জীবন থেমে থাকে না। আর তাইতো সে জীবনের চাকা সচল রাখতে অবিরাম সেলাই মেশিনের চাকা ঘোরাচ্ছেন আর্জিনা বেগম।
‘পরিশ্রম করলেই ভাগ্যের ঘোরানো সম্ভব' তারই প্রমাণ দিলেন আlর্জিনা বেগম। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের আর্জিনা বেগম, দর্জির কাজ করেই সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। তার সেলাই মেশিনের কাজে সহযোগিতা করছেন স্বামী মিয়াজ উদ্দিন।
আর্জিনার একাগ্রতা, পরিশ্রম আর প্রতিভা দেখে প্রতিবেশী অনেক মহিলাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তার কাছে। এক সময় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। বর্তমানে আরডিআরএস এবং বিআরডিবি থেকে
কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে সব কিছু বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন আর্জিনা। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই রক্ষা পায়নি রাক্ষসী ধরলার ভাঙনে। তবুও স্বপ্ন ছিল তার স্বাবলম্বী হওয়ার। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত আর ভালোভাবে খাওয়ানোর স্বপ্ন ছিল আর্জিনার।
উপজেলা বিআরডিবির অধীনে উত্তরাঞ্চলে হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালু হয়। এর মাধ্যমে মহিলাদের সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণের তালিকায় ২০১০ সালে আর্জিনা নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। সেখানে ৬ মাস দক্ষতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একটি সেলাই মেশিনও বিনামূল্যে পান আর্জিনা। প্রথমে বাড়িতে বসে পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করেন। পরে বসতঘরের এক পাশে দর্জির দোকান খোলেন তিনি। কাজের মান ভালো হওয়ায় অল্পদিনের মধ্যেই এলাকায় সাড়া ফেলেন তিনি। কিন্তু পুঁজির অভাব তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কিছুটা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এমন সময় তার পাশে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ঋণ দেয় আরডিআরএস এবং বিআরডিবি কর্তৃপক্ষ।
স্বল্পসুদে ৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কাপড় কিনে ঘরে বসেই বিভিন্ন ডিজাইনের তৈরি পোশাকগুলো স্বামীর মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন। তার তৈরি পোশাকের ডিজাইন দেখে গ্রামের মানুষ স্বল্পমূল্যে ক্রয় করতে থাকে। ভালো মানের পোশক কম মূল্যে পাওয়া যায়, অল্পদিনের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের গ্রামের নারী-পুরুষ এসে তার কাছ থেকেই তৈরি পোশাক নিতে থাকলে ধীরে ধীরে তার ব্যবসার প্রসার ঘটে।
আর্জিনা জানান, বর্তমানে তার সুখের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলেটি ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে লেখাপড়া করছে আর মেয়েটি তৃতীয় শ্রেণীতে। আর্জিনা বেগম দর্জির দোকানে সেলাইর কাজ করে এরই মধ্যে ৪টি গরুর মালিক ও তিন বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছেন। ভবিষ্যতে সরকারি বেসরকারি সংস্থা থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পেলে বাজারে বড় করে দর্জির দোকান দিয়ে পল্লী অঞ্চলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান আর্জিনা বেগম। পাশাপাশি গ্রামের বেকার কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাতেও সহায়তা করবেন বলে তিনি জানান।
#তথ্য-আপা
নারী, কর্ম, দর্জি, সেলাই, কাজ,
No comments:
Post a Comment