কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে : সালেহ উজ জামান

দিন দিন পাবলিক রিলেশন পেশার চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বাড়ছে এই পেশায় থাকা পুরনোদের, সঙ্গে নতুনদের কাজের জায়গা আরো বিস্তৃত হচ্ছে। দেশি বা বিদেশি সব কোম্পানিগুলো পাবলিক রিলেশন (পিআর) পদে কমপক্ষে এক বা একাধিক লোকবলও রাখছেন। শুধু প্রচার-প্রচারণার জন্য নয়, নানা ধরনের রিলেশন মেইনটেন করার জন্যও। দীর্ঘ পাবলিক রিলেশন পেশা জড়িত থাকা দেশের জনপ্রিয় পিআর প্রতিষ্ঠান ‘ফোরথট’ এর ম্যানেজার ও প্ল্যানিং মিডিয়া রিলেশনস সালেহ উজ জামানের সঙ্গে কথা হয়। নিজের কাজের জায়গা, কাজ এবং এই পেশার সম্ভাবনা, নতুনদের আগ্রহসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। লিখেছেন নাজমুল হক ইমন।

প্রথমদিকে কেমন ছিল কাজে জায়গা? প্রথম দিকে আমার কাছে এই ধরনের কাজ ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমি নিজেও ছিলাম নতুন, প্রতিষ্ঠান নতুন আর হাতে গোনা কয়েকজন সহকর্মী; তারাও নতুন। শুধু তাই নয় বাহিরের দেশগুলোতে এই পেশার প্রচলন থাকলে আমাদের দেশে পিআর এর ধারণাও কিছু বছর আগেও নতুন ছিল। কাজের ধরণ, পরিধি সবকিছু গুছিয়ে আনতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কেটেছে বিনিদ্র রাত। ছুটির দিনগুলোতে অনেক সময় অফিস করতে হয়েছে। এখন এসে বোঝা যায়, খাটুনি কতটুকু ছিল। কত কাজ করেছি। বর্তমানে এই পেশা বা পিআর কাজ অনেকে বোঝে, অনেক কোম্পানি বোঝে। আর এই কারণে এই সেক্টর বড় হচ্ছে।
কেন আসলেন এই পেশায়?
আমি যে এই পেশা আসবো সেটার কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছিল না। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে কাজের ধরণ ভালো লেগেছে। তাই এই পেশাতেই আটকে গিয়েছি। শুরুতে আমার কোনো ধারনাই ছিল না এ ধরনের পেশা আদৌ আছে। আর এই পেশাতে আমার কাজ শুরু একেবারেই হঠাৎ।
কোন পেশায় যাবার ইচ্ছা ছিল?
ক্রিয়েটিভ কোনো পেশাতে থাকবো সেটা ইচ্ছা ছিল। বিশেষ করে ইচ্ছা ছিল আমি লেখক হবো। আমি ভ্রমণ বিষয়ক লেখক হবো। লিখবো ভ্রমণ কাহিনী।
বর্তমানে আপনার কাজের জায়গা?
আমি ম্যানেজার এবং প্ল্যানিং মিডিয়া রিলেশনস পদে কাজ করছি ফোরথট পিআরে কাজ করছি।
যেভাবে শুরু এই সেক্টরে পথচলা?

মূলত কনটেন্ট ডেভেলপার হিসেবে আমার এখনকার অফিসে কাজ শুরু করি কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে। তাও সেটা ২০১০ সালের কথা। এর আগে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করতাম। এরপর ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে ফোরথট পিআর এর মিডিয়া শাখায় মিডিয়া অ্যানালিস্ট পদে যোগ দেই।
নিজের সম্পর্কে বলুন?
বয়স ৩০ ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। কাজের বাহিরে আমি একটু অন্যরকম। আমার শখ গান বাজনা, মুভি দেখা এবং ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা। এছাড়া সেন্ট জোসেফ থেকে এসএসসি, নটরডেম থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তী নর্থ সাউথ থেকে মার্কেটিংয়ে পড়ালেখা করেছি।
পিআর পেশা বা এই সেক্টরের ভবিষ্যৎ?
সারাবিশ্ব এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশের পিআর খাত এখনও অনেক পিছিয়ে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগে নিজেদের পিআরও এর মাধ্যমে কাজ করালেও সংগঠিত কোন উদ্যোগ ছিল না। সত্যি কথা বলতে আমরা এখন যা করি তা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এজেন্সি এবং মিডিয়ার সম্মিলিত মনোভাব পরিবর্তন। তবে এখনও যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এই সেক্টরটিতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি অর্জন করার সম্ভাবনা রাখে।
এই সেক্টরে কাজের সুবিধা ও অসুবিধা?
সব ধরনের কাজেই নানাবিধ সুবিধা অসুবিধা থাকে। পিআর সেক্টরে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা। সত্যি কথা বলতে মানুষের এখনও সম্যক ধারনা নেই, আমরা আসলে কি কাজ করি। তবে সুবিধাটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বিভিন্ন সেক্টরের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। ফলে জ্ঞানার্জনের সুযোগ ব্যাপক। আর যেহেতু এখনও পিআর খাত বয়সে অল্প সেহেতু এখন যারা এই খাতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাদেরই সুযোগ থাকছে খাতটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের।

নতুনদের জন্য গাইডলাইন?
আগ্রহীদের জন্য দুটো বিষয় আবশ্যক। প্রথমত প্রচণ্ড ধৈর্য্য এবং দ্বিতীয়ত প্রচুর পড়াশোনা করার অভ্যাস। আনুষঙ্গিকভাবেই আরো আসতে পারে সততা এবং কঠোর পরিশ্রম, তবে সেগুলো যেকোন কাজের জন্যই আবশ্যক।
যে কথা হয়নি বলা? ‘কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে’ কথাটি মনে হয়ে এই সেক্টরটির জন্যই সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য।

No comments:

Post a Comment