অসত্য স্ব‌প্নের কথা বলা ক্ষ‌তিকরঃ পর্ব-৪

গত প‌র্বে আমরা জে‌নে‌ছি যে, ভা‌লো স্বপ্ন আল্লাহ প্রদত্ত আর খারাপ স্বপ্ন শয়তা‌নের প্রভাবজাত। তাই আমা‌দের উ‌চিত, যে স্বপ্ন দে‌খিনি বা যা দেখা হয়‌নি তা কখনই বা‌নি‌য়ে বলা ঠিক হ‌বে না। স্বপ্ন বা‌নি‌য়ে বলা মিথ্যাবাদীতার প‌রিচয়। তাই মিথ্যা স্ব‌প্নের কথা বলা বিরাট অন্যায়। তাই আজ স্বপ্ন বা‌নি‌য়ে বলার ক্ষ‌তি সম্প‌র্কে আ‌লোচনা করা হ‌লোঃ

হাদীস শরী‌ফে এসেছে,
عن أبي الأسقع واثلة بن الأسقع رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:  "إن من أعظم الفرى أن يدعي الرجل إلى غير أبيه أو يرى عينه ما لم تر، أو يقول على رسول الله صلى الله عليه وسلم ما لم يقل" . رواه البخاري.
رواه البخاري في المناقب (الأنبياء)، (باب نسبة اليمن إلى إسماعيل).
আবুল আছকা ওয়াসেলা ইবনুল আছকা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন: "সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল, কোনো ব্যক্তি তার নিজের পিতা ব্যতীত অন্যের সন্তান বলে দাবী করা। যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা বর্ণনা করা আর রাসূল (সঃ) যা বলেননি তা তাঁর ব্যপারে বলা।" (সহীহ বুখারী)

এই হাদীস থেকে আমরা শিখতে পারলাম যে:
সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল তিনটি,
(ক) নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে দাবী করা।
(খ) যে স্বপ্ন দেখেনি তা বানিয়ে বলা। অর্থ্যাৎ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা।
(গ) রাসূল (সঃ) যা বলেননি, তা তার কথা বলে চালিয়ে দেয়া।
যারা মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে আর মনে করে, এতে এমন কি ক্ষতি? তাদের জন্য এ হাদীস একটি সাবধান বাণী। এটাকে ছোট পাপ বলে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
সব ধরনের মিথ্যা-ই অন্যায়। এমনকি হাসি ঠাট্টা করে মিথ্যা বলাও পাপ। তবে মিথ্যার মধ্যে এ তিনটি হল খুবই মারাত্মক।
যে পিতা নয় তাকে পিতা বলে লেখা বা ঘোষণা দেয়া এমন অন্যায় যার মাধ্যমে পরিবার প্রথা ও বংশের উপর আঘাত আসে। আর মাতা-পিতার অবদানকে অস্বীকার করা হয়।

কেউ মিথ্যা স্বপ্নের বর্ণনা দিলে তার ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। আর যদি ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে তা সংঘটিত হয়ে যায়। তার উদাহরণ :
এক ব্যক্তি ইমাম ইবনে সীরিন রহ. এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমার হাতে যেন একটি কাঁচের পেয়ালা। সেটি ভেঙ্গে গেল কিন্তু তার পানি রয়ে গেছে।
ইবনে সীরিন রহ. বললেন, তুমি কিন্তু এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখোনি। লোকটি রাগ হয়ে বলল, সুবহানাল্লাহ! (আমি মিথ্যে বলিনি)
ইবনে সীরিন রহ. বললেন, যদি স্বপ্ন মিথ্যা হয়, তাহলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।
আর এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হল, তোমার স্ত্রী মারা যাবে আর পেটের বাচ্চাটি জীবিত থাকবে।
এ কথা শোনার পর লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমি আসলে কোনো স্বপ্ন দেখিনি।
এর কিছুক্ষণ পর তার একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে এবং তাতে তার স্ত্রী মারা গেছে। (ইমাম জাহাবী রহ. প্রণীত সীয়ার আল-আলাম আন নুবালা)

আরেকটি উদাহরণ:
এক ব্যক্তি ওমর (রাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি, জমিন তরু-তাজা সবুজ হয়েছে। এরপর আবার শুকিয়ে গেছে। আবার সবুজ-তরুতাজা হয়েছে, আবার শুকিয়ে গেছে।
জবা‌বে ওমর (রাঃ) বললেন, এর ব্যাখা হল তুমি প্রথমে মুমিন থাকবে পরে কাফের হয়ে যাবে। আমার মুমিন হবে, এরপর আবার কাফের হয়ে যাবে আর কাফের অবস্থায় তুমি মৃত্যু বরণ করবে।
এ কথা শুনে লোকটি বলল, আসলে আমি এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখিনি। ওমর (রাঃ) বললেন :
যে বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করেছিলে তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তোমার বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গেছে; যেমন ফয়সালা হয়েছিল, ইউসূফ আলাইহিস সালামের সাথীর ব্যাপারে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, বর্ণনার সনদ সহীহ)

তাই কখনো কাল্পনিক বা মিথ্যা স্বপ্ন বলা ও তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া ঠিক নয়।


স্বপ্ন নিয়ে আরও পোস্ট:
স্বপ্ন নি‌য়ে ধারাবা‌হিক প্র‌তি‌বেদনের আজ ১ম পর্ব
^
^
অসত্য স্বপ্ন, মিথ্যা স্বপন, যে স্বপ্ন বলা উ‌চিত না, স্বপ্ন

No comments:

Post a Comment