ভুমিকা
ব্লক হল কাঠের উপর খোদাই করা নকশা। ব্লক দিয়ে ছাপানো কাপড়কে ব্লক প্রিন্ট বলে। ব্লক প্রিন্ট হল এক ধরণের ছাপা কাপড়। সুতি, সিল্ক, খাদি সব ধরণের কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট করা যায়। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এই যে, একই ব্লক দিয়ে নানান কাপড় নানান রঙ ও ডিজাইনে প্রিন্ট করা যায়। বর্তমানে ব্লক প্রিন্ট এর কাপড় বেশ জনপ্রিয়। কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট করে আয় করা সম্ভব। যে কোন ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার জন্য কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট করার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
ব্লকপ্রিন্ট-এর বাজার সম্ভাবনা
দেশে তৈরি সুতি বা সিল্কের কাপড় সহজেই ব্লক প্রিন্ট করা যায়। কাপড়, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ওড়না, ফতুয়া, পঞ্জাবি, বিছানার চাদর, কুশন কভার ইত্যাদি ব্লক প্রিন্ট করে মেলা, হাট-বাজার ও স্থানীয় দোকানে পাইকারি ও খুচরা দামে বিক্রয় করা যায়।
এছাড়া শহরে অবস্থিত কারু ও হস্ত শিল্পের দোকানগুলোতে ব্লক প্রিন্টের কাপড়ের অনেক চাহিদা রয়েছে। এসব দোকানগুলোর সাথে যোগাযোগ করে ব্লক প্রিন্ট করা কাপড় বিক্রয় করা সম্ভব।
উদ্যোক্তা নিজেই দোকানে গিয়ে ছাপানো কাপড় সরবরাহ করলে পাইকারের (মধ্য-সত্বভোগী) লাভের অংশটুকুও নিজের থাকে। তাই সব সময় নিজে দোকানে গিয়ে কাপড় সরবরাহ করলে লাভ বেশি হবে।
ব্লকপ্রিন্ট ব্যবসার মূলধন
ব্লক প্রিন্ট করার জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে আনুমানিক ১০৭০-১৪৮৫ টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া ৪টি শাড়ি ব্লক প্রিন্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনতে প্রায় ১৩৮০-১৭০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পুঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
ব্লকপ্রিন্টের প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অর্থের বিনিময়ে ব্লক প্রিন্ট-এর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এছাড়া নানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ব্লক প্রিন্টের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ নেয়া সম্ভব।
ব্লকপ্রিন্টের প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থানঃ
স্থায়ী উপকরণঃ
উপকরণ= পরিমাণ= আনুমানিক মূল্য (টাকা)= প্রাপ্তিস্থান
কাঠের টেবিল
১টি
৩০০-৫০০
আসবাবপত্রের দোকান
পছন্দ অনুযায়ী কাঠের ব্লক
৪/৫টি
৫০০-৬০০
হার্ডওয়ারের দোকান
রঙের ট্রে
২টি
১০০-১৫০
হার্ডওয়ারের দোকান
ব্রাশ
২/৩টি
৬০-১০০
হার্ডওয়ারের দোকান
পুরাতন কম্বল
১টি
৫০-৬০
পুরানো গরম/শীতের কাপড়ের দোকান
প্লাস্টিকের বাটি
১টি
১০-১৫
তৈজসপত্রের দোকান
চামচ
১টি
১০-১৫
তৈজসপত্রের দোকান
মোটা মার্কিন কাপড়
১ গজ
৪০-৪৫
কাপড়ের দোকান
মোট = ১০৭০-১৪৫৮ টাকা
উপকরণ= পরিমাণ= আনুমানিক মূল্য (টাকা)= প্রাপ্তিস্থান
শাড়ি
৪টি
৮০০-১০০০
কাপড়ের দোকান
হোয়াইট পেস্ট
২০০ গ্রাম
১৫০-১৭০
জেলা সদর অথবা ঢাকার গাউছিয়া
একরামিন
২০০ গ্রাম
১০০-১২০
চকবাজারের রঙের দোকান বা স্থানীয় রঙের দোকান
বাইন্ডার
২৫০ গ্রাম
৪০-৪৫
অকজেল
১০০ গ্রাম
৫০-৬০
এন কে
১০০ গ্রাম
২০০-২৫০
রঙ (২/৩ রঙ)
পরিমাণমতো
৪০-৫৫
মোট = ১৩৮০-১৭০০ টাকা
ব্লক প্রিন্ট করার নিয়মঃ
১. কাপড় ব্লক প্রিন্ট করার আগে কাপড় ধুয়ে মাড় ছাড়িয়ে নিতে হবে।
২. প্রথমে টেবিলে চট বিছিয়ে নিতে হবে। চটের উপর একটি মোটা পশমী কম্বল বা কাঁথা বিছিয়ে তার উপর যে কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট করা হবে সেটা বিছিয়ে নিতে হবে। ব্যবসার শুরুতে টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বা ঘরের মেঝেতেও এইভাবে কাপড় বিছিয়েও ব্লক প্রিন্ট করা যায়।
৩. টেবিল বা মেঝের একপাশে রঙের ট্রে রাখতে হবে। ট্রের মাঝে পুরাতন কম্বলের টুকরাটি রাখতে হবে।
৪. এখন একটা পাত্রে রঙের সব উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে ব্রাশ দিয়ে ট্রের মাঝের কম্বলে ভালোভাবে ছড়িয়ে নিতে হবে।
৫. ট্রের ভেতরের কম্বলে চাপ দিয়ে কাঠের ব্লকটিতে ভালোভাবে রঙ লাগাতে হবে।
৬. এর পর ঐ ব্লক দিয়ে কাপড়ের যেখানে নকশা করতে হবে সেখানে জোরে চাপ দিয়ে উঠিয়ে ফেললেই কাপড়ে নকশা হয়ে যাবে।
৭. কাপড়টি বাতাসে কিছুক্ষণ মেলে রেখে রঙ শুকিয়ে গেলেই উঠিয়ে ফেলতে হবে।
ব্লকপ্রিন্ট করতে সাবধানতা
১. ভালো ডিজাইনের ব্লক সংগ্রহ অথবা তৈরি করতে হবে।
২. রঙ পরিমাণ অনুযায়ী মেশাতে হবে। তা না হলে কাপড়ে নকশার রঙ তাড়াতাড়ি উঠে যাবে।
৩. ব্লকে রঙ ঠিকমতো লেগেছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
৪. নকশাটা ঠিকমতো বসাতে হবে।
আয় ও লাভের হিসাব
মোট খরচ
খরচের ক্ষেত্র
আনুমানিক মূল্য (টাকা)
৪টি শাড়ি ব্লক প্রিন্ট করতে কাঁচামাল বাবদ খরচ
১৩৮০-১৭০০
স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ
১০-১৫
যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ
১২০-১৫০
মোট খরচ
১৫১০-১৮৬৫
আয় ও লাভের পরিমাণ
৪টি শাড়ি ব্লক প্রিন্ট করে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রয় করলে মোট আয় হবে ২১০০-২২০০ টাকা
৪টি শাড়ি ব্লক প্রিন্ট করতে মোট খরচ ১৫১০-১৮৬৫ টাকা
৪টি শাড়ি ব্লক প্রিন্ট বিক্রয় করে লাভ প্রায় ৫৯০-৩৩৫ টাকা
বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর ব্যবসার লাভ-ক্ষতি ও আয় নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠা-নামা করে। তাই এই ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।
অল্প পুঁজি নিয়েই ঘরে বসেই ছোট আকারে কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট করার ব্যবসা শুরু করা যায়। বর্তমান বাজারে ব্লক প্রিন্টের কাপড়ের চাহিদাও অনেক বেশি। একজন বেকার নারী বা পুরুষ অল্প পুঁজি নিয়ে কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট করার ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
© তথ্য আপা
^
^
ব্লক প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট ব্যবসা, অল্প টাকায় ব্লক block print ব্লক প্রিন্টের ব্যবহার, ব্লক প্রিন্ট কিভাবে করে, block print business
No comments:
Post a Comment