কোষ্টকাঠিন্য একটি রোগ। মানব শরীরে এই রোগের কুপ্রভাব অনেক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য সহজ কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) বেশ কষ্টদায়ক একটি সমস্যা। রহমান সাহেবের বয়স ৪০ বছরের মতো। ভালো একটা চাকরি করেন। বেশ কিছুদিন যাবৎ রহমান সাহেবের শক্ত পায়খানা হচ্ছে। টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও মনে হচ্ছে পায়খানা ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে না। রহমান সাহেবকে খুবই বিষণ্ণ মনে হচ্ছে। দিন দিন কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছেন। অবশেষে রহমান সাহেবের পরীক্ষা করে দেখা গেল, তার কোলনে অর্থাৎ অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার।
রহমান সাহেবের যে উপসর্গগুলো তা মূলত কোষ্ঠকাঠিন্যের। কিন্তু এ কোষ্ঠকাঠিন্য কী, কেন হয়? তা আমরা কিভাবে প্রতিরোধ করতে পারি এবং সময়মতো এর চিকিৎসা না করলে কী কী পরিণতি হতে পারে সে বিষয়েই এখন আমরা আলোচনা করব।
কোষ্ঠকাঠিন্য কি? পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও কেউ যদি প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায়, তখনই একে কোষ্ঠকাঠিন্য-Constipation বলা হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ
বিভিন্ন কারণে কোস্টকাঠিন্য হয়ে থাকে। যেমন: ১. আঁশজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে;
২. পানি কম খেলে;
৩. দুশ্চিন্তা করলে;
৪. কায়িক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে;
৫. অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে;
৬. ডায়াবেটিস হলে;
৭. মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে;
৮. অনেক দিন বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে;
৯. বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন। যেমন:
ক. ব্যথার ওষুধ;
খ. উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ;
গ. গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ;
ঘ. খিঁচুনির ওষুধ এবং
ঙ. যেসব ওষুধের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে।
তাছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এর মধ্যে কাঁপুনিজনিত অসুখ, স্নায়ু রজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও থাইরয়েডের সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণঃ
বিশেষ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে সহজেই কোষ্টকাঠিন্য নির্ণয় করা সম্ভব। যেমন:
১. শক্ত পায়খানা হওয়া;
২. পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা;
৩. পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া;
৪. অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতা না আসা;
৫.মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব করা এবং
৬. আঙুল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়ঃ
বিভিন্নভাবে কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়। যেমন:
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে;
২. প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে;
৩. দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে;
৪. যারা সারাদিন বসে কাজ করেন তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং
৫. যেসব রোগের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তার চিকিৎসা করতে হবে;
৬. প্রসাব-পায়খানা আটকানোর চেষ্টা না করা।
কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করা না হলে যে সমস্যা হতে পারেঃ
কোস্টকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত হলে, চিকিৎসা সেবা গ্রহন আবশ্যক। তা না হলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন:
১. পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে;
২. পাইলস;
৩. এনালফিশার;
৪. রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে;
৫. মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে;
৬. প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে;
৭. খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে;
৮. খাদ্যনালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং
৯. কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তবে অকালমৃত্যুও হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকেই প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সিরাপ এবং মলদ্বারের ভেতরে দেয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ফলে মলদ্বারে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর থাকে না। তাই বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না, এদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাদের উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করে সে হিসেবে চিকিৎসা নেয়া। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসবগুলের ভূসি পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেললে এবং গরু, খাশি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে তা থেকে দূরে থাকলে অনেকে উপকৃত হতে পারেন।
- অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
^
^
@কোষ্টকাঠিন্য হলে করণীয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, কোষ্ঠকাঠিন্য কী, #কোষ্টকাঠিন্য সমাধান করার সহজ উপায়, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়, কোস্টকাঠিন্য রোগের চিকিৎসা,
No comments:
Post a Comment