কাজের ক্ষেত্র বিশাল, সহজেই মেলে চাকরি। আছে ভালো বেতন, বিদেশ ভ্রমণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। নানা কারণেই বায়িং হাউসের চাকরি অনেকেরই প্রথম পছন্দ। বিস্তারিত জানাচ্ছেন রায়হান আহমদ আশরাফী।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা বিশ্ববাজারে। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাতও এটি। গার্মেন্টের তৈরি পণ্য বিক্রিতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে বায়িং হাউস। পোশাক খাতের এসব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মার্চেন্ডাইজাররা। এ পেশায় আছে অনেক কাজের সুযোগ।
কাজের ধরন
বায়িং হাউস ফ্যাশন এক্সপ্রেসের সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার মাঈদুল ইসলাম জানান, মার্চেন্ডাইজারদের কাজের প্রধান ক্ষেত্র দুটি—ফ্যাক্টরি ও বায়িং হাউস। বায়িং হাউসে কাজের পরিধি বড়। বায়ারদের সঙ্গে
যোগাযোগ করে পণ্য বিক্রির প্রস্তাব দেন বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজাররা। বায়ার রাজি হলে প্রোডাক্টের স্যাম্পল দেখানো হয়। প্রোডাক্ট তৈরিতে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হবে, মান, কতটুকু টেকসই হবে—এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। পছন্দ হলে দামের বিষয়টি চূড়ান্ত করে চুক্তি করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাক্টরিতে প্রোডাক্ট তৈরি থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত পুরো কাজ দেখতে হয় মার্চেন্ডাইজারদের। ফ্যাক্টরির মার্চেন্ডাইজাররা বায়িং হাউসের মাধ্যমে পাওয়া কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি ও পণ্যের মানের বিষয়টি দেখভাল করেন। বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজারদের কাছে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের কাজ। অনেক ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইমপোর্ট করা, এলসি খোলার কাজও করেন ফ্যাক্টরির মার্চেন্ডাইজাররা।
যেমন যোগ্যতা থাকা চাই
মার্চেন্ডাইজারস ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি ও বায়িং হাউস এশিয়ান গ্লোবাল সোর্সিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মাওলা জানান, মার্চেন্ডাইজার হওয়ার জন্য যেকোনো বিষয়ে স্নাতক হলেই চলে। তবে অগ্রাধিকার পায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা টেক্সটাইলের যেকোনো বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা। মার্চেন্ডাইজারদের বিভিন্ন দেশের বায়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। এ জন্য ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হয়। পাশাপাশি অন্য দেশের ভাষা জানা থাকলে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। কম্পিউটারেও দক্ষতা থাকা চাই।
চাকরি পাবেন যেভাবে
বায়িং হাউস ও ফ্যাক্টরিতে মার্চেন্ডাইজার নিয়োগের জন্য পত্রিকায় তেমন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় না। অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন জব পোর্টালের মাধ্যমে সিভি চায়। তবে বেশির ভাগ নিয়োগ হয়ে থাকে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও পরিচিতির মাধ্যমে। বিভিন্ন বায়িং হাউস, ফ্যাক্টরি ও মার্চেন্ডাইজিং পেশায় কর্মরতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। মাঈদুল ইসলামের পরামর্শ, বিভিন্ন জব পোর্টালের গার্মেন্ট, টেক্সটাইল বা মার্চেন্ডাইজিং ক্যাটাগরিতে নিয়মিত চোখ রাখতে হবে। বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে সরাসরি সিভি জমা দিয়ে রাখতে পারেন। সাধারণত ভাইভার মাধ্যমেই নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেক সময় লিখিত পরীক্ষাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গার্মেন্ট বা মার্চেন্ডাইজিংসম্পর্কিত প্রশ্ন আসে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে ভাইভা নেওয়া হয় ইংরেজিতে। এতে প্রার্থীর ইংরেজির দক্ষতাও যাচাই হয়ে যায়। নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায় অভিজ্ঞ বা টেক্সটাইল বিষয়ে পড়াশোনা করা প্রার্থীরা। অনভিজ্ঞ প্রার্থীরাও আত্মবিশ্বাস, এ পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আগ্রহ দেখাতে পারলে চাকরি পেতে পারেন।
পদোন্নতি
গোলাম মাওলা জানান, অনভিজ্ঞদের সাধারণত অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগ্যতা অনুযায়ী মার্চেন্ডাইজার, সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার ও মার্চেন্ডাইজার ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। পদোন্নতি হয় কাজ ও দক্ষতার ভিত্তিতে। বায়ারকে আকৃষ্ট করা, সঠিক সময়ে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কাজের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে চাকরি শুরুর বছরখানেকের মধ্যেই পদোন্নতি পেয়ে মার্চেন্ডাইজার হতে পারেন অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার।
বেতন ও সুযোগ-সুবিধা
শুরুতে একজন মার্চেন্ডাইজার ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পান। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে বাড়ে বেতনও। সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার বা মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন। বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতাও দেওয়া হয়।
মার্চেন্ডাইজাররা বিভিন্ন দেশে গার্মেন্ট খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেলা বা প্রদর্শনীতে অংশ নেন। মার্চেন্ডাইজারের কাজে সন্তুষ্ট হলে অনেক সময় বিদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান বায়ার। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগ পান মার্চেন্ডাইজাররা।
প্রশিক্ষণের খোঁজখবর
স্নাতক শেষে মার্চেন্ডাইজিংয়ের ওপর কোর্স করা যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস থেকে এক বছরমেয়াদি কোর্স আছে। কোর্স করা থাকলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউএফটি) অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে এক বছরমেয়াদি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমায় খরচ পড়বে ৯১ হাজার টাকা। অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে দুই বছরমেয়াদি এমবিএ করতে চাইলে গুনতে হবে দুই লাখ ৮০ হাজার ৭০০ টাকা। ভর্তি করা হয় স্প্রিং এবং ফল—দুই সেমিস্টারে।
মার্চেন্ডাইজারস ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে (এমআইএফটি) এক বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স শুরু হয় জানুয়ারিতে। খরচ পড়বে ৫০ হাজার টাকা। ছয় মাসমেয়াদি এক্সিকিউটিভ কোর্সে খরচ পড়বে ২৫ হাজার, চার মাসের সার্টিফিকেট কোর্সে ১৫ হাজার টাকা। দুটি কোর্সই শুরু হয় জুলাইয়ে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে (এনআইএফটি) ছয় মাসের অ্যাডভান্স সার্টিফিকেট কোর্সে খরচ পড়বে ৩৫ হাজার টাকা। দুই বছরমেয়াদি এমবিএ কোর্সে শিক্ষার্থীদের সিজিপিএর ওপর কোর্স ফি নির্ভর করে। খরচ সর্বনিম্ন এক লাখ ১৬ হাজার ৫০০ থেকে এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এক বছরের ডিপ্লোমায় গুনতে হবে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
প্রশিক্ষণ নেবেন যেখানে
♦ বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি)
১০৫ এসআর টাওয়ার, উত্তরা, সেক্টর-৭, ঢাকা।
ফোন : ৫৮৯৫০৯৮৬, ৫৮৯৫০৯৮৭, ৪৮৯৫০৫৩৫
১০৫ এসআর টাওয়ার, উত্তরা, সেক্টর-৭, ঢাকা।
ফোন : ৫৮৯৫০৯৮৬, ৫৮৯৫০৯৮৭, ৪৮৯৫০৫৩৫
♦ মার্চেন্ডাইজারস ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এমআইএফটি)
হাউস-২০, তৃতীয় তলা, শাহ মখদুম এভিনিউ, উত্তরা, সেক্টর-১১, ঢাকা।
ফোন : ৫৫০৮৫২৩৯, ০১৭১৬৬৭২৬৬৩
হাউস-২০, তৃতীয় তলা, শাহ মখদুম এভিনিউ, উত্তরা, সেক্টর-১১, ঢাকা।
ফোন : ৫৫০৮৫২৩৯, ০১৭১৬৬৭২৬৬৩
♦ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন টেকনোলজি
৩/গ শ্যামলী, রোড-১, ঢাকা-১২০৭।
ফোন : ০১৯৭৯৭৯৯৩৯৩, ০১৫৫২৬৪৪৪৭৯
৩/গ শ্যামলী, রোড-১, ঢাকা-১২০৭।
ফোন : ০১৯৭৯৭৯৯৩৯৩, ০১৫৫২৬৪৪৪৭৯
♦ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)
৭৩ মহাখালী, ওয়্যারলেস গেট, ঢাকা।
ফোন : ০১৬৭৮৬৬৬৬২৪, ০১৭৩১২২০০৯৯
৭৩ মহাখালী, ওয়্যারলেস গেট, ঢাকা।
ফোন : ০১৬৭৮৬৬৬৬২৪, ০১৭৩১২২০০৯৯
#Kalerkantho
No comments:
Post a Comment