ক্ষুদ্র উ‌দ্যোক্তা হা‌ফিজুর এখন রানার গ্রু‌পের মা‌লিক

হাফিজুর রহমান, চেয়ারম্যান, রানার গ্রুপ।
তি‌নি স্বপ্ন দেখতেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নও করলেন। চাকুরী ছেড়ে নেমে পড়লেন ব্যবসায়। হয়ে উঠলেন একজন সফল উদ্যোক্তা। গড়ে তুললেন রানার গ্রুপ। এখন সেই রানার গ্রুপ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন আন্তজার্তিক পর্যায়ে।
সেই ব্যক্তির কথা বলছি যার মেধা, বুদ্ধি, পরিশ্রমে গড়ে উঠা রানার গ্রুপ আজ বাংলাদেশের অটোমোবাইলস্ জগতের  সুনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি হাফিজুর রহমান, রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান।
হাফিজুর রহমান খানের একান্ত সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে রানার গ্রুপের সেই সফলতার কথা। বাবা চাইতেন না ছেলে ব্যবসা করুন। বাবা চাইতেন ছেলেও যেন তার মতো চাকুরি করেন। কারণ ব্যবসা করতে পুঁজি লাগে। সেই পুঁজিইবা দিবেন কিভাবে।  বারো জন ছেলে-মেয়ের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো বাবা কোরেশ আলী খানকে।  তাই পরিবারের কিছুটা দায়িত্ব নিজের কাধে নিতে এবং বাবা কোথায় প্রথম কর্মজীবনে হাফিজুর রহমান লেখাপড়া শেষে চাকুরি করলেও চাকুরিতে মন বসাতে পারেননি তিনি।
ছোট বেলে থেকেই হাফিজুর রহমান খান ছিলেন স্বপ্নবাজ। স্বপ্ন দেখতে দেশের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হবেন।  তাই চাকুরি ছেড়ে নেমে পড়ে ব্যবসায়। পুঁজি না থাকলেও ছিল মেধাশক্তি ও পরিশ্রমের মানসিকতা। তাই ব্যবসার কারণে ছুঠেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। আজ তার সেই পরিশ্রমের ফসল রানার মোটরসাইকেল ছুটে চলেছে শহর থেকে গ্রামের মেঠোপথে। শুধু মোটরসাইকেলই নয় চলছে রানার গ্রুপের যানবাহনগুলো। দেশের  অটোমোবাইল বাণিজ্যে সুনাম কুড়িয়েছে রানার গ্রুপ। এছাড়াও রিয়েল এস্টেট, কৃষি ও তথ্য খাতে রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। রানার অটোমোবাইলস, রানার এগ্রো কোম্পানি, রানার অটো ব্রিকস ফিল্ড, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রানার সিসটেমস লিমিটেড, রানার  প্রোপার্টিজ ও রানার মোটরস লিমিটেড।

রানার প্রুপ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজে সুপরিচিত একটি নামই শুধু নয় বরং সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীকও বটে। তাই তিনি তরুণ উদ্যোক্তাদের মডেল।

ফিরে যাই পিছনের দিকে। সেই ১৯৫৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। বাবা মরহুম কোরেশ আলী খান ও মাতা মরহুমা পরিজান নেসার কুলে জন্ম নেয় ফুটফুটে শিশুটিই ছিল রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রজমান। রাজশাহীতে জন্ম নিলেও পৈত্রিক নিবাস ছিলো নওগাঁ। বাবা সরকারি চাকুরিজীবী হওয়ায় শৈশব পার করেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। নওগাঁ থেকে ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ভর্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহীতে ভর্তি হওয়ার পরই সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে শুরু করেন কর্মজীবন। পুঁজি না থাকায় ব্যবসা করা আর হয়ে না তার।  তবুও তিনি হাল ছেড়ে দেননি তিনি। পুঁজি না থাকলে কি হবে ছিলো তার বুদ্ধি ও অদম্য সাহস।
প্রথম কর্মজীবনে হাফিজুর রহমান খান একটি পাটকলে চাকরি করেন। এই চাকরি ছেড়ে চাকরি নেন শ্যালো মেশিন ও পাম্প বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে। এই চাকরি মাধ্যমে শিখতে থাকেন ব্যবসায় নানা বিষয়।
১৯৮৩ সালে শেষের দিকে চাকুরি ছেড়ে নেমে পড়লেন ব্যবসায়। সেই সময় তার মূলধন মাত্র ছিল ২০ হাজার টাকা। পুঁজি যথেষ্ট না থাকলেও তিনি  মেধাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেন নিজের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অংশদারিত্বের ভিত্তিতে তিনজন মিলে তৃতীয়াংশ শেয়ারে ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসায় তার ছিলো মেধাশক্তি আর বিনিয়োগকারী ছিল অর্থ। অবশেষে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগকারীই  থেকে গেলেন আর তিনি হয়ে সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। ২০০০ সালে গড়ে তুলেন রানার অটোমোবাইলস। আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করেন দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত মোটরসাইকেল ব্যবসায়ীদের। তার ব্যবসার পরিকল্পনা ও উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখে এসব ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেন তার ব্যবসায়। এখন সময় তার পুঁজি হয় ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এই পুঁজি নিয়ে পুরোদমে নেমে পড়েন ব্যবসায়। ব্যবসার শুরুতে চায়না থেকে মোটরসাইকেল আমদানি করে বিক্রি করা করতেন। এর পাশাপাশি ট্রাক, বাস দেশের বাইরে থেকে এনে বিক্রয় শুরু করে দেন। যখন  রানারপুরোপুরি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠলো এই ব্যবসা । তখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন দেশের আবাসন খ্যাতকে নিয়ে। গড়ে তুলনে রিয়েল এস্টেট ও ব্রিকস কোম্পানি। এরপর আরো গড়ে তুললেন কিছু প্রতিষ্ঠান। এই ভাবে তার মেধা, বুদ্ধি, পরিশ্রম  এবং অনেক বাধা উপক্ষো তিলতিল করে গড়ে তুললেন ছোট ব্যবসা চালু করার সময় কি করবো এবং কি করবো না?
কি ভাবে শুরু করবো। এই প্রশ্নটি উদ্যোক্তাদের মাথায় প্রথমে চলে আসে যখন তারা চিন্তা করতে শুরু করে, তারা কি করবে। এটা আসলেই একটু কঠিন তাদের জন্য কি করা উচিত আর উচিত নয়।

যে পণ্য নিয়ে কাজ করবেন:

যে পন্য নিয়ে কাজ করবেন তার সুস্পষ্ট একটি ধারনা থাকতে হবে এবং সেই পন্যকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে মানে হচ্ছে আপনার ক্রেতা কারা, আপনার পন্য কি কি হবে এবং আপনার প্রতিযোগীদের কথাও মাথায় রাখতে হবে।

নিজেকেই একটু প্রশ্ন করুন:

এই পন্যটিতে কি কোন সমস্যা সমাধানের পথ খুজে পাওয়া যাবে
এই পন্যটিতে নতুন কি আছে
কারা এই পন্যটি কিনতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবে
এটা সত্য যে আপনি আপনার প্রতিযোগীর থেকে ভালো করতে না পারলেও নতুন কিছু উপাদান যোগ করতে পারবেন যেটা কিনা আপনার ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করতে পারবেন।

কি ভাবে সামনে পৌছবেন ঠিক করুন:

মনের ভেতর আপনার বিজনেস প্লান এর নকশা তৈরি করে রাখেতে হবে, সেটা দীর্ঘ এবং স্বল্প মেয়াদী হতে পারে।এই গোছানো প্লানটিই আপনাকে সামনে আগানোর পথ দেখাবে, কথন আপনার কি করা দরকার।আপনি প্রথম ৬ মাসে কি করতে চান প্রথম ৩ বছর আপনার প্রতিষ্ঠান কোথায় নিতে চান।যদি সম্বব হয় বিস্তারিত ভাবে আপনার সকল পরিকল্পনা লিখে রাথা ভালো।এটা শুধু পরিকল্পনাকেই সহায়তা করবে না আপনার চলার পথকেও সজহ করবে।

আপনার ব্যবসায়িক পরিবেশকে জানুন এবং আপনাকে পরিচিতো করে তুলুন:

নিজের প্রতিষ্ঠানকে পরিচিতো করার জন্য আপনার ব্যবসায়িক পরিবেশের সাথে খাপ খায়িয়ে চলুন, পরিবেশকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের সাথে সর্ম্পক তৈরি করতে হবে, এটা খুব গুরুত্বপূন্য কারন এটা এমন একটি নেটওয়ার্ক আপনাকে অনেক দূর পযর্ন্ত নিয়ে যেতে পারে। ব্যবসার

সময় ব্যবস্থাপনা:

সময় = টাকা যদি ধরা হয়, সে ক্ষেত্রে সময় এর দিকে একটু নজর দিতে হবে। আপনি কোন কাজে কতটুকু সময় ব্যয় করছেন এটাও আপনার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূণ্য বিষয়, সঠিক সময় সঠিক কাজ না করলে আপনার কাজটিই করা হবে না।

শেষ কথা, ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে গেলে ব্যাংক থেকে টাকা না নেয়াই ভালো।আপনার য দেখছেন তটুকু সামর্থ্ আছে ততটুকু দিয়েই শুরু করতে দিতে পারে। গ্রুপ।
এখন সেই রানার গ্রুপ নিয়ে স্বপ্ন আন্তজার্তিক পর্যায়ে। সাক্ষাতে তাই তিনি জানালেন, অটোমোবাইলস শিল্পখাতে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। বর্হিবিশ্বে  এইসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।  তাই এসব পণ্য রফতানির জন্য চাই একটি সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নীতিমালা । তাহলে অটোমোবাইলস খাতের পণ্যগুলো বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি আরো দৃঢ় করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, এ শিল্প খাতের পণ্য বিশ্ববাজার দখলে সক্ষম হবে এবং দেশের চেয়ে বিশ্ববাজারে  রফতানির সম্ভাবনা  দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।  তিনি তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য করেন বলেন, তরুণ্য উদ্যোক্তারা এ শিল্পে খাত উন্নয়নে এগিয়ে আসলে এই শিল্প খাত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে সুনাম বয়ে আনবে।

উল্লেখ্য,  রানার গ্রুপ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নিজস্ব মানবসম্পদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে  দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েছে। রানার গ্রুপের সকল কর্মী ও তাদের পরিবারের vvcc সদস্যরা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত কল্পে একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে

#doinikbangladesh

No comments:

Post a Comment