বাংলাদেশে টেলিকম সম্পর্কিত নানা ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে বেইস টেকনোলজিস। দেশে টেলিকম সেক্টরে ক্যারিয়ারের নানা বিষয়ে কথা হয় বেইস টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যুবাইর আহমেদের সঙ্গে।
যুগান্তর : টেলিকম সেক্টরে চাকরির সম্ভবনা কেমন?
যুবাইর আহমেদ : অনেক ভালো, তবে মনে রাখতে হবে কোন বিভাগ এবং কিভাবে চাকরির জন্য আপনি আবেদন করছেন। এখন অনেক টেলিকম অপারেটর কোম্পানি আউটসোর্সের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করছে। মানে হল কোনো প্রার্থী সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়ে আউটসোর্স কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছেন। আউটসোর্স কোম্পানিগুলো সব সময় ভালো সুযোগ-সুবিধা টেলিকম কোম্পানিগুলোর মতো নাও হতে পারে। সেদিকে প্রার্থীদের খেয়াল রাখতে হবে। টেলিকম কোম্পানির চাকরির জন্য সম্ভাবনা সব সময় ভালো প্রার্থীদের জন্য উন্মোচিত।
যুগান্তর : টেলিকম সেক্টরের চাকরি অনেকের কাছে ড্রিম জব। এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?
যুবাইর আহমেদ : ড্রিম জব, স্বপ্নের চাকরি। এক্ষেত্রে প্রার্থীদের বুঝতে হবে তাদের ড্রিমটা আসলে কি? টেলিকম সেক্টরটি বাইরে থেকে যতটা সুন্দর মনে হয় আসলে চাকরি পাওয়ার পর বোঝা যায় এই সেক্টরে কাজ করতে হলে কতটা কম্পিটেটিভ হতে হয়। এখানে কাজের অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হয়।
যুগান্তর : টেলিকমে নতুন যারা চাকরি করতে চান তাদের ব্যাপারে আপনার পরমর্শ কি?
যুবাইর আহমেদ : তাদের জন্য আমার পরামর্শ হল, কম্পিউটার অপারেশনটা ভালভাবে রপ্ত করা। মানে হল-মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি ভালভাবে জেনে নেয়া। এক অথবা দুই বছর পরে কিংবা ছয় মাস পরেই চাকরি পরিবর্তন না করা। যে বিভাগে চাকরির আবেদন করবেন, সেই বিভাগ সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নেয়া। যদি কোনো প্রার্থীর পরিচিত কেউ টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করেন তাহলে তার কাছ থেকে সেই কোম্পানি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নেয়া। তবে সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ হল, যদি কোনো প্রার্থী ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পান তাহলে ইন্টারভিউয়ের আগে নিজেকে ভালভাবে তৈরি করে নেয়াটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে সঙ্গেই সিভিটাকেও ভালভাবে তৈরি করে নিতে হবে।
যুগান্তর : টেলিকম চাকরির জন্য কোন যোগ্যতা বেশি থাকা জরুরি?
যুবাইর আহমেদ : ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা। ভালো কমিউনিকেশন স্কিল। ভালো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মন-মানসিকতা ও ব্যক্তিত্ব এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভালো বক্তা এবং অন্য কাউকে কনভেন্স করার মতো ক্ষমতা থাকাটা জরুরি।
যুগান্তর : আপনার প্রতিষ্ঠানে কেউ চাকরি নিতে এলে আপনি কোন যোগ্যতা আগে দেখেন?
যুবাইর আহমেদ : সর্ব প্রথম যে জিনিসটা লক্ষ্য করা হয় তা হল, প্রার্থীর মন-মানসিকতা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সেই প্রার্থী আমাদের কোম্পানিতে যোগদানের ফলে কোম্পানি এবং নিজেকে কতখানি উপকার এবং কতখানি প্রফেশনাল স্কিল দিয়ে উন্মোচিত করতে পারছে সেটা আমাদের জন্য বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য।
যুগান্তর : অনেকেই অভিজ্ঞতা প্রয়োজনীয়তা বড় করে দেখে চাকরি দেন। সেই ক্ষেত্রে নতুনদের জন্য করণীয় কি?
যুবাইর আহমেদ : আসলে টেলিকম সেক্টরে কিংবা টেলিকম কোম্পানিতে নতুন প্রার্থী এবং অভিজ্ঞ প্রার্থীদের নিয়োগ আলাদা আলাদা ভাবে হয়। প্রায় সব ক’টি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি নতুন প্রার্থীদের জন্য এমটি (ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি) কিংবা শিক্ষানবিশ প্রোগ্রাম চালু করেছে। সেই ক্ষেত্রে নতুন প্রার্থীদের যা করণী তার মধ্যে সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ হল ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা, কম্পিউটার দক্ষতা, ভালো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রেজেন্ট্রেশন স্কিল। নতুন প্রার্থীদের অবশ্যই চাকরি পাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণ ট্রেনিংয়ের মধ্যদিয়ে যেতে হয়। সেই ক্ষেত্রে যে কোনো কিছু শেখার আগ্রহটা থাকা অবশ্যই জরুরি।
যুগান্তর : শিগগির টেলিকম প্রতিষ্ঠান রবি-এয়ারটেল একীভূত হচ্ছে। এখানে চাকরি নিয়ে আপনি কোনো শঙ্কা দেখছেন।
যুবাইর আহমেদ : এই ব্যাপারে শঙ্কা ও সম্ভাবনা উভয়ই রয়েছে। শঙ্কা হল যেহেতু রবি বেশিরভাগ শেয়ার দিয়ে এয়ারটেলকে একীভূত করছে সেই ক্ষেত্রে এয়ারটেলের কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা বা কর্মচারী অনেক আগেই চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করতে পারেন। অন্যদিকে সাধারণভাবে যখন দুটি কোম্পানি একীভূত হয় তখন বাজারে নতুন চাকরির সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। অবসর গ্রহণকৃত প্রার্থীরা কিংবা যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী এয়ারটেল থেকে বের হয়ে আসবেন তারা অন্য টেলিকম কোম্পানিতে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি করতে পারেন। এভাবে বাজারে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে বাজারে আবার নতুন করে চাকরির সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং একীভূত করার মাজে শঙ্কা ও সম্ভাবনা দুটাই বিদ্যমান।
যুগান্তর : দেশে একটি অপারেটর কমে গেলে চাকরির ক্ষেত্র সংকোচিত হবে কি না? বড় একটি অংশ কোথায় চাকরি নিতে পারে বা যাওয়া উচিত।
যুবাইর আহমেদ : দেশে একটি টেলিকম অপারেটর কমে গেলে চাকরির বাজার সংকোচিত হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের নিজস্ব বাণিজ্যিক বিভাগ কমিয়ে এনে সেগুলোকে আউটসোর্স বা অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করছে। সেই ক্ষেত্রে বাজারে অনেক আউটসোর্স বা ভেন্ডর কোম্পানি গঠিত হয়েছে যারা শুধু টেলিকম অপারেটরের মাধ্যমে কাজ করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আমার মনে হয় টেলিকম অপারেটর কোম্পানিতে চাকরির বাজার সংকোচিত হলেও ভেন্ডর বা আউটসোর্স কোম্পানিগুলোতে টেলিকম কোম্পানি চাকরি ইচ্ছুক প্রার্থীদের ভালো চাকরির সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, এই কোম্পানিগুলো টেলিকম কোম্পানির মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে।
যুগান্তর : মোবাইল অপারেটরদের সর্বোচ্চ পদে বাংলাদেশীদের চাকরি দেয়া হয় না। এটাকে কিভাবে দেখবেন?
যুবাইর আহমেদ : হ্যাঁ, এটা সত্যিই দুঃখজনক। তবে এর প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, বাংলাদেশের সরকারি টেলিকম কোম্পানি টেলিটক ছাড়া আর সব টেলিকম কোম্পানি বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বহুজাতিক কোম্পানির সর্বোচ্চ পদে তাদের নিজের দেশের লোক বা প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করে থাকে। এই দেশের অন্যতম সমস্যা হল সর্বোচ্চ পদে প্রার্থী হওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য চারিত্রিক গুণাবলী সম্পন্ন প্রার্থীর বাজারে অভাব রয়েছে। তুবুও আশারবাণী হল কিছু কিছু পদে বাংলাদেশী কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা চাকরি করছেন।
যুগান্তর : টেলিকম সেক্টরে আগামীতে চাকরির অবস্থান কি হবে এবং কেমন হওয়া উচিত?
যুবাইর আহমেদ : টেলিকম সেক্টরে আগামীতে চাকরির বাজার কেমন হবে এটা সঠিকভাবে বলা না গেলেও এটা অবশ্যই বলা যায়, এই সেক্টরে সব সময় চাকরির নিয়োগ বিদ্যমান থাকবে। এটা কম বা বেশি উভয়ই হতে পারে। যে কোনো সেক্টরেই চাকরির বাজার নির্ভর করে সেই দেশের রাজনৈতিক এবং অন্যান্য প্রেক্ষাপটের ওপর। সর্বদিক বিবেচনা করলে বলা যায় যেহেতু প্রতিদিনই টেলিকম গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেক্ষেত্রে আগামীতে টেলিকম সেক্টরের চাকরির বাজার একটি স্থিতিশীল পর্যায় থাকবে। তবে টেলিকম সেক্টরটি একটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তনশীল সেক্টর। সেক্ষেত্রে প্রার্থীদের নতুন নতুন প্রযুক্তিগত ধারণা, ব্যবহার ও উন্নতমানের প্রযুক্তিগত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকাটা অবশ্যই প্রয়োজন। না হলে আগামীতে তাদের টেলিকম সেক্টরে চাকরি পাওয়াটা একটু কঠিন হলেও হতে পারে।
No comments:
Post a Comment