নিজেকে প্রস্তুত করুনঃ সফল হউন: পর্ব-৫

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশে বিস্তার লাভ করলেও আমাদের দেশে ততোটা ব্যাপকতা ও জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। আর এ কারণেই আমাদের অনেকের কাছে বিষয়টি নতুন। কারো মাধ্যমে যখনই আমরা নতুন কোন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানীতে যাব; স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি বিষয় বিস্ময়কর মনে হবে।
এখন প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানী, কমিশন প্লান ও পণ্য সামগ্রী সম্পর্কিত সুষ্ঠু ধারনা গ্রহন
করবেন। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে কাজের কৌশল ও আয় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য নিন্মোক্ত পথ অনুসরন করতে পারেন-

১। প্রশ্নমালা তৈরী করুনঃ
কোম্পানীর সেমিনার দেখার পর আপনার মনে যেসব প্রশ্ন জন্ম নিয়েছিল, সেসব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আপনার আপ-লাইনে ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে। আপনার অতিথি অনুরূপ আপনার কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারে। ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ আরম্ভ করার পর সম্ভাব্য প্রশ্নগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখুন; যখন যে প্রশ্নটি আপনার মনে উদয় হবে তৎক্ষণাৎ তা লিখে রাখুন এবং সেসব প্রশ্নের উত্তর আপনার আপ-লাইন বা লিডারের কাছ থেকে জেনে নিন। আপনার মনে যে সব প্রশ্ন উদয় হতে পারে তার একটি নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
ক) আমি কিভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারি? অথবা এ ব্যবসাটি আদৌ আমার দ্বারা সম্ভব হবে কিনা?
খ) আমার হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই ব্যবসাটিতে ব্যয় করব অন্য কোন উপায় আছে কি ?
গ) এখানকার পণ্যগুলো আমার প্রয়োজন নেই তাহলে ব্যবসাটি কিভাবে করব?
ঘ) এখান থেকে কতদিন পর্যন্ত আয় করতে পারব?
ঙ) আমার ডাউন লাইনের ডিস্ট্রিবিউটর সংগ্রহ করব কিভাবে?
চ) আমাদের দেশে এ পদ্ধতির সম্ভাবনা কতটুকু?

২। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করুনঃ
আপনি যখন একটি ব্যবসা শুরু করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। তখন আপনাকে পরিকল্পনা করতে হয় কিছু বিষয়ের জন্য। যেমন: ব্যবসার ক্ষেত্র, অবস্থান, সাজ সরঞ্জাম, কর্মচারী ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক দিকগুলো। পরিকল্পনা মাফিক সব কিছু সংগ্রহ করতে পারলেই আপনি ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। অনুরূপভাবে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা আরম্ভ করার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যদি সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত যেসব দ্রব্যাদি আমাদের কাছে রাখা প্রয়োজন সেগুলোর তালিকাটি হবে এমন-
ক) পণ্য সম্পর্কিত তালিকা ও কমিশন প্লান,
খ) ভিজিটিং কার্ড ও মোবাইল,
গ) কাগজ কলম, ডায়েরী ও ব্যাগ,
ঘ) প্রশিক্ষন সময়সুচী ও সেমিনার সময়সুচী,
ঙ) সম্ভাব্য অতিথিদের তালিকা,
চ) নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর উপর লিখা কোন বই (যা প্রাথমিক ধারনা দিতে সক্ষম) ইত্যাদি।

৩। প্রশিক্ষণ গ্রহন করুনঃ
ব্যবসা কিংবা চাকুরীতে প্রয়োজন অভিজ্ঞতা যার অভিজ্ঞতা নেই তার প্রয়োজন প্রশিক্ষন। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ প্রশিক্ষণ সফলতার চাবিকাঠি। প্রশিক্ষণ গ্রহনকারী একজন ডিস্ট্রিবিউটর প্রশিক্ষনহীন ডিস্ট্রিবিউটরের চাইতে অনেক দ্রুত সফলতা লাভ করতে পারে। কারণ প্রশিক্ষন গ্রহন করার মাধ্যমে প্রেষনা লাভ করতে পারে। নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে, সফলতার কৌশল আয়ত্ব করে, যোগাযোগের কৌশল লাভ করে, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ সফলতা লাভ করা যায়। প্রশিক্ষণ গ্রহনের মাধ্যমে সফলতা যাচাই করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণার্থী ব্যর্থতার কারণ অনুধাবন করতে পারে।

৪। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করুনঃ
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ সফলতার জন্য এ পদ্ধতি সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ আবশ্যক। পণ্য সামগ্রী, কমিশন পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা লাভের মাধ্যমে একজন ডিস্ট্রিবিউটর এ পদ্ধতিতে অন্যদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন। মাল্টিলেভেল সম্পর্কিত বিভিন্ন বই পুস্তক সাময়িকী পড়ার মাধ্যমে সঠিক প্রতিষ্ঠান ও সঠিক পদ্ধতি বাছাই করা যায়। এর ফলে ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যে কেহ আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন।

৫। নেতৃত্ব দানের জন্য প্রস্তুতি নিনঃ
ব্যবসারম্ভের পর যখনই আপনি দু’একটি লেভেল বা ধাপ অতিক্রম করবেন অর্থাৎ আপনার ডাউন লাইনে ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে আপনাকে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সফলভাবে স্বল্পসংখ্যক ডিস্ট্রিবিউটরকে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে আপনি লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। নেতৃত্ব প্রদানের লক্ষ্যে সফল নেতাদের অনুসরন করুন ও নেতৃত্বের গুণাবলী অধ্যয়ন করুন। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ নেতৃত্ব প্রদানের জন্য আত্মবিশ্বাস, আত্মউন্নয়ন ও বিবেচনা বোধ শক্তি বৃদ্ধি অন্যতম উপায়।

৬। সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিনঃ
সময়ের সদ্ব্যবহার ব্যতীত সাফল্য লাভ দুঃস্বপ্ন মাত্র। কোথায়? কতখানি? কেন? সময় প্রদান করবেন তা বিশ্লেষন করুন এবং সময়ের ফলাফল যাচাই করুন। আপনার ডাউন-লাইন ডিস্ট্রিবিউটরগণ আপনাকে সময়মত যাতে কাছে পায় এবং নিজেরাও যাতে সময়ের প্রতি যত্নশীল হয়; তার প্রতি আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। অতীতে সময়কে যেভাবে কাজে লাগিয়েছেন বর্তমানে এর চেয়ে ভালভাবে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে নিজেকে তৈরী করে নিন। ডাউন-লাইন পরিবেশকদের মধ্যে যারা পার্ট টাইম ব্যবসা হিসেবে এ পদ্ধতি গ্রহন করেছে তাদের সময় প্রদান যাতে রুটিন মাফিক ও ফলপ্রসু হয় তা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে।

৭। পরিশ্রম সফলতার মূলমন্ত্রঃ
শোনা যায় নেটওয়ার্ক মার্কেটিং মানেই টাকা। যারা ব্যবসারম্ভ করেছেন তারাই গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন। এমনটি মনে করার কোন কারন নেই। শুধু মাত্র পিরামিড স্ক্রীমে তা সম্ভব কিংবা মানিগেমে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিতে এর চেয়ে অনেক বেশি সফল হওয়া যায়। তবে তা বৈধ উপায়ে। যে যত পরিশ্রম করেন, মেধা ও মনোনিবেশ করেন সে তত সাফল্য লাভ করেন। আপনার ডাউন লাইন ডিস্ট্রিবিউটরদের কখনও প্ররোচিত করবেন না- মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে বরং পরিশ্রম করে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিতে স্বর্ণ শিখরে পৌঁছার সুনির্দিষ্ট উদাহরণ দিন।

৮। শক্তিশালী টীম গঠনে ব্রতী হউনঃ
সুউচ্চ অট্টালিকা তৈরীর জন্য যেমন মজবুত ভিত্তি প্রয়োজন তেমনি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ সাফল্য অর্জনের জন্য শক্তিশালী টীম বা দল প্রয়োজন। শক্তিশালী দল গঠনের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহনের পাশাপাশি দলীয় পরিকল্পনা গ্রহন, লক্ষ্য নির্ধারন ও বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল আলোচনা, ও তথ্য আদান প্রদান ফলপ্রসু। বৃহদাকৃতির দলকে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিটি গ্রুপ বা দলের মনোভাব হতে হবে সহযোগিতা মূলক। এর ফলে প্রত্যেকের সফলতা সম্ভব। 

পরিশেষে বলা যায়, সব কিছুর মূলে সাফল্যের মূল স্তম্ভ স্বদিচ্ছা। স্বদিচ্ছা থাকলে সু-উপায় ও সু-কৌশল উদ্ভাবিত হয়। যার দ্বারা সফলতা অর্জন সহজতর হয়।
( চলবে )

#নেটওয়ার্ক #মা‌র্কে‌টিং, #প্রস্তু‌তি

No comments:

Post a Comment