দাঁতে পোকা বলে কি কিছু রয়েছে?

পোকা ফালাইবেন… দাঁতে পোকা..। গ্রামাঞ্চলে এমনি হাঁক দিয়ে বাড়ি বাড়ি বেড়ায় একদল যাযাবর নারী। এদের পিঠে থাকে বড় আয়তনে কাপড়ের ঝোলা, মাথায় বয়ে বেড়ায় চুড়ি দিয়ে সাজানো সাজি বা ডালা। চুড়ি বিক্রি করাই হচ্ছে মূল ব্যবসা। পাশাপাশি হাতের খেলা বা ছোট খাটো জাদুর কৌশল আয়ত্তে রেখেছে। আর সেই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে দাঁতের পোকা বের করে ধাঁধায় ফেলে দেয় সাধারণ মানুষকে।


শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহরের অনেক লোকও দাঁতের পোকা বের করার জন্য এদের কাছে যায়। দাঁতের পোকা নিয়ে কি যে অন্তহীন দুশ্চিন্তা। তবে দাঁতের পোকা বলে কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। সাধারণ মানুষ যুগ যুগ ধরে দাঁতের পোকার এই ভ্রান্ত বিশ্বাসকে পালন করে আসছে এবং প্রতারিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রকট করে তুলছে দাঁতের সমস্যাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা ৯০ জন লোক ডেন্টাল ক্যারিজে ভুগছে। শুদ্ধ বাংলায় ডেন্টাল ক্যারিজের নাম দেওয়া যেতে পারে দাঁতের ক্ষয়রোগ। স্বল্প শিক্ষিত অজ্ঞলোক দাঁতের এই ক্ষয়রোগকেই দাঁতের পোকা বলে অবিহিত করে আসছে। দাঁতের এই ক্ষয়রোগ এক ধরনের জীবাণু সংক্রমণের কারণে হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় দাঁতের গায়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অসংখ্য ছিদ্র থাকে। এসব ছিদ্র খালি চোখে বোঝা যায় না। খাবার গ্রহণের সময় সেসব অদৃশ্য গর্তের মধ্যে খাদ্যের কণা জমতে থাকে। খাদ্যকণা গর্তের মধ্যেই আটকে থাকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেগুলো বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণের কারণে পঁচে গিয়ে ল্যাকটিক অ্যাডিস নামে একটি অ্যাসিড তৈরি করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড সেই অদৃশ্য গর্তগুলোর ক্ষয়সাধন করে।

এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকলে দাঁতের গায়ে দৃশ্যমান গর্তের সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ল্যাকটিক অ্যাসিড দাঁতের বাইরের আবরণ অ্যানামেলের গায়ে ছোট্ট কালো দাগ তৈরি করে। পরবর্তীকালে এই গর্ত অ্যানামেল পেরিয়ে দাঁতের মাঝখানে স্তর ডেন্টিন পর্যন্ত পৌঁছায়। এক পর্যায়রে তা দাঁতের শাঁস বা পাল্পকে আক্রান্ত করে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। খাদ্যকণা দাঁতের সেসব অদৃশ্য গর্তছাড়া দুই দাঁতের মধ্যবর্তী ফাঁকে আটকে গিয়ে জীবাণু সংক্রমিত হয়েও এমনটি হতে পারে।

ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয়রোগের সহজলভ্য চিকিৎসা রয়েছে। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ক্ষয়িষ্ণু দাঁতটিকে রক্ষা করা সম্ভব। মূলত দাঁতের পোকা বলে কিছু নেই। এটি দাঁতের ক্ষয়রোগ।

ডা. সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ

No comments:

Post a Comment