান। বাবা মায়ের সঙ্গে নিলাভের বেড়ে ওঠা খুলনার শিপইয়ার্ড এলাকায়। ২০১৩ সালের ২৯ মার্চ বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী সাবরিনা পারভিন খান পিংকি নিজল ক্রিয়েটিভের মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া আল-আমিন একাডেমিতে শুরু হয় নিলাভের শিক্ষাজীবন। ২০০৪ সালে বিএন শিপইয়ার্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ থেকে ২০০৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক। এরপর ২০১০ সালে আজম খান কমার্স কলেজ থেকে পাস করে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন। এছাড়া ২০১২ সালে প্রিজম ফটোগ্রাফি থেকে ফটোগ্রাফির উপর ডিপ্লোমা।

প্রথম আয় কত টাকা ছিল?
পেশা ফটোগ্রাফি হলেও তিনি এখান থেকে জীবনে প্রথম আয় করেনি। নিলাভ বরাবরই একজন সচেতন এবং বুদ্ধিমান মানুষ। তাই তিনি যখন হাই স্কুলে পড়তেন, তখন মজা করেই টেস্টি হজমি বিক্রি করতেন। স্কুলের বন্ধুরা তার কাছ থেকে কিনে নিত। তখন এক বোতল টেস্টি হজমি কেনা সকলের সাধ্যের মধ্যে ছিল না। তাই এক বোতল কিনে সেটা খুচরো বিক্রি করলে প্রতি বোতলে ২ টাকা করে লাভ হতো।

ক্যারিয়ার হিসেবে ফটোগ্রাফি?
বর্তমান জীবন ব্যবস্থায় ছবি আমাদের একটি অঙ্গই বলা চলে। কোন শব্দ ব্যবহার না করে শুধুমাত্র ছবির মাধ্যমেই অনেক না বলা কথা বলে ফেলা যায়। একটি ছবির অনেক ক্ষমতা। বর্তমান সময়ে সবার হাতে হাতে ক্যামেরা পৌঁছে গিয়েছে। শখের বসে ছবি আজকাল কমবেশি সবাই তুলে থাকে। তবে ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া মানুষের সংখ্যাটাও একদম কম নয়। শখের বসে ছবি তুলতে তুলতে অনেকেই ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়ার দিকে ঝুঁকছেন। ক্যারিয়ার হিসেবে ফটোগ্রাফি দিন দিন গুরুত্ব পাচ্ছে। ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন সাবজেক্ট হিসেবে ফটোগ্রাফি পড়ানো হয়। দেশে, দেশের বাইরেও প্রচুর মানুষ খুব আগ্রহ নিয়েই ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষে একাডেমিক পড়াশোনার দিকে ঝুঁকছেন। শুধু ছবি তোলা আর ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। ক্যারিয়ার গড়তে হলে দক্ষ ফটোগ্রাফার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়। ফটোগ্রাফি ক্যারিয়ার হিসেবে আধুনিক এবং সম্মানজনক। আর্থিক দিক থেকেও এই পেশা অনেক এগিয়ে আছে। মাসে ৮-১০ দিন কাজ করলেও এই পেশার মানুষ বিশ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। আর যদি নিজের তোলা ছবি বিক্রয় করা যায় তবে তা থেকে আয়ের পরিমাণ প্রচুর। বর্তমানের সর্বাধুনিক পেশার মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ফটোগ্রাফি প্রথম সারিতেই আছে।

দেশে এই কেমন পেশা গুরুত্ব পাচ্ছে?
বাংলাদেশের তরুণ সমাজের হাতে হাতে এখন ক্যামেরা। ক্যামেরার সহজলভ্যতায় ফটোগ্রাফারের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমন বেড়েছে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আয়ের উৎসও। একটু ভালো ফটোগ্রাফি যারা করতে জানেন তাদের অনেকেই পেশা হিসেবেই নিচ্ছে ফটোগ্রাফিকে। আমাদের এই দেশে এখন ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। যেমন ফ্যাশন ফটোগ্রাফাররা ফ্যাশন শ্যুট করে, ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফাররা জীবজন্তুর ছবি তুলে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফটোগ্রাফাররা মেশিনের ছবি তুলে, আবার ফরেনসিক ফটোগ্রাফারদের কাজ বিভিন্ন অ্যাসপেক্ট থেকে কোনো ক্রাইমের ছবি তোলা, যেমন কোনো খুন হলে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে লাশের ছবি তোলা, যাতে ছবি দেখে তদন্ত করতে সুবিধা হয়। সায়েন্টিফিক ফটোগ্রাফাররা আবার রিসার্চ ওয়ার্কের ছবি তুলে। এর বাইরেও রয়েছে প্রকৃতির ছবি তোলা। ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার, তাদের কাজ শুধু বিভিন্ন স্থানকে দর্শনীয় স্থানের মতো করে ছবি তোলা। সুতরাং যেকোনো ফটোগ্রাফিই পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী।

ফটোগ্রাফি পেশার সম্ভাবনা ও সমস্যা?
বর্তমানে অনেকেই ফটোগ্রাফি পেশার দিকে ঝুঁকছে। এমন খুব কম পেশাই আছে যেখানে বয়স আর ডিগ্রী খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। দরকার প্রখর দৃষ্টিশক্তি, কাজটির জন্যে ভালোবাসা আর সৃজনশীল চিন্তাভাবনা। ফটোগ্রাফি পেশায় যেমন বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তেমনি আছে নানারকমের সমস্যা। অনেককেই দেখা যায় শখের বসে ক্যামেরা কিনে ছবি তোলার শুরু করে কোন প্রশিক্ষণ না নিয়েই ছবি তুলতে তুলতে যখন মনে করেন ভালো ছবি তুলছেন তখন তিনি এটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে নেন এবং এরপরে দেখা যায় খুবই সামান্য অর্থের বিনিময়ে এরা প্রচুর কাজ করে যাচ্ছে। এসবের কারণে সমস্যা পরে যায় শুরু থেকেই ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তারা। তারা তখন তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাইলেও মূল্য নিতে পারেন না। এজন্য অনেকে পেশাদার ফটোগ্রাফারকেই হতাশায় ভুগতে হয়। আবার অনেককে দেখা যায় যে পেশায় তিনি মূলত ফটোগ্রাফি করেন সেটার বাইরেও স্বল্প মূল্যে কাজ করে থাকেন। এ কারণে সেই পেশার মানুষগুলোও আবার প্রচুর সমস্যায় পরে যায়। দেশে ফটোগ্রাফি শেখার একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি, এজন্য চাইলেই যে কেউ ফটোগ্রাফি পেশায় যেতে পারছে না। তবে এদেশে ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়ার সংখ্যা যেমন দিনে দিনে বাড়ছে তেমনি এই পেশার সম্ভাবনাও বাড়ছে। তাই ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই তাকে ফটোগ্রাফিতে দক্ষ হতে হবে।
© মানবকণ্ঠ

No comments:

Post a Comment