বা‌হি‌রে খেতে গেলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন

বা‌হি‌রের জীবন-যাপ‌নের ফলশ্রু‌তি‌তে আমাদের সবাইকে কমবেশি হো‌টেল বা রেস্টুরেন্টে খেতে হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বি‌ভিন্ন কার‌ণে হো‌টেল বা রেস্টুরেন্টের খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এর ফ‌লে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতা ও খাবার নিয়ে স্বাস্থ্য জ্ঞান রাখা জরুরী। আমরা বাহিরে যা-ই খাই না কেন, সে খাবার যেন স্বাস্থ্যকর হয়, এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।

বাহিরের খাবার থেকে যেসব স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারেঃ
১. বাহিরের খাবারে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকে। এটি শরীরের ওজন বাড়ায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
২. বাহিরের খাবারের সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে। এটি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. বাহিরের খাবারে কৃত্রিম রং, চিনি, প্রিজারভেটিভ ব্যবহারে ক্যানসারের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে।
৪. বাহিরের খাবারে প্রচুর লবণ ব্যবহার করা হয়। এটি কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. বাহিরের খাবারে খাদ্যের গুণগত মান কম থাকে। এটি থেকে খাদ্যবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে।

বাহিরের খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই লক্ষণীয় যে বিষয়গুলোঃ
১. আগে খাদ্যের পুষ্টিগুণ চিন্তা করুন। পরে খাদ্যের অর্ডার করুন।
২. স্বাস্থ্যকর, কম পরিমাণে ও কম চর্বিযুক্ত খাবার অর্ডার করুন।
৩. খাবারের সঙ্গে সালাদ অর্ডার করুন, সালাদ খেলে ক্ষুধা মিটবে, কম খাবার খেতে পারবেন। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৪. প্রধান খাবারের সঙ্গে প্রচুর শাকসবজি খান। এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
৫. ভাজা-পোড়া খাবার না খেয়ে সেদ্ধ, বাষ্প, গ্রিল করা খাবার অর্ডার করুন।
৬. চিনি ও রংযুক্ত কোমল পানীয় না খেয়ে ফলের ডেজার্ট খান। এতে ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি দূর হবে।
৭. রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে এটা মনে করবেন না যে প্লেটের সব খাবার শেষ করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবার বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করুন।
৮. খাদ্যের গুণগত মান যাচাই করে খাবার অর্ডার করুন।
৯. রেস্টুরেন্টে মাছ খান। এতে হার্ট ভালো থাকবে।
১০. চামড়া ছাড়া মুরগি খান। কারণ, মুরগির চামড়ার চর্বি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
১১. কম চর্বিযুক্ত দুধ দিয়ে চা, কফি খান।
১২. আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত লবণ মিশ্রিত খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে রক্তনালির স্বাভাবিক কার্য নষ্ট করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কম লবণযুক্ত খাবার অর্ডার করুন।
১৩. হোটেলের খাবারের রান্না পদ্ধতি, খাদ্য সংরক্ষণ, গুণগত মান আমরা জানি না। তাই হোটেলের স্টাফদের পোশাক, হাত, খাবারের প্লেট, গ্লাস, চামচ পরিষ্কার কি না, খেয়াল করুন।
১৪. রান্না করা খাবার ঢাকা আছে কি না, খেয়াল করুন।
১৫. খাবার খেতে গিয়ে স্বাদহীন, বাজে গন্ধ, পচা মনে হলে খাবার খাবেন না।

পরিশেষে বলতে চাই, খাদ্যের পুষ্টিগুণ, রান্না প্রণালি ও হো‌টেল-রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিবেচনায় এনে বাহিরের খাবার খান।

ডা. শাকিল মাহমুদ | সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment