" ব্যবসা " গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানুন

ব্যবসায় নতুন হোন আর পুরাতন, অথবা ব্যবসা শুরু কর‌তে চা‌চ্ছেন বা যা‌চ্ছেন। তা‌দের জন্যই ব্যবসা‌য় সফলতার দিক‌নি‌র্দেশনা বা নিয়ম-কানুন, যার অত্যাবশ্যকীয়তা বা গুরুত্ব ব‌লে শেষ হবার নয়।
প‌ড়েই - ক‌রেই দেখুন না কি হয় !

প্রশ্ন : আমি ব্যবসা করতে চাই। কী ধরনের ব্যবসা করা উচিত?
উত্তর : যে ব্যবসার মধ্য দিয়ে আপনি একজন মানুষকে সেবা দিতে পারবেন, প্রতারণা নয়। একটা ভালো পণ্য একজনের হাতে তুলে দেয়াটাও একটা সেবা, একটা ইবাদত। একটা ভালো খাবার একজনের হাতে তুলে দেয়াটাও একটা সেবা। কিন্তু সফট ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস, মদ বা ড্রাগস তুলে দেয়াটা সেবা নয়। অতএব যেখানে আপনি সেবা করতে পারবেন সততার সাথে সেটাই আপনার ব্যবসা হতে পারে। প্রতিটি ব্যবসাতেই সেবা করার সুযোগ আছে, যদি আপনার সে মানসিকতা থাকে।
প্রশ্ন : আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করি। আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা চাকরির পর ব্যবসা করবো।
উত্তর : অধিকাংশ চাকরিজীবী এই ভুলটা করেন। এ কারণে তাদের পেনশনের টাকা তারা ভোগ করতে পারেন না। কারণ যখন পেনশনের টাকা বা গ্রাচুয়িটির টাকা পান-এই ১০, ১৫ বা ২০ লাখ টাকা তারা কোনো আংকেল, ভাতিজা বা ছেলের বন্ধুর সাথে ব্যবসায় খাটান এবং এই টাকাটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। যত রিটায়ার্ড অফিসার বিনিয়োগ করেছেন, এর ৯৯ ভাগই তাদের বিনিয়োগ ফেরত পান নি।
কিছু পুঁজি নিয়ে যেকোনো একটা কিছু শুরু করে দিলেই সেটা ব্যবসা হয় না। ব্যবসায় সফলতা পেতে হলে ব্যবসা বুঝতে হয়, অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। প্রতিটি ব্যবসার যে নিজস্ব সাফল্যের গোপন রহস্য আছে, সেটা জানতে হয়। ধরুন, আপনি একটি সফটওয়্যার ফার্ম খুললেন। আপনি যদি এ সম্পর্কে না জানেন, ইঞ্জিনিয়ার হয়তো তিন মিনিটের কাজকে বলবে-এটা অনেক কঠিন কাজ, জটিল কাজ, তিন মাস লাগবে। আপনি যেহেতু জানেন না এটা তিন মাস লাগবে না তিন মিনিট লাগবে, আপনার তাকে বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আপনার ব্যবসায় লস হবে।

সারাজীবন চাকরির পর ব্যবসা করাটা আপনার পক্ষে সহজ নয়। এই টাকা ব্যবসায় না খাটিয়ে ব্যাংকে রেখে দিলেই তো আপনার মাসের খরচের টাকা উঠে আসে। আর অবসরে না গিয়ে পুরো সময়টাই আপনি আত্মিক উন্নয়ন ও সৃষ্টির সেবায় ফাউন্ডেশনে কোয়ান্টিয়ার হিসেবে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। এতে আপনি একদিকে যেমন সুস্থ থাকবেন, অন্যদিকে আপনার পারলৌকিক মুক্তির পথও প্রশস্ত হবে।
প্রশ্ন : চার বছর বিদেশে ছিলাম। এখন বাংলাদেশে চলে এসেছি। কষ্টার্জিত অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করবো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ভয় হয় যদি লস হয়। এ ব্যাপারে আপনি কোনো উপদেশ দিলে উপকৃত হবো।
উত্তর : কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ না করে এই অর্থের সাথে কীভাবে শ্রম বিনিয়োগ করতে পারেন সে চিন্তা করুন। শুধু টাকা বিনিয়োগ করলে হয় না। এর সাথে শ্রম ও বুদ্ধি বিনিয়োগ করতে হবে।
আর ব্যবসা করার আগে ব্যবসা বুঝতে হবে। প্রত্যেকটা ব্যবসার রহস্য আছে। সেই রহস্যটি বুঝতে হবে। ব্যবসায় নামার আগে, বিনিয়োগ করার আগে তাই ব্যবসাটা বোঝার চেষ্টা করুন। অথবা সেই ব্যবসাই শুরু করুন যা আপনি বোঝেন, সেটা যত ছোটই হোক না কেন। তাহলে আপনি টাকাকে পুঁজিতে রূপান্তরিত করতে পারবেন।

প্রশ্ন : আমি যে চাকরিটা করছি তাতে বেতন ভালো কিন্তু কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমি এটা বদলে এমন কিছু করতে চাই যা ক্যারিয়ারকে অনেক দূর নেবে। ভাবছি স্বাধীন ব্যবসা করবো। কিন্তু পরিবারের সহযোগিতা পাওয়া যাবে কি না জানি না। এদিকে চাকরিতে মোটেও মনোযোগ দিতে পারছি না।
উত্তর : পরিবারের সহযোগিতার অপেক্ষায় যদি থাকেন তাহলে ব্যবসায় সফল হবার সম্ভাবনা কম। ব্যবসা করার জন্যে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। পৃথিবীতে যত বিত্তবান দেখবেন, তারা সবাই শুরু করেছেন শূন্য থেকে।
বিল গেটস কত টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন? অথচ আমরা জানি, সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনকুবের। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। পত্রিকার হকারি থেকে ২৫ ডলার জমিয়ে ১৪ বছর বয়সে তিনি একটা যন্ত্র কেনেন। এই হলো ব্যবসার শুরু। আজ তিনি দুই লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকার মালিক।

মুন্নু সিরামিকের হারুনুর রশীদ খান মুন্নু, ৭৫ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আকিজ মিয়া বিড়ি বানাতেন। পরে অন্য ব্যবসা ছাড়াই শুধু বিড়ি ফ্যাক্টরি থেকেই বছরে ছয় কোটি টাকা ট্যাক্স দিতেন আজ থেকে ১৫ বছর আগে। তারা তো কারো কাছে হাত পাতেন নি।

অর্থাৎ আপনাকে শুরু করতে হবে যা আছে তা দিয়ে। আপনি যদি মনে করেন পরিবার আমাকে সহায়তা করছে না, ঠিক আছে, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আমি গার্মেন্টস বিক্রি করবো। তাহলে আপনি বায়িং হাউস করতে পারবেন। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করতে পারবেন, সবকিছু করতে পারবেন।

প্রশ্ন : আমি অনার্স শেষ করে সম্প্রতি মাস্টার্সও পাশ করেছি। পেশাগত জীবনে আমার ইচ্ছা উদ্যোক্তা হওয়া। কিন্তু বার বার বিভিন্ন ভীতি মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। কোনো সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারছি না। অনেকে বলছে-আগে চাকরি করে পরে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিও। কিন্তু এটি আমার আবেগ ও ভীতির মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। কীভাবে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আমি উদ্যোক্তা হতে পারি? এক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ কেমন হতে পারে? উল্লেখ্য, আমি কোনো কাজ একটু করার পর পূর্ণ গতি থাকে না। এটা কীভাবে দূর করা সম্ভব?
উত্তর : আগে ঠিক করতে হবে আপনি কী করবেন এবং ব্যবসা আপনি বোঝেন কি না। ব্যবসা যদি ফুটপাত থেকে শুরু করতে পারেন, আপনি খুব ভালো উদ্যোক্তা হতে পারবেন। কারণ সংকোচ জড়তা সিদ্ধান্তহীনতা থাকলে কেউ ব্যবসা করতে পারে না, কেউ উদ্যোক্তা হতে পারে না। সিদ্ধান্ত নেয়ার নাম হচ্ছে উদ্যোগ। সবসময় মনে রাখবেন, পৃথিবী সাহসী মানুষের জন্যে এবং যে ব্যবসা করতে চান সেটা শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।
আমরা অধিকাংশই ভুল করি কোথায়? আমরা টাকাপয়সা যোগাড় করে ব্যবসা শুরু করি। আমরা সবসময় মনে করি যে, এই করবো, ওই করবো, রিভলভিং চেয়ার থাকবে সেখানে বসবো। তিনটা টেলিফোন থাকবে, পাঁচ জন সেক্রেটারি থাকবে। যার ফলে ব্যবসা হয় না, টাকাপয়সা নষ্ট হয়।

ব্যবসার জন্যে শুরুতেই টাকার কোনো প্রয়োজন নেই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ুন। আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। রাস্তা থেকে আপনি প্রাসাদে উঠবেন।

আমাদের দেশে উদ্যোক্তা কী রকম? একজন তার বন্ধুকে বলছে যে, চল, আমরা তিন বন্ধু মিলে ফ্যাক্টরি বানাবো। প্রস্তাবটা খুব মজার। বন্ধুর জায়গাটা ব্যাংকের কাছে বন্ধক দিয়ে লোন নেবে। সেই লোন থেকে প্রথমে তিন বন্ধু তিনটা লেক্সাস গাড়ি কিনবে। এই হচ্ছে ব্যবসার শুরু! এদের না কোনোদিন ফ্যাক্টরি হবে, না সে ঋণ কোনোদিন শোধ হবে। আসলে যে ব্যবসা শূন্য থেকে শুরু হয় তা-ই এগিয়ে যায় পূর্ণতায়।

সাহস এবং বিশ্বাস ছাড়া উদ্যোগ নেয়া যায় না। মরলে এর সাথে মরবো, বাঁচলে এর সাথে বাঁচবো-এই চিন্তা আপনাকে অমর করবে। যে জিনিসের জন্যে জীবন দিতে প্রস্ত্তত থাকবেন সেই জিনিস আপনাকে অমর করবে।

প্রশ্ন : আমি বিগত আট বছর যাবত ব্যবসার সাথে জড়িত। ব্যবসাগত লেনদেনে আমি নিজে সবসময় পরিশোধ করি সঠিক সময়ে। কিন্তু আমার পাওনা খুব কমই আমি সময়মতো পাই। যার জন্যে আমাকে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। এ ব্যাপারে আমার করণীয় কী?
উত্তর : ব্যাপারটা খুব সহজ। আমি আগে কোনো কাজ করালে মজুরি যা হবে সব দিয়ে দিতাম। দেখতাম, কাজটা পাঁচ দিনেও হয় না। পরে বুঝলাম, সে যেহেতু মজুরি পেয়েই গেছে অতএব কাজটা তার কাছে গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। একজন পরামর্শ দিলেন যে, এ সমস্ত ক্ষেত্রে কাজ হওয়ার আগে দেবেন ১০%, হওয়ার পরে দেবেন ৯০%। দেখবেন, আপনার কাজটা সময়মতো হয়ে যাবে। দেখলাম যে, তা-ই হচ্ছে।
আপনাকেও এরকম কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ জিনিসপত্র দিলেও একটু প্যাঁচ রেখে দিতে হবে যাতে সে টাকাটা দিতে বাধ্য হয়। আবার আটকে রাখছেন এটাও বোঝানো যাবে না।

প্রশ্ন : স্বাধীন পেশা বা ব্যবসা করার পূর্বে চাকরি করা প্রয়োজন, এতে ব্যবসা শেখা যায়-এ সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : এটা ঠিক। তবে সেক্ষেত্রে আপনি যে ব্যবসায় যেতে চান সে ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট জায়গায় আপনাকে চাকরি করতে হবে। আপনি যদি ফটোগ্রাফির ব্যবসায় যেতে চান, তাহলে ফটোগ্রাফির দোকানে চাকরি নিতে হবে। কাজটা আপনাকে শিখতে হবে, কাজের রহস্যগুলো বুঝতে হবে, বুঝে তারপর ব্যবসা করতে হবে।
অর্থাৎ যেকোনো ব্যবসায় নামার আগে সে ব্যবসা বুঝতে হবে এবং যে চাকরিতে গেলে এই ব্যবসা সবচেয়ে সুন্দরভাবে বোঝা যাবে, বেতন যা-ই হোক তাতেই যেতে হবে।

আর ব্যবসায় সফল হওয়ার কৌশল খুব সহজ। সনাতন ধর্ম অনুসারে ব্যবসার দেবতা গণেশ। গণেশের দেহটা মানুষের, আর মাথাটা হাতির। অর্থাৎ দেহটা মানুষের আর মাথাটা পশুর। অতএব ব্যবসা করতে হলে দেহটুকুই মানুষের থাকবে-যদি খুব বড়, অনেক বড় ব্যবসা করতে চান। সাধারণভাবে আপনার মধ্যে পশুর যে ঝঁৎারাধষ ওহংঃরহপঃ-এটা তীব্র থাকতে হবে যে, ব্যবসা ছাড়া আপনি আর কিছু বোঝেন না। আপনি ব্যবসাতে তখন খুব ভালো করবেন।

ব্যবসায়ে সফল হতে হলে যে সূত্রে আপনাকে এগুতে হবে তা হলো- পুঁজি + উদ্যম + শ্রম + ব্যবস্থাপনা + বিপণন।
( বে )

#QuantumMethod

^
^
dearbangla24 = ব্যবসার মূল শর্ত, ব্যবসা, how to start new business, সফল ব্যবসার নিয়ম, ব্যবসা শুরুর কথা, business, ব্যবসার সফলতা, ব্যবসার শর্ত, সফল ব্যবসার কথা, good business, উ‌দ্যোক্তা হ‌তে চাই, ব্যবসা সফল কর‌তে, ব্যবসার নিয়ম, নতুন ব্যবসা, new business, উ‌দ্যোক্তা

No comments:

Post a Comment