শুরু হলো সিয়াম সাধনার মাস প‌বিত্র মা‌হে রমজান

আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের বহু প্রতীক্ষিত সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান।
রমজান উপলক্ষে আজ সোমবার রাত থেকেই শুরু হচ্ছে তারাবীহ নামাজ। রাতের প্রথমভাগে তারাবিহ্ নামাজ আর শেষ ভাগে সেহরি শুরু হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রথম রোজার সেহরির শেষ সময় ধরা হয়েছে রাত ৩টা ৩৮ মিনিট। এছাড়া প্রথম রোজার ইফতারের সময় ধরা হয়েছে ৬টা ৪৮ মিনিট।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অফুরন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বারতা নিয়ে আসে পবিত্র মাহে রমজান। সংযম চর্চার মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জন ও মহান আল্লাহপাকের অনুগ্রহ লাভের লক্ষ্যে
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পালন করে থাকেন সিয়াম সাধনা।
দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকা ছাড়াও জাগতিক মোহ, কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা দমন করে আত্মশুদ্ধির সাধনা চলবে পুরো রমজান মাস জুড়ে। রোজা রাখার পাশাপাশি সাধ্যমতো দান-খয়রাত ও বেশি বেশি নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এই মাসের দিনগুলো অতিবাহিত করবেন মুসল্লিরা।
রহমত ও বরকতের দিক দিয়ে রমজান মাস বছরের অন্য ১১ মাস থেকে ভিন্ন। এ সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসের প্রথমাংশে রহমত, দ্বিতীয়াংশে মাগফিরাত অর্থাৎ ক্ষমা আর তৃতীয়াংশে নাজাত তথা দোজখ থেকে মুক্তি।
আখেরি নবী মদিনায় হিজরত করে যাওয়ার দ্বিতীয় বছরে রমজানের সিয়াম পালনের বিধান নিয়ে নাজিল হয় কুরআন মজিদের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াত। এতে ঘোষণা করা হয়, হে মুমিনরা, তোমাদের প্রতি সিয়াম পালন আবশ্যিক করা হলো, যেমন তা আবশ্যিক করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের প্রতি, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।
এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর প্রথম রমজান আগমনের আগে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে এক নাতিদীর্ঘ ভাষণ দেন।
হাদিসশাস্ত্রের অন্যতম প্রসিদ্ধ মনীষী ইমাম বায়হাকিসহ বেশ কয়েকজন মুহাদ্দিস তাদের গ্রন্থে এটি সঙ্কলন করেছেন। এতে তারা রমজানের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও করণীয় সম্পর্কে উম্মতকে অবহিত করেন। হজরত সালমান ফারসি রা. বর্ণনা করেন, শাবান মাসের শেষ ভাগে এক দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। বললেন, লোকেরা, তোমাদের ওপর এসে পড়েছে এক মহান মাস, বরকতময় মাস। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা এ মাসের সিয়াম ফরজ  এবং (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) রাতে জেগে থাকা ঐচ্ছিক করেছেন।

পবিত্র এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। আর যে ব্যক্তি এতে একটি ফরজ আদায় করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রয়েছে গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং রোজাদারের মতোই তাকে প্রতিদান দেয়া হবে। কিন্তু রোজাদারের প্রতিদান কমানো হবে না।

প্রশ্ন করা হলো: আল্লাহর রাসূল, রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের প্রত্যেকের নেই। তিনি বললেন, যে কেউ কোনো রোজাদারকে একটু দুধ, একটি খেজুর কিংবা একটু পানীয় দিয়ে ইফতার করাবে, তাকেই আল্লাহ তায়ালা এ প্রতিদান দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্ত করে আহার করাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাওছার থেকে পানি পান করাবেন।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে যে ব্যক্তি সিয়াম আদায় করবে, তার পূর্বেকার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারি ও মুসলিম শরীফ)।
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, রমজান মাস শুরু হলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়; সারা মাস তা আর বন্ধ করা হয় না। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়; সারা মাস তা আর খোলা হয় না। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী, তুমি অগ্রসর হও। আর হে অকল্যাণ অন্বেষণকারী, তুমি নিবৃত্ত হও।
#RTNN

No comments:

Post a Comment