রমজান এসে গেল বলে। সিয়াম সাধনার মাসে শুরু করতে পারেন ছোটখাটো ব্যবসা। রমজানের কয়েকটি মৌসুমি ব্যবসা :
চাহিদা অনুযায়ী সেহরি ও ইফতারি হোম ডেলিভারি হতে পারে ব্যবসা
রমজানের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ইফতারি। অল্প পুঁজিতেই এক মাসের জন্য শুরু করতে পারেন ইফতারির ব্যবসা। প্রথমেই কোথায় বিক্রি করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে। স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে এমন জায়গা বেছে নেওয়া উচিত, যেখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। ইফতারির মেন্যুতে প্রায় সবারই পছন্দ ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি, জিলাপি। চপের আছে নানা পদ—আলুর চপ, শাকের চপ, ডিম চপ, চিকেন চপ ইত্যাদি। সমুচা, পাকোড়া, চিকেন ফ্রাই, ভেজিটেবল রোলও রাখতে পারেন। তবে ইফতারির আইটেম তৈরিতে প্রথমেই ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় কাঁচামাল ও অন্যান্য জিনিস কেনার জন্য মূলধনের প্রয়োজন হবে। কাঁচামালের জন্য পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পুঁজি হলেই চলবে। খরচ কমাতে চাইলে রান্নার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি বাসা থেকেই জোগাড় করতে পারেন।
লাগবে যা যা
লাগবে সয়াবিন তেল, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, আলু, বেগুন, বেসন, ময়দা। আইটেম বেশি হলে লাগতে পারে গাজর, পেঁপে, নানা ধরনের শাক। আইটেম অনুসারে প্রয়োজন হতে পারে ডিম, মুরগি বা গরুর মাংস। সালাদের আইটেমে লাগবে শসা, টমেটো, ধনেপাতা, লেবু, লেটুস পাতা। একটি নির্দিষ্ট স্থানে তৈরি করে বিক্রি করতে হলে চাই রান্নার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। লাগবে চুলা, কেরোসিন, কড়াই, প্লাস্টিকের বোল, ঝুড়ি, বালতি, বটি, ছুরি। সাজানোর জন্য প্রয়োজন হবে টেবিল, অ্যালুমিনিয়াম বা মেলামাইনের ডিশ, খাবার ঢেকে রাখার জন্য স্বচ্ছ পলিথিন বা ঢাকনা, বিক্রেতার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস। বিক্রির জন্য ঠোঙা, ওয়ানটাইম বক্স, পলিব্যাগ রাখতে পারেন। ইফতারি তৈরির জন্য কমপক্ষে একজন বাবুর্চি লাগবে। দোকানের আকার আর বেচাকেনার ওপর নির্ভর করবে বিক্রেতার সংখ্যা। তবে ছোট আকারে শুরু করলে একজন বিক্রেতা হলেই চলে।
পলাশীর মোড়ে গেলবার ইফতার বিক্রির ব্যবসা করেছেন সোহেল হোসেন। তিনি জানান, কম দামে রান্নার কাঁচামাল কিনতে চাইলে যেতে হবে কারওয়ান বাজার আর পুরান ঢাকার আনন্দ বাজারে। অন্যান্য মালামাল পাবেন চকবাজার, বাবুবাজার, নয়াবাজার, কামরাঙ্গীরচর আর বাবুবাজারে। বাজার ঘুরে বিভিন্ন দোকান যাচাই করতে হবে। যেখানে কম দামে ভালো পণ্য পাবেন, সেখান থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। দৈনিক হিসেবে বা পুরো মাসের জন্য চুক্তিতে লোকবল নিয়োগ দিতে পারেন।
টুপি-আতরের ব্যবসা
সারা বছরের তুলনায় রমজান মাসে টুপি ও জায়নামাজের বিক্রি বাড়ে। বিভিন্ন মসজিদ, দরগাহ বা বিপণিবিতানের সামনে দিতে পারেন এসব সামগ্রীর ভ্রাম্যমাণ দোকান। মুসল্লিরা টুপি, খুশবো বা আতর, সুরমা, মেসওয়াক ব্যবহার করে। বিক্রি করতে পারেন তসবিহ, আগরবাতি, গোলাপজল। সঙ্গে রাখতে পারেন কোরআন শরিফ, হাদিসের কিতাব, নামাজ-রোজার নিয়মসংবলিত কিতাব বা ছোট ছোট পঞ্জিকা।
শুরু করতে পারেন পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যেই। পুঁজি বেশি হলে একসঙ্গে অনেক পণ্য পাইকারি দামে কেনা যায়। সে ক্ষেত্রে দাম কম পড়বে, লাভ হবে বেশি।
পাইকারি কিনবেন কোথায়
নিউমার্কেটের আতর বিক্রেতা আবদুস সালাম মিয়া জানান, পুরান ঢাকার নবাবপুর, ইসলামপুর, চকবাজারে এ ধরনের ব্যবসার প্রায় সব পণ্যই পাইকারি পাওয়া যায়। সব পণ্য একসঙ্গে পাবেন চকবাজারে। বিভিন্ন ধর্মীয় কিতাবের জন্য চক শাহি মসজিদ ও বঙ্গবাজারে যেতে পারেন। আতরের জন্য মিটফোর্ড রোডে অনেক দোকান রয়েছে। কম দামে টুপি সংগ্রহ করতে চাইলে বগুড়া, সিরাজগঞ্জে টুপির বাজার থেকে পাইকারি কিনতে পারেন। ঢাকার বায়তুল মোকাররমের পাশের মার্কেটে খুচরা দোকানের পাশাপাশি অনেক পাইকারি বিক্রেতাও আছে।
ইফতার ও সেহরি হোম ডেলিভারি
ব্যস্ততা আর যানজটের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই খেতে পারে না ইচ্ছামতো বাহারি স্বাদের ইফতারি। সেহরিরও চাহিদা আছে। চাহিদা অনুযায়ী ইফতারি হোম ডেলিভারিও হতে পারে ব্যবসা। রংধনু একাডেমির সত্ত্বাধিকারী সুলতানা পপি জানান, ঘরে তৈরি নাকি বিভিন্ন রেস্তোরাঁ থেকে সংগ্রহ করে হোম ডেলিভারি করবেন—তা প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে। ঘরে খাবার তৈরি করতে হলে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনতে হবে। ইফতারি তৈরির জন্য লাগবে অভিজ্ঞ বাবুর্চি। হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতারি সরবরাহ করতে চাইলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। জেনে নিতে হবে ইফতারির মেন্যু, মান ও বিভিন্ন আইটেমের দাম। কম দামে বিভিন্ন ইফতারি নেওয়ার জন্য চুক্তি করে নিতে পারেন। সারা শহরে ইফতারি পৌঁছে দেবেন, নাকি কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় সরবরাহ করবেন—তা নির্ধারণ করা জরুরি। সব ধরনের ক্রেতার কথা মাথায় রেখে খাবারের মেন্যু সাজাতে হবে। দাম থাকা চাই নাগালের মধ্যে। দেওয়া যেতে পারে প্যাকেজ অফার। প্রচলিত সাধারণ আইটেমের পাশাপাশি ভোজনরসিক ও স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য আলাদা আইটেম রাখতে পারেন।
লাগবে ডেলিভারিম্যান
ঘরে তৈরি বা রেস্তোরাঁ থেকে সংগ্রহ করে যেভাবেই বিক্রি করেন, গ্রাহকের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লাগবে ডেলিভারিম্যান। ডেলিভারিম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিচিত ও বিশ্বস্ত লোকদের গুরুত্ব দিতে হবে। স্বল্প সময়ে যানজট ঠেলে নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছতে বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেলের বিকল্প নেই। প্রার্থীকে অবশ্যই দুটি বাহনের যেকোনো একটি চালনায় পারদর্শী হতে হবে। নিজের বাহন আছে এবং উদ্যোমী তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। শহরের বিভিন্ন এলাকা ও অলিগলি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা চাই।
ফোনে বা অনলাইনে অর্ডার
হোম ডেলিভারি সার্ভিসের জন্য নির্দিষ্ট ফোন নম্বর, ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ এবং ওয়েবসাইট থাকা চাই। এক মাসের জন্য কার্ড বা লিফলেট ছাপাতে পারেন। মৌসুমি ব্যবসায় খরচ কমাতে চাইলে ওয়েবসাইটের প্রয়োজন নেই। প্রচার চালাতে পারেন ফেসবুকে। নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ খুলে বন্ধুদের সেখানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে প্রতিটি আইটেমের ছবি পোস্ট করুন। ছবির একপাশে এবং ক্যাপশনে নাম, দাম ও যোগাযোগের নম্বর উল্লেখ করুন। ফোনে ও ফেসবুকে সব সময় সক্রিয় থেকে ক্রেতাদের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
সময়মতো ডেলিভারি
সেহরি ও ইফতারের সময় নির্দিষ্ট। এর আগেই গ্রাহকের ঠিকানায় খাবার পৌঁছে দিতে হবে। অর্ডারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে রাখুন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্ডার শেষ হলে তা তৈরি বা সংগ্রহ করতে হবে। হাতে পর্যাপ্ত সময় রেখে ডেলিভারির জন্য বেরিয়ে পড়তে হবে। খাবারের মান ধরে রাখার জন্য ওয়ানটাইম প্লাস্টিক বক্স বা কাগজের বক্স ব্যবহার করতে পারেন। প্রত্যেক আইটেম আলাদা রাখতে হবে। খাবার প্রয়োজনমতো গরম রাখতে বাটার পেপার বা ফুয়েল পেপার ব্যবহার করতে পারেন। খাবারের প্যাকিং আকর্ষণীয় হতে হবে। ভালো মানের ইফতারি নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি করতে পারলে ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে।
@ KalerKantho
dearbangla : মৌসুমি ব্যবসা, ইফতারির ব্যবসা, ব্যবসার ধরন
No comments:
Post a Comment