ব্যবসা শুরুর আগে যা জানা জরুরী

ভুমিকাঃ
বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত ও তৃতীয় বিশ্বের দেশ। আমাদের দেশে দারিদ্রের হার অনেক বেশি। রাজনীতিবিদদের খাম-খেয়ালীপনার কারনে আমাদের অর্থনীতি তেমনভাবে অগ্রসর হতে পারে নি। বেকারত্বের হার এ দেশে প্রকট। তার কারন শিক্ষিত তরুণদের অনুপাতে প্রয়োজনীয় কাজ নেই।
এই কারনে আমাদের দেশে চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিদ্বন্দীতার মুখামুখি হতে হচ্ছে তরুণদের। বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতই। এ ছাড়া সরকারি চাকরি পেতে লাগে মামা চাচা বা ঘুষ।


দূষ্প্রাপ্য চাকরির বাজারে বেকারত্ব দূর করতে পারে একমাত্র আত্ন-কর্মসংস্থান। নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি অন্যকেও চাকরি দেওয়া যায়। অনেকেই এখন ব্যবসায়ের দিকে ঝুকে পড়েছেন। ব্যবসা শুরু করতে হলে কিছু ব্যবসায়িক গুনাগুণ থাকতে হয়। একজন ব্যবসায়ীর বি‌ভিন্ন ধর‌ণের গুণাবলী আলোচনা করা হল।

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসাঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ব্যবসাকে হালাল ও সম্মানজনক পেশা বলে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়া হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় ব্যবসা হালাল পেশা। পৃথিবীতে সর্ব প্রথম কর্মের সূচনা হয়েছিল আত্ন-কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে। অনেক নবী-রাসূল ও সাহাবী ব্যবসা করেছে। কুদুরী গ্রন্থাকার আল্লামা কুদুরী হাড়ি পাতিলের ব্যবসা করতেন। কুদুরী অর্থ হাড়ি পাতিল। সেই থেকে উনার নাম হয়ে গেছে কুদুরী।

ব্যবসার পূর্ব পরিকল্পনাঃ
শুধু ব্যবসা নয় যে কোন কাজের ক্ষেত্রেই পূর্ব পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্যবসার ধরন কি হবে? প্রতিযোগী কেমন হবে? পুঁজি কত হবে? ওই ব্যবসা কেমন লাভজনক? ইত্যাদি পরিকল্পনা করে এগুতে হবে।

সঠিক স্থান নির্বাচনঃ
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবস্থার উপর নির্ভর করবে আপনার ব্যবসা কেমন চলবে? সব সময় লোকে লোকারণ্য থাকে, ৩/৪ গ্রামের মানুষ এক সাথে মিলিত হয় এমন জায়গা, বড় বাজার, দৈনিক বাজার এই রকম জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়া আশে পাশের এলাকায় আপনার ব্যবসায়িক পণ্যের চাহিদা আছে কিনা তাও খেয়াল রাখতে হবে।

কি ধরনের ব্যবসা করবেনঃ
বর্তমানে অনেক ব্যবসাই বহুল প্রচলিত। হয়ত দেখা যাবে আপনার পছন্দের জায়গায় একই রকম দোকানে ভরপুর। এ রকম হলে হালে পানি পাবেন না। তাই এমন ব্যবসা করুন, যা ব্যতিক্রমী কিন্তু লাভজনক। এই ধরনের ব্যতিক্রমী ব্যবসা করতে পারলে দ্রুত সফল হবেন এবং প্রতিদ্বন্দী ও অনেক কম।

থাকতে হবে সততাঃ
ব্যবসা করার জন্য সততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অসদুপায় অবলম্বন করে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়া গেলেও পরে অনেক মাশুল দিতে হয়। কোন কাষ্টমারের সাথে প্রতারণা করবেন তো সে আর এই জিন্দেগীতেও আপনার দোকানমুখি হবে না। এইভাবে একদিন দেখবেন আপনার ব্যবসা কাষ্টমার শূন্য হয়ে গেছে। প্রতারণা ও ধোকাবাজি শয়তানের কাজ। এ ছাড়া ক্রেতা ঠকিয়ে যত উপার্জন করবেন সবই হারাম হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই একজন আদর্শ ব্যবসায়ী হতে হলে সৎ, নিষ্ঠাবান হতে হবে এবং লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকতে হবে।

হতে হবে ধৈর্য্যশীলঃ
ধৈর্য্য না থাকলে ব্যবসায়ে উন্নতি করা সম্ভব নয়। আজ ব্যবসা শুরু করবেন আর ২/৩ দিন পর কোটি পতি হয়ে যাবেন এই রকম আশা নিয়ে ব্যবসা শুরু করা ঠিক নয়। অনেকই আছেন অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ না হয়ে ধৈর্য্যের সাথে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ধীরে ধীরে এগোতে হবে।

দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হতে হবেঃ
দৃঢ় মনোবল ছাড়া ব্যবসা করা সম্ভব নয়। লাভ-ক্ষতি এগুলি ব্যবসায়েরই অংশ। কোন কারনে ক্ষতির সম্মুখীন হলে তা মেনে নেয়ার মত মানসিকতা থাকতে হবে। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উত্থান-পতন আছেই। লোকসানে পড়লে ভেঙ্গে না পড়ে আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার নব উদ্যোমে শুরু করতে হবে। আগের ব্যর্থতার কারনগুলি চিহ্নিত করে তার প্রতিকার করতে হবে। বারবার চেষ্টা করলে সাফল্য ধরা দেবেই ইনশাআল্লাহ।

কঠোর পরিশ্রমী হতে হবেঃ
শুধু ব্যবসা নয় যে কোন পেশাতেই পরিশ্রম ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব প্রায়। আপনি পরিশ্রম না করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ব্যবসা করবেন তা হবে না। পরিশ্রম করার পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তারও পরিচয় দিতে হবে। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কারা, তাদের ব্যবসায়ীক নীতি কি? এইসব বুঝে শুনে তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে হবে।
এ ছাড়াও একজন উদ্যোক্তার আরো যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা হলো আত্নবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা, উদ্যোমী, সৃজনশীল, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা ইত্যাদি।
© কলতান.নেট



^
^
নতুন ব্যবসা, ব্যবসা শুরুর আ‌গে করণীয়, সফল ব্যবসার উপায়

No comments:

Post a Comment