দ‌র্জির কাজ ক‌রে কমলা আজ স্বাবলম্বী

আত্মপ্রত্যয়ী এক কমলা
দর্জির কাজ করে সংসারে সফলতা এনেছেন কমলা। প্রথম দিকে দর্জির সামান্য কাজ পারলেও পরবর্তী সময়ে দক্ষতা বাড়াতে গ্রহণ করেন প্রশিক্ষণ। তারপর টাঙ্গাইলের সমাজ উন্নয়ন সংস্থা থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণের টাকা দিয়ে মেশিন কিনে শুরু করেন দর্জির কাজ। ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়তে থাকে। বাড়ে কাজের পরিধিও।
বর্তমানে কমলার মাসিক আয় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। এই কাজ করেই সহায়-সম্বলহীন কমলার হয়েছে জীবনধারণ করার মতো সম্বল। কমলা আক্তার বলেন, ‘আগে অনেক কিছুই বুঝতাম না। এহন অনেক কিছুই বুঝি। সুলতানা আপা আর সিরাজী ভাই ট্রেনিংয়ে নিয়া আমগোর চোখ খুইলা
দিছে। এহন বুঝি স্বামীর ওপর নির্ভর কইরা বাঁচাডা সম্মানের না। বরং আয় করতে পারলে স্বামী ও পরিবারের সবার কাছে সম্মানের সঙ্গে বাঁচা যায়। আশপাশের মাইনষেরাও সম্মান করে। সালিশ দরবারেও ডাকে।

টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার বড়বাজুপাড়ার মৃত রফিজ উদ্দিন ও দুধজান দম্পতির মেয়ে কমলা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে একই গ্রামের শাজাহান মিয়ার ছেলে মোঃ স্বপনের সঙ্গে বিয়ে হয় কমলার। কমলার স্বামী আনসার বাহিনীতে খুবই ছোট একটা পদে চাকরি করেন। বেতন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। স্বামীর অল্প আয় দিয়ে এক ছেলে নিয়ে কোনমতে দিনযাপন করছিলেন কমলা। স্বচ্ছলতার কথা কোনোদিন ভাবেননি। ভাবনায় ছিল স্বামীর আয়ে ডাল-ভাত যা জোটে, তা দিয়েই কাটিয়ে দেবেন জীবনটা।

টাঙ্গাইল সমাজ উন্নয়ন সংস্থার দলীয় সদস্য কমলা। কমলা জানান, দলীয় সদস্যদের জন্য আয়োজিত ‘নারী-পুরুষ সম্পর্ক : ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি’ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন তিনি। প্রশিক্ষণ তার মনের দুয়ারকে খুলে দেয়। মনের ভেতরে বাসনা জাগে পরিবারকে সচ্ছল করার, পরিবারে নিজের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করার। কারণ প্রশিক্ষণ তাকে শিখিয়েছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের গুরুত্ব। তিনি জেনেছেন স্বাবলম্বিতা নারীকে পরিবারে ও সমাজে মর্যাদার আসনে নিয়ে যায়। প্রশিক্ষণ নেয়ার আগে কমলা দর্জির কাজ শিখেছিলেন।

কাজ শিখে ঘরে বসে নিজেদের কাপড় তৈরি করতেন। কিন্তু এটাকে আয়ের উৎস হিসেবে কাজে লাগানোর চিন্তা কখনোই করেননি। কমলা সিদ্ধান্ত নেন অন্য কোনো ব্যবসায় না গিয়ে যেহেতু প্রশিক্ষণ আছে তাই দর্জির কাজ করবেন। ভালো কাজ করতে পারলে পাড়া থেকেই তার ক্রেতা তৈরি হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাঙ্গাইল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। ঋণের টাকা দিয়ে মেশিন কিনে শুরু করেন দর্জির কাজ। ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়তে থাকে। এ কাজ থেকে কমলার মাসিক আয় আসে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।

এদিকে কমলার স্বামী গ্রাউরি প্রকল্পের কয়েকটি উঠান বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন’ বিষয়ে উঠান বৈঠকে উপস্থিত থেকে তিনি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘সংসারের সচ্ছলতা বাড়াতে বাড়িতে বসে কমলা দর্জির কাজের পাশাপাশি অন্য কোনো কাজও করতে পারে। তাই দু’জনে মিলে পরামর্শ করে বাড়ির ওপর মনোহারী দোকান করার সিদ্ধান্ত নেন। দোকানের প্রথম মালপত্র কিনতে দু’জনে মিলে যান কালোহা বাজারে। সেখান থেকে মালপত্র কিনে স্বপন কমলাকে পাইকারি দোকানদারদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসেন। বাড়িতে নিজের থাকার ঘরের একপাশে তৈরি করেন মনোহারী দোকান।’

কমলা এখন বাজারে গিয়ে নিজেই মালপত্র কিনে নিয়ে আসেন। আশপাশে কোনো দোকান না থাকায় খুব ভালো বেচাকেনা হয় কমলার দোকানে। তার মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। বর্তমান পুঁজির পরিমাণ ৫০ হাজার টাকার ওপরে।

প্রসঙ্গত কমলা বড়বাজুপাড়া ঝটিকা মহিলা সমিতির সভাপতি এবং পাইকড়া ইউনিয়নের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ফোরামের সদস্য। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নির্ভীক কণ্ঠে বলেন নারী অধিকারের কথা। কমলার মতে প্রতিটি নারীর উচিত আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকা। অন্যের ওপর নির্ভর করে কখনও মর্যাদা নিয়ে বাঁচা যায় না।
#তথ্য-আপা

No comments:

Post a Comment