কাঁঠালের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

কাঁঠাল (Jackfruit) বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এ‌টি গ্রীষ্মকালীন ফল। পাঁকা বা কাঁচা কাঁঠাল ও এর বী‌চি‌তে প্রচুর পুষ্টি ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। এই সকল উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে কাঁঠাল। এতে কোলেস্টেরল জাতীয় উপাদান না থাকায় যেকোনো বয়সের মানুষই খেতে পারেন।

কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। পাকা ফল বেশ পুষ্টিকর, মৃদু অম্লযুক্ত সুমিষ্ট স্বাদ ও স্বল্পমূল্যের জন্য অনেকের পছন্দ। কাঁঠাল গাছের শেকড় সেদ্ধ করলে যে উৎকৃষ্ট পুষ্টি
উপাদান নিষ্কাশিত হয় তা হাঁপানীর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। চর্মরোগের সমস্যা সমাধানেও কাঁঠালের শেকড় কার্যকরী। জ্বর এবং ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব কমা‌তে কাঁঠালের শেকড় বেশ কার্যকরী।

কাঁঠালের আঁটি তরকারি হি‌সে‌বে আবার পুড়িয়ে বাদামের মতোও খাওয়া যায়। পাকা ফলের কোষ থে‌কে রস বের করে তা শুকিয়ে ‘কাঁঠালসত্ব’ তৈরি করা যায়। কোষ খাওয়া পর যে খোসা ও ভুতরো থাকে তা গবাদি পশুর একটি উত্তম খাদ্য। ভুতরো বা ছোবড়া দি‌য়ে জেলি তৈরি করা যায়। কাঁঠাল গাছের পাতা গবাদি পশুর একটি মজাদার খাদ্য। গাছ থেকে তৈরি হয় মুল্যবান আসবাবপত্র। কাঁঠাল ফল ও গাছের আঁঠালো কষ; কাঠ বা বিভিন্ন পাত্রের ছিদ্র বন্ধ করার কাজে ব্যবহৃত হয়।


কাঁঠালে যে পরিমাণ প্রোটিনও পাওয়া যায়; তা দেহের গঠনে সাহায্য করে। কাঁঠালে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে, দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে, ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে।
কাঁঠাল ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে সহায়তা করে। তাই ত্বকের বয়স ধরে রাখতে ও চেহারায় লাবন্য দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কাঁঠাল খুব কার্যকর।
কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ কম থাকায় ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও কম।
কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। এই পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্র‌ণে সাহায্য করে। কাঁঠাল উচ্চ রক্তচাপ উপশম ক‌রে।
তাছাড়া সঠিক পরিমাণে কাঁঠাল খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকিও অনেকটা কমে যায়।
কাঁঠালে প্রচুর পরিমানে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিনও পাওয়া যায়।
কাঁঠাল কার্বোহাইড্রেটের একটি অন্যতম উৎস। শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান কাঁঠাল থেকেই পাওয়া সম্ভব। কাঁঠালের শর্করা, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ দ্রুত শক্তির যোগান দি‌য়ে থা‌কে।
কাঁঠালে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁঠালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান চোখের রেটিনার ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

কাঁঠাল খাওয়ার পর প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন সি তৈরি হয়। এ‌টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে। ভিটামিন সি শরীরকে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া এই ভিটামিনটি সর্দি-কাশি ও জ্বর প্রতিরোধ করে। এটি ত্বক, দাঁত ও হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে। এছাড়াও ভিটামিন ‘সি’ এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে নানা রকম ক্ষতির হাত থে‌কে রক্ষা করে ।
কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস- আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম।
কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে।
সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে, টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতেও কাঁঠাল খুবই কার্যকরী।
কাঁঠাল বদহজম রোধ ক‌রে হজমে সাহায্য করে।

কাঁঠাল ফল আঁশালো হওয়ায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিহত করে।
কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কাঁঠালের কপার নামক খনিজ উপাদান থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক হরমোন তৈরির ক্ষমতা বজায় রাখে।
কাঁঠালের ডায়েটারি ফাইবার মলাশয় থেকে বিষাক্ত উপাদান অপসারণ করে। ফলে মলাশয়ের ওপর কোন রকম বিষাক্ত উপাদানের ক্ষতিকর প্রভাব পরে না। কাঁঠাল মলাশয়ের ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে।
কাঁঠালের ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালীকরণে ভূমিকা পালন করে। কাঁঠাল দাঁতের জন্য বিশেষ উপকারী।
কাঁঠালে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সমাধানেও ভূমিকা রাখে।
চাহিদা অনুযায়ী কাঁঠা‌লের আয়রন গ্রহণ করে পেটের অসুখ, সংক্রামক রোগ, যেমন— ম্যালেরিয়া, কৃমি, আলসার, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কাঁঠালে ভিটামিন বি-১ ও বি-২ পাওয়া যায়। কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে কাঁঠালের রস খাওয়ালে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ ও প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়। চিকিৎসাশাস্ত্র মতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়। গর্ভবতী মহিলারা কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়। দুগ্ধদানকারী মা তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
কাঁঠালে রয়েছে খনিজ উপাদান আয়রন যা দেহের রক্তাল্পতা দূর করে। 

কাঁঠালে রয়েছে শ্বেতসার। এছাড়াও কাঁঠাল আলসারের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে।
কাঁঠালের প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মানঃ শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)

কাঁঠা‌লে শর্করার প‌রিমানঃ
চিনি = 19.08 g, খাদ্যে ফাইবার = 1.5 g, স্নেহ পদার্থ = 0.64 g, প্রোটিন = 1.72 g

কাঁঠা‌লের ভিটামিনসমূহঃ
ভিটামিন এ সমতুল্য = 5 μg, বেটা ক্যারোটিন = 61 μg, লুটিন জিজানথেন = 157 μg, থায়ামিন (বি) = 0.105 mg, রিবোফ্লাভিন (বি) = 0.055 mg, ন্যায়েসেন (বি) = 0.92 mg, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি) = 0.235 mg, ভিটামিন বি = 0.329 mg, ফোলেট (বি) = 24 μg, ভিটামিন সি = 13.8 mg, ভিটামিন ই = 0.34 mg

কাঁঠা‌লের চিহ্ন ধাতু সমুহঃ
ক্যালসিয়াম = 24 mg, লোহা = 0.23 mg, ম্যাগনেসিয়াম = 29 mg, ম্যাঙ্গানিজ = 0.043 mg, ফসফরাস = 21 mg, পটাশিয়াম = 448 mg, সোডিয়াম = 2 mg, দস্তা = 0.13 mg


^
^
#কাঠাল ।।। nutrition of jackfruit . কাঠালের স্বাস্থ্য উপকারিতা, কাঁঠালের পুষ্টিগুন,  কাঠালের অজানা উপকারিতা, কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। কাঁঠালের উপকারিতা, কাঠালের গুন, কাঠা‌লের বিভিন্ন উপকা‌রিতা... কাঠাল ফ‌লের পু‌ষ্টি উপাদান, কাঠালের পুষ্টিগুণ ও কাঠালের উপকারিতা, কাঠালের উপকা‌রিতা ও পুষ্টিগুন.

No comments:

Post a Comment