তাহাজ্জুদ সালা‌তের নিয়ম, সময় ও ফজীলত

শরিয়তের পরিভাষায় রাত দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয় তা-ই ‘সালাতুত তাহাজ্জুদ’ বা তাহাজ্জুদ নামাজ। আর এই নফল নামাজকে মহানবী (সঃ) শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসেবে অব‌হিত করেছেন।
ফরজ সালাতের বাইরে রয়েছে আরো অনেক ধরনের সালাত যেমন সুন্নাত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদাহ, চাশতের সালাত, ইশরাকের সালাত, সালাতুত তসবিহ, সালাতুত তওবা,তাহাজ্জুদের সালাত, ইসতিখারার সালাত ইত্যাদি। এসব সালাতের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হচ্ছে সালাতুত তাহাজ্জুদ।

হযরত আলী (রঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূল (সঃ) তাঁর ও ফাতেমার
নিকট রাত্রি বেলায় আগমন করলেন এবং বললেন, “তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) কি (তাহাজ্জুদের) নামাজ পড় না?”
(বুখারী ও মুসলিম)

মা‌হে রমজান ইবাদতের মৌসুম। রমজানে সাহরির সুবাদে তাহাজ্জুদ পড়া খুবই সহজ। সাহরির সময়ই তাহাজ্জুদের সময়। তাই রমজানে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে। যেহেতু সাহরি খাওয়ার জন্য ছোট-বড় প্রায় সবাই ঘুম থেকে ওঠেন, তাই সবাইকে তাহাজ্জুদ পড়তে উৎসাহিত করা যায়।
আল্লাহ বলেন,
﴿ ﺗَﺘَﺠَﺎﻓَﻰٰ ﺟُﻨُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤَﻀَﺎﺟِﻊِ ﻳَﺪۡﻋُﻮﻥَ ﺭَﺑَّﻬُﻢۡ ﺧَﻮۡﻓٗﺎ
ﻭَﻃَﻤَﻌٗﺎ ﻭَﻣِﻤَّﺎ ﺭَﺯَﻗۡﻨَٰﻬُﻢۡ ﻳُﻨﻔِﻘُﻮﻥَ ١٦ ﴾ ‏( ﺍﻟﺴﺠﺪﺓ : ١٦ )
অর্থাৎ তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুজী প্রদান করেছি, তা হতে তারা দান করে। (সেজদা: ১৬)

তাহাজ্জুদ নামাজ মহানবী (সঃ) নিয়মিত পড়তেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী (সঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
﴿ ﻭَﻣِﻦَ ﭐﻟَّﻴۡﻞِ ﻓَﺘَﻬَﺠَّﺪۡ ﺑِﻪِۦ ﻧَﺎﻓِﻠَﺔٗ ﻟَّﻚَ ﻋَﺴَﻰٰٓ ﺃَﻥ ﻳَﺒۡﻌَﺜَﻚَ
ﺭَﺑُّﻚَ ﻣَﻘَﺎﻣٗﺎ ﻣَّﺤۡﻤُﻮﺩٗﺍ ٧٩ ﴾ ‏( ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٧٩ )
অর্থাৎ "এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।" (বনি ইসরাইল: ৭৯)
ফরজ নামা‌জের বিপরী‌তে আরো অনেক ধরনের নামাজ যেমন সুন্নাত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদাহ্, চাশতের সালাত, ইশরাকের সালাত, সালাতুত তসবিহ্, সালাতুত তওবা, তাহাজ্জুদের সালাত, ইসতিখারার সালাত ইত্যাদি। এসব নামা‌জের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট নামাজ হচ্ছে সালাতুত তাহাজ্জুদ।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত; অতিরিক্ত হিসেবে একে নফলও বলা হয়। এই নামাজ রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য ছিল। এর রাকাত সংখ্যা আট, বারো থেকে বিশ পর্যন্ত উল্লেখ পাওয়া যায়। চার রাকাত বা দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ হিসেবে পরিগণিত হবে। ত‌বে দুই রাকাত দি‌য়ে শুরু করাই স‌র্বোত্তম। এই নামাজকে ‘সালাতুল লাইল’ বা ‘কিয়ামুল লাইল’ নামাজও বলা হয়।
পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। তাহাজ্জুদ নামাজের সঙ্গে সাহরির কার্যত, শব্দগত ও অর্থগত মিল বা সম্পর্ক রয়েছে। হজরত আলী (রঃ) বলেন: "যাঁরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন; তাঁরাই সাহার বা শেষ রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন।" (দিওয়ানে আলী (রঃ), নাহজুল বালাগা)। 

তাহাজ্জুদ নামাজের আগে-পরে কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা খুবই উপকারী। এ সময় সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা মুলক, সুরা ওয়াকিআহ, সুরা দুখান, সুরা আর রহমান, সুরা ইয়াসিন, সুরা হাশর ও সুরা কাহাফ এবং অন্যান্য সুরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক।
এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ্য সময়। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
﴿ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻗَﻠِﻴﻠٗﺎ ﻣِّﻦَ ﭐﻟَّﻴۡﻞِ ﻣَﺎ ﻳَﻬۡﺠَﻌُﻮﻥَ ١٧ ﴾ ‏( ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ :
١٧)
অর্থাৎ "তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত।" (যারিয়াত: ১৭)

মধ্যরাতের পরে বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। রাত দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত। সাহরির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়।
রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর জমানায় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা আজান দেওয়া হতো। এখনো মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে এই নিয়ম চালু আছে। তাহাজ্জুদের আজানের পরেও (ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত) সাহরি খাওয়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম। তাই অন্য সব সুন্নত ও নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সুরা কিরাআত নিম্ন স্বরে পড়তে হয় এবং এর জন্য ইকামাতেরও প্রয়োজন হয় না।
মা আয়েশা (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রির একাংশে (নামাযে) এত দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা ফুলে ফাটার উপক্রম হয়ে পড়ত।
একদা আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি এত কষ্ট সহ্য করছেন কেন? অথচ আপনার তো পূর্ব ও পরের গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
’তিনি বললেন, “আমি কি শুকরগুযার বান্দা হব না?” (বুখারী ও মুসলিম)
মুগীরা ইবনে শু‘বা হতেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

নফল ইবাদত বিশেষ উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন ছাড়া গোপনে করাই বাঞ্ছনীয়। তবে ‘তাহাজ্জুদ নামাজ অন্ধকারে পড়তে হয়’ বা ‘তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে জিন আসে’ অথবা ‘তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করলে নিয়মিত আদায় করতে হয়’ এ ধারণা সঠিক নয়। তবে কারও ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং প্রচারের মানসিকতা যেন না থাকে; এ বিষয়ে যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম।
আবূ হুরাইরা (রঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।” (বুখারী ও মুসলিম)

তাহাজ্জুদ নামাজের কিরাআত হলো সবচেয়ে দীর্ঘ। এই নামাজে যত ইচ্ছা তত দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করা যায়। এতে রাকাত দীর্ঘ করার জন্য এবং তিলাওয়াতের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য একই রাকাতে বিভিন্ন সুরা ও বিভিন্ন আয়াত পড়া যায় এবং একই রাকাতে একই সুরা বারবার অনেকবার পড়া যায়।
নফল নামাজে কিরাআতে তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি নয়। নফল নামাজে রুকু, সিজদাসহ প্রতিটি রুকন বা পর্ব দীর্ঘায়িত করা সুন্নত ও মোস্তাহাব। এ জন্য রুকু ও সিজদায় তাসবিহ অনেক অনেকবার পড়া যায় এবং অন্যান্য পর্বে বেশি পরিমাণে বিভিন্ন দোয়া মাসুরা (যা কোরআন ও হাদিসে আছে) পাঠ করা যায়।

তাহাজ্জুদ সালা‌তের দোয়া
রাসূলুল্লাহ (সঃড)- বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রাত্রে জাগ্রত হয় ও নিম্নের দোআ পাঠ করে এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, তা কবুল করা হয়। আর যদি সে ওযূ করে এবং ছালাত আদায় করে, সেই ছালাত কবুল করা হয়’।
উচ্চারণ : "লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার; ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।" অতঃপর বলবে, ‘রবিবগফির্লী’ (প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। অথবা অন্য প্রার্থনা করবে।
অনুবাদ : আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর জন্যই সকল রাজত্ব ও তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা এবং তিনিই সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী। মহা পবিত্র আল্লাহ। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। নেই কোন ক্ষমতা নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত’।
(বুখারী, মিশকাত হা/১২১৩, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৯৫; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১২০০)

এছাড়াও নিজের ভাল আমলের কথা বলে, যতটা সম্ভব কেবলা-মুখী হ‌য়ে দোয়া করা। দোয়ার কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ন হলে ৩ বার করে বলা। মহানবী (সঃ) কুরাইশদের উপর বদ দোয়া করার সময় ৩ বার করে বলেছিলেন। দোয়া শেষে মুখে হাত বুলানো বিদআত ।
কারো জন্য দুয়া করতে হলেও সর্বপ্রথম নিজের জন্য দোয়া চাইতে হবে। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও বিতর নামাজে, সাধারন নিয়মের বাহিরে, নিজ থেকে কোন দোয়া করা কিংবা সিজদায় যেয়ে কোন কথা বলার নিয়ম নেই। তাহাজ্জুদ বা নফল সালাতের সিজদায় যেয়ে কোন কুরআনী দোয়া পড়া যাবে না।
মহান আল্লাহর গুনাবলী ও আল্লাহর প্রশংসা করুন। বাস্তব জীবনে ও অন্তরে মহান আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া প্রকাশ করতে হবে। মহান আল্লাহর দয়ামূলক নামগুলো বলে, নিজের গুনাহর কথা স্বীকার করা ও ‘আস্তাগফেরুল্লাহ’ বলে তওবা করা ।
তাহাজ্জুদ/নফল সালাতে জান্নাতের জন্য, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ, অসুস্থতা, সন্তানদের জন্য দোয়া, ন্যায় বিচার প্রার্থী, বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে মহান আল্লাহর দরবারে নিজের সমস্যার কথা বলুন।

প‌রি‌শে‌ষে বলা যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে হজরত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত হননি। তবে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটা সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করা যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না।


^
^
তাহাজ্জুদ নামায পড়ার ফযীলত, তাহাজ্জুদের শ্রেষ্ঠ সময়, তাহাজ্জুদ সালাত, তাহাজ্জুদ সালাতের(নামাজের)ফজিলত। তাহাজ্জু‌দের দোয়া, তাহাজ্জু‌দের সময়, তাহাজ্জুদ সালাত, তাহাজ্জুদ সালাতের ফজীলত । সময়, তাহাজ্জু‌দের টাইম, তাহাজ্জু‌দের ফ‌জীলত,

2 comments:

  1. link নামাজ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. নামাজ সম্পর্কে আপনার লেখাটি অনেক উপকারী মনে হয়েছে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার কাছ থেকে আরও ভালো ভালো এবং উপকারী লেখা আশা করছি।

    ReplyDelete